সুষ্ঠু, অবাধ অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই এমন একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে কাজ করতে পারে। সেই নির্বাচন কমিশনই জাতিকে উপহার দিতে পারে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার। গত শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় একটি হোটেলে আহূত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑবিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থাপিত ‘নির্বাচন কমিশন গঠন এবং শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রস্তাবাবলী সম্পর্কে মন্তব্য করতে এসব কথা বলেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তাদের মতে উপস্থাপিত এই প্রস্তাবাবলী খুবই যুগোপযোগী হয়েছে। এ বিষয়ে এখন দরকার জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে আলোচনা শুরু করার, এতে সকল দলের এগিয়ে আসা উচিত। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি গতকাল শনিবার দৈনিক দিনকালকে বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং শক্তিশালীকরণ সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবাবলী দিয়েছেন তা সঠিক। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে তার প্রস্তাবটি সময়োপযোগীও বটে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন গত শুক্রবার রাতে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবাবলীটি একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের জন্য খুবই পজিটিভ ও যুক্তিযুক্ত। এ সম্পর্কে সংবিধানবিদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যারিস্টার শাহদীন মালিক গতকাল শনিবার বিকেলে দৈনিক দিনকালকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে যে প্রস্তাবাবলী দিয়েছেন তাকে স্বাগত। বিশেষ করে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য এটি একটি সূত্রপাত বলা যায়। : সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দিনকালকে বলেন, সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই, সে কথাই ফুটে উঠেছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবাবলীতে। সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এ সম্পর্কে দিনকালকে বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের আয়োজনের কথায় বলেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যা জনগণ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জনাব রাজেকুজ্জামান রতন এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন যে, তার দলের পক্ষ থেকে ২০১২ সালেই একটি প্রস্তাবাবলী দেয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবাবলীকে তিনি স্বাগত জানান। পৌরসভা সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শামীম আল রাজি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে প্রস্তাবটিকে স্বাগত। : উল্লেখ্য, স্বৈরাচারের পতন বা ৯০ উত্তর রাজনীতিতে অস্থায়ী বা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের অস্থায়ী সরকারের অধীনে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পায়। সেই নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি আব্দুর রউফ। বিচারপতি রউফ তার অভিজ্ঞতাসুলভ নিবন্ধও লিখেছেন এই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি। পরে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন হয়। বিচারপতি লতিফুর রহমান ও বিচারপতি হাবিবুর রহমান শেলীর অধীনে দুটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে তাদের কৃতিত্ব রয়েছে। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের ‘বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের অধীনে নির্বাচনটি ছিল ‘প্রকাশ্য সেনা সমর্থিত’। : যে কারণে দাবি : এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটিই সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে ব্যবস্থাটি এখন রাখা হয়েছে, তা অনির্বাচনের নামান্তর। ১৫৩ আসনে অর্থাৎ অধিকাংশ নির্বাচনী আসনেই বিনা ভোটে বিজয়ী হবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এই কারণেই সুষ্ঠু অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি উঠেছে। আবার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার তাগিদ উঠেছে। কারণ বর্তমান রকিব মার্কা নির্বাচন কমিশন একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শুধু বিএনপি নয়, প্রায় সকল বিরোধী দলই অংশগ্রহণ করেনি। অথচ দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০টি। : প্রস্তাবটি সঠিকÑঅধ্যাপক এমাজউদ্দীন : প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমজাউদ্দীন আহমদ এ সম্পর্কে বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দরকার যে নির্বাচন ব্যবস্থা, তার জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। এটি অপরিহার্যও বটে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে যে প্রস্তাবাবলীটি দিয়েছেন, তাতে আমি অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি। তবে শুনেছি তার বক্তব্যটি। অত্যন্ত সঠিক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। এখন এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। : এটি একটি প্রাথমিক প্রস্তাবনা Ñ ব্যারিস্টার শাহদীন মালিক : প্রখ্যাত সংবিধানবিদ ব্যারিস্টার শাহদীন মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি গতকাল শনিবার দিনকালকে বলেন, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য এটি একটি প্রাথমিক প্রস্তাবনা। এটিকে স্বাগত জানাই। আলোচনার সূত্রপাতের জন্য এমন একটি প্রস্তাবনার প্রয়োজন ছিল। : প্রস্তাবটি যুক্তিযুক্ত Ñ ব্রিগেডিয়ার (অব) সাখাওয়াত : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন গত শুক্রবার রাতে একটি মিডিয়ায় বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন তা যুক্তিযুক্ত। : প্রস্তাবটি সময়োপযোগী হয়েছেÑ ব্যারিস্টার মাহবুব খোকন : সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করা দরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা খুবই যুগোপযোগী হয়েছে। তবে এ জন্য জাতীয় ঐকমত্য হওয়া দরকার। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকলে তাও দূর হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। : প্রস্তাবটি সময়োযোগী Ñ ড. ফরহাদ : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নিজেও উপস্থিত ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ স্পর্কিত প্রস্তাবনার সংবাদ সম্মেলনে। তিনি ২০ দলীয় জোটের একটি রাজনৈতিক দলের (এনপিপি) চেয়ারম্যান। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে বিশদ বিবরণ সম্বলিত প্রস্তাবনা দিয়েছেন, তা সময়োপযোগী হয়েছে। তারপরেও যদি কোনো নতুন প্রস্তাব থাকে, তাও যে কেউ দিতে পারেন। : প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হতে পারেÑ রাজেকুজামান রতন : বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বা বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য রাজেকুজ্জামান রতনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি গত শুক্রবার বলেন যে, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী তথা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের দলের পক্ষে থেকে ২০১২ সালেই একটি প্রস্তাবাবলী পেশ করা হয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থাপিত নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ সম্পর্কে প্রদত্ত প্রস্তাবনা নিয়ে আরো আলোচনা হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। : প্রস্তাবটি গণতন্ত্রের জন্য যুগোপযোগী Ñ অধ্যাপক শামীম আল রাজি : বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিংড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক শামীম আল রাজির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবাবলী জাতির সামনে তুলে ধরেছেন – তা খুবই সময়োপযোগী হয়েছে। এই প্রস্তাবাবলী দেশ-বিদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের সমর্থন পাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। : এদিকে জাতীয় ওলামা পরিষদের মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন গতকাল শনিবার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে যে প্রস্তাবাবলী দিয়েছেন তা অনন্য ও সময়োপযোগী।