‘নারী নিজে না বদলালে বদলাবে না পৃথিবীও’

0
903
Print Friendly, PDF & Email

নারীর প্রতি সহিংসতাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে এই অবস্থার পরিবর্তনে ভয়মুক্ত হয়ে নিজেদের বদলে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন উপমহাদেশের প্রখ‌্যাত নারী অধিকার নেত্রী কমলা ভাসিন।

নারীর বৈষম্য-সহিংসতার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় নারীবাদী গণআন্দোলন মঞ্চ ‘উদ্যমে উত্তরণে শতকোটি’র উদ্যোগে রোববার রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে ‘নারী শোষণের বিরুদ্ধে সংহতি’ শীর্ষক বাংলাদেশ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।

কমলা ভাসিন বলেন, “তোমার আমার ব্যক্তিগত জীবন না বদলালে পিতৃতন্ত্র চলে যাবে না। সুতরাং আমি নিজের দিকে আঙুল রাখছি, তোমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিজের দিকে আঙুল রাখ।

“আমি এখন একজন হিন্দু হিসাবে বলবো, সেখানে পুরুষতন্ত্রের কত অন্যায় আমরা নারীরা করে চলেছি। তোমাদের ধর্মে-সংস্কৃতিও তোমরা যা করছে, সেগুলোও সব সময় সমান নয়।”

“আমি যদি না বদলাই পৃথিবী বদলাবে না, আমি-পরিবার এ সব নিয়েই পৃথিবী। যদি ঘরে বাস করা ব্যক্তি না বদলায়, তাহলে ঘরও বদলাবে না। এই ঘর পুরুষতান্ত্রিক। আমরা এখানে যারা আছি, আমরাই এই ঘর বানিয়েছি। সবাই এই অভিযোগে অভিযুক্ত।”

স্বামী শব্দটিতে আপত্তি জানিয়ে এই নারীনেত্রী বলেন, “হাজবেন্ড শব্দ আমরা ত্যাগ করেছি। কারণ এই শব্দও সমতার কথা বলে না। হাজবেন্ড সেই ব্যক্তি যে নিয়ন্ত্রণ করে।”

“তোমরা এনিমেল হাজবেন্ড্রি শব্দের সাথে নিশ্চয়ই পরিচিত। এখানে অনেক তরুণী রয়েছে, যাদের বলা উচিৎ, আমরা কোনো স্বামী চাই না। আমি একজন জীবনসঙ্গী চাই। সুতরাং স্বামী বাদ, সাথী চাই,” শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেন তিনি।

গত বছর ভারতে ধর্মীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নারীদের প্রবেশাধিকারের জন‌্য আন্দোলনের কথাও বলেন কমলা ভাসিন।

“কেন তারা আমাদের ঢুকতে দেবে না। কারণ আমাদের রজঃস্রাব হয়। এ কারণে আমরা নাপাক ডার্টি। বিশ্বজুড়ে গাছ আর ওয়াল পেলেই পুরুষরা মলত্যাগ করে পেশাব করে, তাতে তারা ডার্টি হয় না?”

“তারা সব মসজিদে যেতে পারে, সব মন্দিরে যেতে পারে। আমরা বোম্বের হাজী আলী মাজারের বিষয়টি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে তুলেছিলাম। সেখানে আদালতে মাজার ট্রাস্ট বলেছে, তারা নারী-পুরুষ ভেদ করবে না। বড় বিজয়।”

.
রজঃস্রাব নারীদের কোনো ধরনের লজ্জার মধ‌্যে না থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এটা ডার্টি ব্লাড না। এটা পৃথিবীর পবিত্রতম রক্ত, যা থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়। আমাদের এটা করার ক্ষমতা আছে, বিপরীত লিঙ্গের সেটা নেই।”

ভয়মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কমলা ভাসিন বলেন, “ভয়ের কারণে আমরা আসলে চ্যালেঞ্জ করি না। জনগণ যেটা বলে, আমরাও সেটাই বলি। আমাদের সাহস রাখতে হবে। পুরুষতন্ত্র আমাদের বড় শত্রু নয়। আমাদের বড় শত্রু আমাদের ভেতরে বসবাস করা ভয়।”

নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক তুলে ধরেন তিনি।

“নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রকৃতির বিরুদ্ধে সহিংতার মতো। উদ্যমে উত্তরণে শতকোটি এই সবকে একত্রিত করেছে। এ বছর আমরা সব ধরনের নারী কর্মীদের বিষয়কে সামনে আনছি।”

প্রতি তিনজনের একজন নারী নিপীড়নের শিকার হয়-এমন তথ্য থেকে পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি নারী নিপীড়নের শিকার হয় ধরে নিয়ে এই নিপীড়ন থেকে নারীদেরকে বাঁচানোর লক্ষ‌্য নিয়ে ২০১৩ সালে এই কর্মসূচি শুরু হয়।

রোববারের অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝেই ছিলো আবৃত্তি, গান ও নাচ।

‘উদ্যমে উত্তরণে শতকোটি’র বাংলাদেশ সমন্বয়ক খুশি কবির ঢাকায় একদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরে বলেন, “পপুলার হাসপাতালে একজন নারী টয়লেটে গেলে একজন ছবি তোলার চেষ্টা করে। এ কথা শোনার পর আমরা সেখানে গেলাম। পপুলারের মালিক স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা ঘটনায় যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

“আমাদের প্রশ্ন রয়ে গেল, কোন সাহসে এটা করেছে? আমি আমার চিকিৎসার জন্য এক জায়গায় যাচ্ছি। মানসিকভাবেও দুর্বল। সেখানে কীভাবে এটা করতে পারবে বলে ভাবল। কী ধরনের ডায়াগনস্টিক সেন্টার যেখানে নারীদের টয়লেটের জায়গাটা এমন যেখানে কেউ চাইলে ছবি তুলতে পারে। এই প্রশ্নগুলো আমাদেরকে তুলতে হবে।”

নারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকার দুই মেয়রকে আহ্বান জানানোর কথা বলেন খুশি কবির। নারী শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য-শোষণ নিরসনে গণশুনানির কথাও বলেন তিনি।

খুশি কবির বলেন, “১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে পুরুষরা নারীদেরকে গোলাপ দেয়। বাকি সময়ে অনেকেই নির্যাতন তন করে। এই একদিনের ভালোবাসার পরিবর্তে নারীকে যেন মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধার চোখে দেখে, সেই জন্য ওইদিন আমরা কর্মসূচি করেছি। আগামী বছরও করব।”

শেয়ার করুন