যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকি আর এই সময়েই ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল বিতর্ক আবার চাঙ্গা হয়েছে। খোঁচাটা মার্কিন তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) তরফ থেকে এলেও এর ফায়দা শতভাগ পাচ্ছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সময় নষ্ট না করেই তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত অপরাধী’ হিসেবে অভিহিত করে আশা প্রকাশ করেছেন, এবার তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
তবে অন্যবারের মতো এবার আর ঘটনার পর নীরবতা দিয়ে সময় পার করছেন না হিলারি। তিনি এফবিআইয়ের হাতে যেসব মেইল পড়েছে তার সারবস্তু কী তা দ্রুত প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী (২০০৯-১৩) থাকার সময় সরকারি সার্ভার ব্যবহার না করে রাষ্ট্রীয় কাজে চালাচালি করা ই-মেইলের জন্য ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করেন হিলারি। ২০১৫ সালের গোড়ার দিকে বিষয়টি নজরে এলে তদন্ত শুরু করে এফবিআই। কংগ্রেসের সামনে একটি শুনানিতেও হাজিরা দিতে হয় হিলারিকে। পরে অবশ্য এফবিআই জানায়, এ কাণ্ডের জন্য হিলারির বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনবে না তারা। তবে দেশের নিরাপত্তার জন্য বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে হিলারিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। আপাত অর্থে বিষয়টি মিটে গেছে বলে ধরে নেওয়া হলেও পরে নানা সময় বিকল্প ধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস হিলারির পাঠানো বা পাওয়া ই-মেইল প্রকাশ করতে থাকে; যদিও সেগুলোতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে এমন কিছু ছিল না।
এবার নির্বাচনের একেবারে কাছাকাছি সময়ে এসে গত শুক্রবার এফবিআই পরিচালক জেমস কমি কংগ্রেসকে এক বার্তায় জানান, অন্য একটি তদন্ত করতে গিয়ে হিলারির গোপন কিছু ই-মেইলের সন্ধান পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সাবেক কংগ্রেসম্যান অ্যান্থনি উইনারের বিরুদ্ধে তদন্তের সূত্র ধরে হিলারির ই-মেইলগুলোর খোঁজ পাওয়া যায়। হিলারির দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুমা আবেদিনের সাবেক স্বামী উইনার কংগ্রেস সদস্য থাকাকালে অশ্লীল কথাবার্তাসহ কিছু খুদে বার্তা নর্থ ক্যারোলাইনার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর কাছে পাঠান। এর সঙ্গে তার নগ্ন ছবিও ছিল। ওই খুদে বার্তা ও ছবি প্রকাশিত হয়ে গেলে সংকটে পড়েন উইনার। কংগ্রেস থেকে পতদ্যাগ করতে হয়, পাশাপাশি গভর্নর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল, সেটিও বাতিল করতে বাধ্য হন তিনি। ওই ঘটনার জেরে তাঁর বিয়েও ভেঙে যায়। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হিলারি। সম্প্রতি হুমা ও উইনারের কিছু ডিভাইস জব্দ করে এফবিআই। মূলত সেই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েই হিলারির নতুন মেইলের সন্ধান পায় এফবিআই।
তবে মেইলগুলোতে কী আছে বা অপরাধমূলক কোনো তথ্য তারা পেয়েছে কি না সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তেমন কিছুর আগেই এ ধরনের বার্তা দেওয়ার বিষয়টি অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। বিভাগীয় প্রধানের পদক্ষেপ নিয়ে এফবিআইতেই অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এফবিআই মনে করছে, তদন্তে অপরাধমূলক কিছু পাওয়ার আগেই কংগ্রেসকে চিঠি দিয়ে হিলারির নির্বাচনী প্রচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন জেমস কমি। সাধারণত নির্বাচনের ঠিক আগে আগে এমন পদক্ষেপ নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে।
নিঃসন্দেহে বিষয়টি হিলারি শিবিরের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। তাই সময় নষ্ট না করে সুই-সুতা হাতে নেমে গেছেন হিলারি। তিনি জোর গলায় মেইলে কী আছে তা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, গত জুলাইয়ে তাঁর ই-মেইল সম্পর্কে এফবিআই যে সিদ্ধান্তে এসেছিল এই ই-মেইলগুলো সেই সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করছেন, এবার হিলারি ঠিকই ধরা খাবেন। আর এ ধারণা সবচেয়ে বেশি হাওয়া পাচ্ছে খোদ ট্রাম্পের কাছ থেকে। ওই দিনই বিকেলে নিউ হ্যাম্পশায়ারে এক প্রচার সভায় ট্রাম্প বলেন, ওটারগেটের পর এটিই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি। এ সময় তাঁর সমর্থকরা ‘তাঁকে (হিলারি) জেলে পাঠাও’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। ট্রাম্প বলেন, যে ভয়াবহ ভুল এফবিআই করেছে, তারা সম্ভবত তার মাসুল দিতে চাইছে।
ই-মেইল বিতর্কের জেরে কিছু সংকটে হিলারি পড়তেই পারেন। ইউনিভার্সিটি অব বোস্টনের অধ্যাপক নাজলি কিবরিয়া বলেছেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে এই তদন্ত শেষ করে ফলাফল জানা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে এখনো কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্ত যেসব ভোটার নেননি, নিঃসন্দেহে, এমন কিছু ভোটারের ভোট হারাবেন হিলারি। তবে যাঁরা হিলারিকে বিবেচনা করছিলেন তাঁরা ট্রাম্পকেও ভোট দেবেন না। ওই সব ভোট পাবেন তৃতীয় প্রার্থী গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী গ্রে জনসন।
ঘটনাটি হয়তো বড় কিছু নয়, তবে এর প্রকাশের সময়টি কোনোভাবেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মতো নয়। এমনকি হিলারি যদি জয়ও পান তার সঙ্গে এই বিতর্কও হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবে এবং সম্ভবত আলোচনায়ও থাকবে অনেক দিন।
তোপের মুখে এফবিআই প্রধান : হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল বিতর্ক নতুন করে তদন্তের ঘোষণা দেওয়ায় এফবিআইয়ের পরিচালক জেমস কোমির তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেট, রিপাবলিকান ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তারা। নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে গত শুক্রবার কোমির এই ঘোষণা হিলারি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী লড়াইয়ে বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে এফবিআইয়ের এই ঘোষণা উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করে হিলারির প্রচার শিবির।