পুরাতন হাই কোর্ট ভবন থেকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছে সরকার।
ট্রাইব্যুনাল সরাতে মন্ত্রণালয়কে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি
এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব তৈবুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রোববার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে’ পুরনো হাই কোর্ট ভবনটি সুপ্রিম কোর্টের কাছে হস্তান্তর করা হলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা সর্বজনগ্রাহ্য হবে না; বরং ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে’।
গত ১৮ অগাস্ট আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে পুরনো হাই কোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠিতে বলা হয়, স্থানাভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রয়োজনীয় চেম্বার ও এজলাসের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও প্রয়োজনীয় অফিসের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে ‘মৌখিক আলোচনার’ কথা জানিয়ে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ভবনটি হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে বলা হয় সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে।
ওই সময় শেষ হওয়ার আগের দিন আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ‘জানগণের মনোভাব’ তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়।
এতে বলা হয়, পুরাতন হাই কোর্ট ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের গভর্নরের সরকারি বাসভবন হিসেবে এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে তা পূর্ব পাকিস্তানের হাই কোর্টে রূপান্তর করা হয়।
“১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধসমূহ, যেমন যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকাজ পরিচালনা করার জন্য বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ধারাবাহিকতায় অন্য কোথাও নিরাপদ স্থাপনা না পাওয়ার কারণে সরকার শেষ পর্যন্ত উক্ত ভবনটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসাবে ব্যবহার করছে।
“২০০৯ সালে এ ভবনের একটি অংশ আইন কমিশন এবং অপর অংশে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সে সময় ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে হচ্ছিল না। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করার জন্যও জায়গা খোঁজা হচ্ছিল। নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় এনে এ ভবনটি সবচেয়ে নিরাপদ বিবেচিত হওয়ায় এখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়।”
ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করলে এই ভবন থেকে আইন কমিশন ও বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস চলে যায় কলেজ রোডের নতুন ঠিকানায়। এর পর থেকে এ ট্রাইব্যুনালে ‘অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর’ বিচার সম্পন্ন হওয়ায় ভবনটির ‘ঐতিহ্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে’ বলে আইন মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য।
চিঠিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণ চায়, এ ভবনটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হওয়ায় সে মর্যাদা সমুন্নত রেখে ভবনটিকে সংরক্ষণ করা হোক এবং ট্রাইব্যুনাল এখান থেকে সরানো না হোক। এটা সরানো হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং দেশের সঠিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
“ফলে ভবন দখল হস্তান্তর করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল,” লেখা হয়েছে চিঠিতে।
২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের মাজারগেট সংলগ্ন পুরনো হাইকোর্ট ভবনেই এর কার্যক্রম চলছে। সুপ্রিম কোর্ট ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে চিঠি দেওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যদি সরেও যায়, তাতে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন না।