ভারতের বড় নোট বাতিলের প্রভাব বেনাপোলের আমদানি-রপ্তানিতে

0
582
Print Friendly, PDF & Email

পাঁচশ ও এক হাজার রুপি মূল‌্যমানের পুরনো নোট বাতিলের ভারত সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্ত বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে; তা কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে।

ওই দেশের ব্যবসায়ীরা আর্থিক লোকসানের ভয়ে নতুন ঋণপত্র পাঠাতে নিষেধ করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি ও টিটির সংখ্যা কমে গেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ৮ নভেম্বর আকস্মিক এক টেলিভিশন ভাষণে রুপির বড় দুটি নোট বাতিল করে নতুন চালুর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জাল নোট, কালো টাকা ও দুর্নীতি ঠেকাতে তার এই উদ‌্যোগ।

ঢাকার হাজারীবাগের আমদানিকারক ‘রবিন এন্টারপ্রাইজের’ মালিক রবীন্দ্রনাথ রবিন বলেন, এখন ঋণপত্র খুললে লাভতো দূরের কথা, অর্ধেক পুঁজিও থাকবে না।

“তাছাড়া ভারতীয় রপ্তানিকারকরাও রুপির বাজার স্বাভাবিক হওয়ার পর এলসি খুলতে বলেছেন। তাই আপাতত আমদানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।”

দ্রুত এ অবস্থার অবসান না হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানান তিনি।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রায় ট্রেডার্সের মালিক প্রদীপ কুমার রায় জানান, ৫০০ ও এক হাজার রুপির নোট বাতিলের ফলে ব্যাংকগুলোতে নোটের সরবারহ কম।

“পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কারেন্ট অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ব্যবসায়ীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রুপির বেশি ওঠাতে পারছেন না। আর সেভিংস অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা ২৪ হাজার টাকা তুলতে পারছেন।”
এ পরিমাণ রুপি দিতেও ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে বলে জানান তিনি।

ভারতীয় এ ব্যবসায়ী বলেন, কেউ হয়তো ২০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করতে চান। কিন্তু তিনি মাত্র ৫০ হাজার টাকা তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। যা দিয়ে প্রয়োজন মিটছে না।

তাই আপাতত অনেকের মতো তিনিও বাণিজ্য বন্ধ রেখেছেন বলে জানান।

রুপির বড় নোট বাতিলে টাকার মান আগের চেয়ে কমে গেছে এমন ধারণায় লোকসানের ভয়ে ব্যবসায়ীরা আপাতত এলসি খুলছেন না বলে জানান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বেনাপোল এলসি শাখার প্রধান কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের ১ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত বেনাপোল শাখায় ১৩ জন আমদানিকারক এলসি খুলেছেন। আর রুপি বাতিলের পর ৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১০টি এলসি খোলা হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ভারত থেকে পণ্য আমাদানিতে প্রথমে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের রফতানিকারকের নামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পণ্যের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ ইউএস ডলার দিয়ে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হয়।

“ওপারের রপ্তানিকারকরা নিজের অর্থে ওই পণ্য কিনে বাংলাদেশে পাঠান। বন্দর থেকে পণ্য খালাসের সময় আমদানিকারক ব্যাংক থেকে এনওসি দিলে রপ্তানিকারক ব্যাংক থেকে এলসির টাকা তুলতে পারেন।

“কিন্তু এখন ভারতীয় ব্যাংকে পর্যাপ্ত নতুন নোটের সরবারহ না থাকায় তারা এলসির পাওনা টাকা ওঠাতে পারছেন না। ফলে লোকসানের ভয়ে ঋণপত্র নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না রপ্তানিকারকরা।”

বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, নোট বাতিলের আগে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ ট্রাক পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে ঢুকতো। কিন্তু ওই সংখ্যা এখন কমে অর্ধেকে নেমেছে।

রোববার মাত্র ১৭৪টি ট্রাক এবং শনিবার ২৭১টি ট্রাক বেনাপোলে ঢোকে বলে জানান তিনি।।

মাছ বা পানের মতো পচনশীল পণ্য নগদ টাকায় লেনদেন হওয়ায় কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের উপর এর প্রভাব বেশি পড়ছে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন