১০ লাখ টাকা জরিমানা দুর্নীতির মামলায় এমপি বদির ৩ বছরের কারাদণ্ড

0
854
Print Friendly, PDF & Email

দুর্নীতির মামলায় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এক জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন।
আবদুর রহমান বদি কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য।
তিন কোটি ৮৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪২৩ টাকার সম্পদ গোপন করার অপরাধে দুদক আইনের ২০০৪ সালের ২৬(২) ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এই কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। রায়ে আদালত বলেন, আসামি সম্পদের তথ্য কেন গোপন করেছেন, তা তিনিই বলতে পারেন।
আদালত প্রতিবেদক শহীদুল্লাহ মিঞা জানান, আদালতে রায় ঘোষণাকালে আসামি আবদুর রহমান বদি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টার পর আদালতের এজলাসকক্ষে আসেন বদি। এসময় তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। তবে বিচারক রায় ঘোষণার পর তিনি কেঁদে ফেলেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ৭ মে দুদক এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। মামলার রায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে বদিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। তার বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে সাজা দিয়েছেন।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাকে জেল-জরিমানার দণ্ড দিয়েছেন আদালত।
২০১৪ সালের ২১ আগস্ট দায়ের করা এই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আবদুর রহমান বদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৯ টাকা মূল্যমানের সম্পদের তথ্য গোপন করে বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বৈধতা দেখানোর জন্য কম মূল্যে সম্পদ কেনা দেখিয়ে এক কোটি ৯৮ লাখ তিন হাজার ৩৭৫ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি দেখানো হয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সালে আবদুর রহমান বদির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকার। ২০১৩ সালে তিনি যে আয়কর বিবরণী দাখিল করেন, এতে দেখা যায়, তার সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। দুদক সম্পদের বিবরণী চেয়ে বদিকে নোটিশ দিয়েছিল।
রায়ের পর্যালোচনায় আদালত উল্লেখ্য করেন, আসামি আব্দুর রহমান বদি ২০১৩-২০১৪ কর বছরে তার দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে নয় কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৫ টাকার নিট সম্পদ প্রদর্শন করেও দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার নিজের ও তার উপর নির্ভরশীলদের সর্বমোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৭৮ টাকার। এ ক্ষেত্রে তিনি তিন কোটি ৮৪ লাখ নয় হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ গোপন করে মিথ্যা তথ্য সংবলিত সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। একইভাবে আবদুর রহমান বদি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় তার নিজের এবং তার উপর নির্ভরশীলদের মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ৭২৩ টাকার। এই ক্ষেত্রেও তিনি পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৪ টাকার সম্পদ গোপন করে মিথ্যা তথ্য সংবলিত সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন।
আসামী আবদুর রহমান বদি তার নিজের এবং তার উপর নির্ভরশীলদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করে ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যা তথ্য সংবলিত সম্পদ বিবরণী দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় বর্ণিত দণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটন করেছেন এবং তিনি দণ্ডিত হওয়ার যোগ্য।
রায় ঘোষণার পর দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা দুদকের পক্ষ থেকে এমপি বদির বিরুদ্ধে যতটুকু অপরাধ পেয়েছি, তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট।
অপরদিকে এমপি বদির আইনজীবী মাহবুব আহম্মেদ বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। মামলায় রায়ের নকল কপি হাতে পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
রায় ঘোষণার আগে এমপি বদি আদালতে তার আইনজীবী ও এলাকার লোকজন নিয়ে আদালতে আসেন। তার গায়ে সাদা পাঞ্জাবী, সাদা পায়জামা ও কালো কোর্ট পরিহিত ছিল। বদি তার আইনজীবীদের সাথে নিয়ে আদালতে প্রবেশ করেন। এ সময় আইনজীবীদের সাথে তাকে হাস্যোজ্জলভাবে কথা বলতে দেখা যায়। তবে রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতেই কেঁদে ফেলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতে নিয়োজিত আইনশৃংখলা বাহিনী বদিকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যায়।

শেয়ার করুন