ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়াতে চাঁদপুরের নদীকেন্দ্রে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র উইং স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইলিশ মাছ সমুদ্রের লবণাক্ত পানি থেকে মিঠা পানিতে এবং মিঠা পানি থেকে সমুদ্রে চলাচল করে থাকে। পুকুরে এ মাছ চাষের লক্ষ্যেই হচ্ছে নতুন গবেষণা কেন্দ্র।
দেশে তিন প্রজাতির ইলিশ মাছ পাওয়া যায়- টেনুয়ালাসা ইলিশ (Tenualosu ilisha), চন্দনা ইলিশ (Tenualosu toil) এবং হিলশা কেলি (Hilsa kelee)। সার্ডিন, চৌক্কা, জাটকা ও চাপিলাও দেখতে ইলিশের মতো। এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি প্রজাতির ইলিশ কিভাবে পুকুরে চাষযোগ্য করা যায়- সেটাই গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময় ইলিশ মাছের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বাড়ছে। তাই পুকুরে ইলিশ চাষের লক্ষ্য নিয়ে নতুন গবেষণা কেন্দ্রটি চালু করতে যাচ্ছি’।
‘পূর্ণিমার সময় ইলিশ প্রজননের পিক টাইম। অন্য কোন সময় বেশি ডিম পাড়ে, কোথায় পাড়ে, কতোদিন ধরে ইলিশ ডিম ছাড়ে, স্থায়িত্ব কতোদিন হয়, কোন জাতের ইলিশ মাছ কিভাবে পুকুরে চাষযোগ্য করে তোলা যায়- সেসব বিষয়ে যুগোপযোগী আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন করে গবেষণা আরও জোরদার করা হবে’।
ইলিশ মাছের বয়স ও আকারভেদে ডিম ধারণ ক্ষমতার তারতম্য হয়ে থাকে। একটি মাছ থেকে সর্বোচ্চ ২১ লাখ ডিম পাওয়া যায়। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ রক্ষায় আরও পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
চাঁদপুর নদীকেন্দ্রে বড় পরিসরে গবেষণার লক্ষ্যে মোট তিনটি গবেষণাগার স্থাপন করা হবে। সেগুলো হচ্ছে- লিমনোলোজি অ্যান্ড বায়োলোজিক্যাল প্রোডাক্টিভিটি ল্যাব, পপুলেশন ডিনামিক্স অ্যান্ড স্টক অ্যাসেসমেন্ট ল্যাব এবং রিপ্রোডাক্টিভ ফিজিওলোজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ল্যাব।
৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি সময় থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে এটি স্থাপন করা হবে।
গবেষণা কেন্দ্রে ইলিশের বিষয়ে বিশদ জ্ঞানের অধিকারী ২৪ জন স্থানীয় পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। নদীর কেন্দ্রে অফিস ল্যাব, প্রশিক্ষণ ভবন, স্টাফ ডরমেটরি ও দু’টি এ টাইপের আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। একটি ডিপ টিউবওয়েল, একটি গবেষণা ভ্যাসেল, একটি আধুনিক ফিসিং ট্রলার ও দু’টি স্পিডবোট কেনা হবে।
আধুনিক প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি প্রদর্শনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে স্টেকহোল্ডারদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যে দেখা গেছে, সাম্প্রতিককালে বিদেশে ইলিশ মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। গত অর্থবছরে দেশে ৩ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে।
দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান ১১ শতাংশ। জিডিপিতে এর অবদান ১ শতাংশ। ১৫২টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে পূর্ণ অথবা খণ্ডকালীনভাবে ইলিশ মাছ ধরেন। এছাড়া ইলিশ মাছ রফতানি, মাছ পরিবহন, পাইকারি ও খুচরা বিক্রি, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন কাজে ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।