মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৬ : আর বাকি ৫ দিন হিলারির দুর্গে ট্রাম্পের হানা

0
831
Print Friendly, PDF & Email

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার শেষ পর্যায়ে এসে প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনের ভোট কেড়ে নিতে তৎপর হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এফবিআইয়ের তদন্তের ঘোষণায় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি চাপে পড়ায় নুতন করে চাঙা হয়েছেন জনমত জরিপে প্রায় বরাবর
পিছিয়ে থাকা রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। তিনি এখন আশাবাদী হয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে প্রচার চালাচ্ছেন। ট্রাম্পের অবস্থান আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হয়েছে—কয়েকটি জনমত জরিপ এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
শেষ পর্যায়ের প্রচারাভিযানে ট্রাম্প নিজ দলের দুর্গ ধরে রাখার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় জয় নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। গত রোববার তিনি কলোরাডো ও নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যে প্রচার চালান। দুটি অঙ্গরাজ্যের জনগণই ২০০৮ ও ২০১২ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন। এবারও তাঁরা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির দিকে ঝুঁকেছেন। ট্রাম্প গত সোমবার ছিলেন মিশিগানে, পরদিন পেনসিলভানিয়ায়। এ দুটি অঙ্গরাজ্যেও হিলারির প্রতি সমর্থন বেশি। একই দিনে ট্রাম্প সফর করেন উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে। সেখানে ১৯৮৮ সাল থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থন বেশি। ট্রাম্পের প্রচার দল এবার এ রকম রাজ্যে ধীরে ধীরে কিছুটা আশার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে।

উইসকনসিনে ট্রাম্পের জনসভায় অংশগ্রহণকারী ৫৭ বছর বয়সী ক্যারল রবার্টসন বলেন, ‘জনমত যা-ই হোক না কেন, এবার পরিবর্তন আসবে। লোকে প্রকাশ্যে বলতে ভয় পায় যে “আমি ট্রাম্পকে ভালোবাসি”। তবে তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ঠিকই গোপনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে ফিরবে।’

৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাওয়ার দৌড়ে ট্রাম্পকে ওহাইওর মতো দোদুল্যমান ভোটারদের অঙ্গরাজ্যে মজবুত অবস্থান গড়ে নিতে হবে। সেখানে ইতিমধ্যে তিনি কিছুটা সুবিধাজনক পরিস্থিতির আভাস পেয়েছেন। কারণ, স্থানীয় কর্মজীবী শ্রেণির মানুষ উৎপাদন খাতে ধস নামায় ওবামা প্রশাসনের ওপর খেপে আছে। ২০১২ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি যেসব অঙ্গরাজ্যে জিতেছিলেন, ট্রাম্প সেগুলোর পাশাপাশি ওহাইও ও ফ্লোরিডায় জয়ী হলেও হোয়াইট হাউসে পৌঁছাতে অল্প একটু পিছিয়ে থাকবেন। সেই অপূর্ণতা কাটাতেই তাঁকে ডেমোক্রেটিক পার্টির কয়েকটি দুর্গে ভাঙন ধরাতে হবে। এ ক্ষেত্রে উইসকনসিনের দিকে তিনি ইগলের দৃষ্টি দিতে পারেন। ট্রাম্পের প্রচার দলের সহকারী পরিচালক ডেভিড বোসি বলেছেন, তাঁরা উইসকনসিন, ওহাইও এবং অন্যান্য জায়গায় ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে কড়া নাড়ছেন।

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গার্ডিয়ানপত্রিকা জানায়,যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক উপদেষ্টা প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের আলোচিত ই-মেইল বিতর্ক নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। রজার স্টোন নামে ট্রাম্পের ওই উপদেষ্টা বলেছেন, ওই ই-মেইল ফাঁসের বিষয়ে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের একজন ‘বন্ধু’ তাঁকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

রজার স্টোন দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টার কাজ করছেন। স্টোন গার্ডিয়ানকে বলেন, তিনি হিলারির ফাঁস হওয়া ই-মেইলগুলোর বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগেই খবর পেয়ে যান। তবে তথ্যদাতার পরিচয় তিনি গোপন রাখতে চান। স্টোন বলেন, ওই তথ্যদাতা লন্ডনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

রজার স্টোন দাবি করেন, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের ওই বন্ধুর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক আছে।

হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় অনেক ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন। সেগুলোর বেশ কয়েকটি ফাঁস হওয়ার পর তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। এ বিষয়ে এফবিআইয়ের নুতন করে তদন্তের ঘোষণা নির্বাচনী প্রচারণার শেষ পর্যায়ে এসে হিলারির জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছে। হিলারি ও তাঁর সহযোগীরা বলছেন, জনগণের মন থেকে সংশয় দূর করতে ওই সব ই-মেইল অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক। অন্যদিকে ওবামা প্রশাসন এসব ই-মেইল হ্যাকিংয়ের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করছে। তবে বহু গোপন তথ্য ফাঁস করে আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে রজার স্টোনের টুইটার বার্তা এ বিষয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শেয়ার করুন