আ. লীগের কমিটি: দল ও সরকার একাকার নয়

0
621
Print Friendly, PDF & Email

আওয়ামী লীগের নব গঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে প্রভাব কমেছে সরকারের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের। দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর গঠিত কমিটিতে এমনটাই লক্ষ্য করা গেছে। ২০০৯ ও ২০১২ সালের দুটি সম্মেলন পর্যালোচনা করে দেখা যায়,অনেকে সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন আবার একই সঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও পেয়েছেন। সে সময়ে বলা হতো, দল ও সরকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কিন্তু এবারের কমিটি ঘোষণার পর নতুন কমিটির নেতারা বলছেন, এবার দল ও সরকার একাকার হবে না। দল সাংগঠনিক কাজ করবে এবং সরকার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘এবার একটু ভিন্ন চিন্তা করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। যাতে মন্ত্রীরা শুধু সরকারের কাজ করেন, আর নেতারা দলের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘এই চিন্তা থেকেই পরিকল্পিতভাবে কমিটি করা হয়েছে।’ সেলিম বলেন, ‘লক্ষ্য করলে দেখবেন, এবারের কমিটিতে মন্ত্রীর সংখ্যাও খুবই কম।’

সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, ‘অনেক সময় বলতে শুনেছি, দল ও সরকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তাই এবারের কমিটিতে মন্ত্রীদের দলের নেতা বানানোর রীতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। এবারের কমিটিতে মন্ত্রীদের আধিক্য না থাকায় দল ও সরকার দুটি একে অপরের সহায়ক হবে, কিন্তু একাকার হবে না।’

তবে এবারের নব গঠিত কার্যনির্বাহী সংসদ মেলালে দেখা যায়, এবারের কমিটিতে একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রী হয়েছেন এমন সংখ্যা একেবারেই কম। ৩৪ সদস্যের সম্পাদকমন্ডলীতে এবার মন্ত্রী মাত্র একজন। তিনি হলেন, নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ২৮ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদে মাত্র দুই জন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলাম। প্রতিমন্ত্রী হলেন একজন মির্জা আজম। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সভাপতিমন্ডলীতে রয়েছেন মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ৭৪ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে শনিবার। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাদ পড়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি-স্পিকার, ৮ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। এবারের কার্যনির্বাহী সংসদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাদে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মিলিয়ে আছে মাত্র ৯ জন।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে গঠিত সরকারে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান প্রধানমন্ত্রী বাদে ১৯ জন। এরা মন্ত্রীও হন এবং কেন্দ্রীয় পদেও বহাল থাকেন।

দলটির তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী কৃষিমন্ত্রী, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক লে কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি এম তাজুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

দলটির সে কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন দফতর সম্পাদক আবদুল মান্নান খান, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

ক্ষমতায় থাকালীন ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ১৯ তম জাতীয় সম্মেলন। সে সম্মেলনেও শেখ হাসিনা বাদে ২৭ জন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। অবশ্য নবম ও দশম সংসদ মিলিয়ে এই ২৭ জন মন্ত্রী ছিলেন।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও দলীয় দায়িত্বে থেকে যান। তবে ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দায়িত্ব পাওয়া একাধিক নেতা ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভায় স্থান পান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আ হ ম মুস্তফা কামাল, আসাদুজ্জামান নূর, এম এ মান্নান, বীর বাহাদুর, মির্জা আজম, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক। পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ধর্ম মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রমুখ। তবে মন্ত্রিসভায় থেকেও দলে পদোন্নতি পেয়েছেন দলটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এবার আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

শেয়ার করুন