অটো চালকের ছেলের হাতে ইংল্যান্ড হেরে গেল : ভারতীয় মিডিয়ায় মিরাজ

0
180
Print Friendly, PDF & Email

মেহেদি হাসান মিরাজ। বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন বিস্ময়। তার অবিশ্বাস্য পারফরমেন্সে ইংল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্ব তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। কলকাতাভিত্তিক আজকাল পত্রিকায় দেবাশিস দত্তের প্রতিবেদনটি এখানে প্রকাশ করা হলো। শিরোনাম ছিল : অটো চালকের ছেলের হাতে ইংল্যান্ড হেরে গেল!
খুলনার ‘‌পোলা’। ৩ সপ্তাহ আগে মেহেদি হাসান নামের কোনো ক্রিকেটারকে চিনত না দুনিয়া। পাকিস্তানের গজলগায়ককের নামের সঙ্গে মিল তার। এহেন ডান হাতি অফ স্পিনার‌ একেবারে ঘোল খাইয়ে ইংল্যান্ডকে জিততে দিল না। দু’‌ইনিংস মিলিয়ে ১২ উইকেট। তিনিই ম্যান অফ দা ম্যাচ। লিখতে ভালো লাগছে যে এই অফ স্পিনারই পেয়েছেন সিরিজ সেরা ক্রিকেটারের সম্মান। গোকুলে বাড়ার মতোই মেদেহির উত্থান। এবং জেতার পর বাংলাদেশী ক্রিকেট লেখকদের জোরাজুরিতে কোনোরকমে বলেছেন, ‘‌ভাবিইনি এত গুলো উইকেট পেয়ে যাব। ভেবেছিলাম, গোটা দু–তিনেক উইকেট, সঙ্গে বিশ–তিরিশ রান, সে জায়গায় যা পেয়েছি, তা একেবারে অপ্রত্যাশিত।’‌
বড্ড মুখচোরা। যদি সিনিয়র ক্রিকেটাররা অসম্মানিত বোধ করেন, তাই নিজেকে, এমন অসাধারণ সাফল্যের পরও গুটিয়ে রাখতে চান। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা এই ছাত্রের মুখের দিকে তাকালেই ভাল লাগে। একেবারে নিষ্পাপ। নিজেই বলেছেন, ‘‌ চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট খেলতে গিয়ে খুব নার্ভাস ছিলাম।’‌ এবং ওকে ওই অবস্থায় দেখে দলের তিন সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহমান, রিয়াজ আহমেদ এবং সাকিব আল হাসান ওঁকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‌তুই তোর মত বল করে যা। রান গেলে ভাবিস না। মনে কর আর একটা ম্যাচ খেলছিস।’‌ এসব কথাবার্তায় ধাতস্ত হয়ে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ৬ জন ইংরেজ ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছিলেন একটি। মিরপুরে, পরের টেস্টে দু’‌ইনিংসেই ৬ উইকেট। সব মিলিয়ে দুটো টেস্ট থেকে ঝুলিতে পেলেন ১৯ টি তাজা ইংরেজ ব্যাটসম্যানের উইকেট।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে তাকে বলা হয় ‘‌জুনিয়র সাকিব’‌। স্পিনার বলে নয়, ব্যাটিং অলরাউন্ডার বলে নয়, আগ্রাসী মানসিকতার প্রশ্নে ছোট মেহেদি এখন থেকেই সাকিবকে অনুসরণ করেছেন। কলাবাগান ক্রিকেট ক্লাব থেকে উঠে এসেছেন। কোচের নাম সোহেল। অখ্যাত কোচের হাতে অতীতে বিখ্যাত ক্রিকেটার তৈরি হয়েছেন বহু। সেই তালিকায় কোচ সোহেল এবং তার বাধ্য ছাত্র মেহেদির নাম উঠল। গোটা দেশে শুরু হয়েছে আনন্দের ঢেউ। সাকিব নিজে ভাল বোলিং করেছেন। উল্টোদিক থেকে মেহেদিকে খেলতে গিয়ে ইংরেজরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত পা পিছলে প্রথম হেরে বসল ইংল্যান্ড, বাংলাদেশের কাছে। ওপারের ক্রিকেট এগোচ্ছে, টুকটুক করে, নিঃশব্দে। তাই মুস্তাফিজুরের পর উঠে এলেন মেহেদি। আমাদের রবিচন্দ্রন অশ্বিন খুশি হবেন একথা জেনে যে আরও একজন অফ স্পিনার উঠে আসছে। মেহেদি নিজে অবশ্য জানেন, প্রতি ম্যাচে এমন ব্যাগ ভর্তি করে উইকেট নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন না। কম কথা বললেও, জীবনের মানে কী, এটা কিন্তু এই নবাগত তারকা বুঝে ফেলেছেন।

শেয়ার করুন