তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটি ডাকা হরতালের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশি নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। গতকাল বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানার সামনে কয়েকজন পুলিশ মিলে ওই সাংবাদিকদের নির্মম নির্যাতন করেন। পুলিশের প থেকে এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের সামনেই কতিপয় পুলিশ সদস্য সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নির্যাতনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা। প্রত্যদর্শীরা জানান, সকালে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটির সুন্দরবন বাঁচানোর হরতালে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গরম পানি ছুড়ে মারে। এরপর দফায় দফায় তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশি অ্যাকশনের ছবি সংগ্রহ করতে গেলে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন আব্দুল আলিমের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ ঘটনায় বাধা দিতে গেলে রিপোর্টার ইশান দিদারকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। : এটিএন নিউজের কর্মীরা জানিয়েছেন, শাহবাগ মোড়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটির কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে একজনকে আটক করে শাহবাগ থানা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাংবাদিকেরা সংবাদের জন্য ছবি ও ভিডিও নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ অতর্কিত ওই হামলা চালায়। এটিএন নিউজের কর্মীরা আরও জানান, পুলিশ প্রথমে ক্যামেরাপারসন আবদুল আলিমের ওপরে হামলা চালায়। এ সময় প্রতিবেদক কাজী এহসান তাকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দুজনকেই মাটিতে ফেলে লাথি মারে ও লাঠি দিয়ে পেটায়। ভিডিও ফুটেজ ও আলোকচিত্র দেখে সাংবাদিকেরা হামলার সঙ্গে জড়িত ১৫ জন পুলিশকে চিহ্নিত করেছেন। এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক সারওয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের হামলায় প্রতিবেদক দিদার ডান পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। ক্যামেরাপারসন আবদুল আলিমের চোখের ওপরের অংশ কেটে গেছে। তার সঙ্গে থাকা ভিডিও ক্যামেরা ভেঙে গেছে। দুজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় এটিএন নিউজের উপ-ব্যবস্থাপক মোশররফ আলম সিদ্দিকী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করতে গেছেন। : পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, এ ঘটনায় শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এডিসি নাবিদ কামাল শৈবালকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। : শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদ। ছবিতে তাকে মারধর করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘চিহ্নিত এএসআইকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’ ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত কিনা তা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটা হয়েছে। তবে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’ : এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন তার ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘পুলিশ হরতাল সমর্থকদের পেটাচ্ছিল। তার ছবি তুলছিলেন এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন আব্দুল আলিম। এ অপরাধে পুলিশ শাহবাগ থানার ভেতরে নিয়ে তাকে পেটাতে থাকে। বাধা দিতে গেলে রিপোর্টার ইশান দিদারকেও পিটিয়েছে পুলিশ। ২০/৩০ জন পুলিশ মিলে এই দুই সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়েছে। এখন তাদের ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। আলিমের আঘাত গুরুতর, ইশানের আঘাতও কম নয়। আমাদের ক্যামেরাম্যান বা রিপোর্টার যদি বেআইনি কিছু করে থাকে, পুলিশ তাদের আটক করতে পারতো। এমনও নয় রাস্তায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পড়ে তারা মার খেয়েছে। ঠান্ডা মাথায় থানার ভেতরে নিয়ে ২০/৩০ জন মিলে ২ জন নিরস্ত্র সাংবাদিককে পিটিয়েছে। কেন? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্যই চাই। শুধু লোক দেখানো কোজ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সাংবাদিক নেতা ও সহকর্মীদের অনুরোধ জানাচ্ছি শাহবাগ থানায় গিয়ে এই প্রশ্নের জবাব চান। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করুন।’ : উল্লেখ্য, সুন্দরবনের পাশে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রা জাতীয় কমিটি। গত ২৬ নভেম্বর শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ডাকা হয়েছিল। তবে সুন্দরবন ইস্যুতে জাতীয় কমিটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা সরকারিজোটের শরিক বেসরকারি বিমান ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি এই হরতালে নেই। এই কর্মসূচিতে ইতিমধ্যে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। এর বাইরে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, ছাত্রদলসহ কয়েকটি সংগঠন বিবৃতি দিয়ে সমর্থন ব্যক্ত করেছে।