নানা অব্যবস্থাপনায় ছিন্নমূল নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য নির্মাণাধীন রাজধানীর ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প (বিআরপি) পরিণত হয়েছে দুর্নীতির ডিপোতে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করে, বিনিয়োগের নামে ধোঁকা দিয়ে ও সেবার নামে প্রতারণা-জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১৩ বছরে লোপাট করা হয়েছে প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকা। সমকালের সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রকল্পের ফ্ল্যাট মালিক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ লোকজনের কাছ থেকে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তথ্যউপাত্তও পাওয়া গেছে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ কোটি টাকা লুটপাটের।
রাজধানীর ছিন্নমূল ও নিম্নবিত্ত মানুষদের পুনর্বাসনে ভূমি মন্ত্রণালয় মিরপুরের লালাসরাই ও ধামালকোট মৌজার ভাসানটেকে ৪৭.৯০ একর জমিতে এই পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে।
দুর্নীতির কারণে চুক্তি বাতিল: এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বেসরকারি আবাসন কোম্পানি নর্থ সাউথ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (এনএসপিডিএল) চুক্তি হয় ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে ২০১০ সালের অক্টোবরে এ চুক্তি বাতিল করা হয়। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করে একশ’ কোটি, শপিং সেন্টার ও হাসপাতালে বিনিয়োগের নামে ধোঁকা দিয়ে আরও একশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এনএসপিডিএল কর্তৃপক্ষ। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ওই কোম্পানি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য দেশ-বিদেশের পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক শামস আল মুজাদ্দিদ সমকালকে বলেন, ‘চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে একেকটি ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে ৮-৯ লাখ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করেছে এনএসপিডিএল। প্রকল্পের ভেতরে শপিং সেন্টার ও হাসপাতালে বিনিয়োগের নামেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। এই দুটি খাতে অর্থ আত্মসাতের হিসাব এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিল বাবদ আদায় হওয়া টাকা খরচে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ দেড় বছর আগে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব নিলেও শামস আল মুজাদ্দিদ গত ১৫-২০ দিন ধরে প্রকল্পের সাইট অফিসে বসতে শুরু করেছেন।
এনএসপিডিএলের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর প্রকল্পের কর্তৃত্বে আসেন নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। এর পর এনএসপিডিএলের ফেলে যাওয়া মালপত্র বিক্রি ও সেবার নামে ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা আদায় করে এ পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে পঞ্চাশ কোটি টাকার মতো। প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম সরেজমিন যাচাই ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, এনএসপিডিএলের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম ও প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি অসাধু চক্র আড়াইশ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনেও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
অতিরিক্ত মূল্যে ফ্ল্যাট বিক্রি: ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও নির্মিত ভবনে ফ্ল্যাট মালিকরা উঠতে থাকেন ২০০৮ সাল থেকে। চুক্তি অনুযায়ী এ-টাইপ ২১৫ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাট ২ লাখ ও বি-টাইপ ৩৯৫ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাট ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু এনএসপিডিএল একেকটি ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে ৮-৯ লাখ টাকা বেশি নিয়েছে। সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকায়ও ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে কোম্পানিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনএসপিডিএল সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করেছে দশ ভবনের এক হাজার ৫৬টি ফ্ল্যাট। দশ ভবনের এ-টাইপ, বি-টাইপের এক হাজার ৫৬টি ফ্ল্যাট বিক্রি ও বরাদ্দ দিয়ে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। এরপর আরও এক হাজার ২০৭টি ফ্ল্যাট বিক্রির নামে হাতিয়ে নিয়েছে ৫৭ কোটি চার লাখ ১৭ হাজার টাকা। এই এক হাজার ২০৭ জনকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এই দুটি পর্যায়ে গ্রাহকের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে শতকোটি টাকা।
প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান যুগ্ম সচিব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। সেবার নামে প্রকল্পের বাসিন্দাদের কাছ থেকে আদায় করা লাখ লাখ টাকা ইচ্ছামতো খরচ করা হচ্ছে। আলাদা রেজিস্টারে অর্থ আদায় খরচের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়নি।’ তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম শৃঙ্খলার মধ্যে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে বিআরপি চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম সমকালকে বলেন, ‘নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ফ্ল্যাট বিক্রির কথা সঠিক নয়।’ তিনি জানান, চুক্তি বাতিলের পর প্রচুর পরিমাণে নির্মাণসামগ্রী প্রকল্পের গোডাউনে রেখে এসেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ওই প্রকল্পটি এখন মৃত। সরকার চাইলে আলোচনার মাধ্যমে মৃত প্রকল্পকে আবারও জীবিত করতে পারে।’
এনএসপিডিএলের ধোঁকা: এনএসপিডিএল চুক্তি ভঙ্গ করে প্রসপেক্টাস ছাপিয়ে প্রকল্পের ভেতরে বিআরপি শপিং সেন্টার ও বিআরপি হাসপাতালে বিনিয়োগের নামে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কমপক্ষে একশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রসপেক্টাসে ১৫ তলা বিশিষ্ট ছয় লাখ বর্গফুটের অত্যাধুনিক শপিং সেন্টার ও ১৫ তলা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। শপিং সেন্টার ও হাসপাতালের প্রতি বর্গফুটের মূল্য দশ হাজার ধরা হয়েছিল। এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্য ছাড়ের ঘোষণাও ছিল।
এ প্রসঙ্গে বিআরপি চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম সমকালকে বলেন, ‘এ প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হয়েছিল। চুক্তি বাতিল না হলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করা যেত।’
সেবার নামে চাঁদাবাজি ও লুটপাট: ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি অসাধু চক্র সেবার নামে নানা খাতের উল্লেখ করে ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ২২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আদায় করে। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দুই বছর ৯ মাসে আদায় করা হয়েছে সাত কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩৮ টাকা। এর মধ্যে খরচ দেখানো হয়েছে সাত কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬৩ টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, খরচের অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানা হয়নি। সব খরচের হিসাব ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাট মালিকরা জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ওই আট ভবনের চুনকামের খরচ ও চাবি হস্তান্তর বাবদ এ-টাইপ চার ভবনের ৫৭৬ ফ্ল্যাট মালিকের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। একই খরচের নামে বি-টাইপ চার ভবনের ৩৮৪ মালিকদের কাছ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। সততা এন্টারপ্রাইজসহ তিনটি ঠিকাদারি কোম্পানির মাধ্যমে নিম্ন মানের চুনকাম ও ফিটিংসের কাজ করিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
লুটপাট চক্রের সদস্যের ঔদ্ধত্য: অসাধু চক্রটির স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি নিরাপত্তা কর্মী উত্তম কুমার ঘোষ ফ্ল্যাট মালিক আবদুল্লা রোহানিকে গালিগালাজ করে। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ফ্ল্যাট মালিকের অভিযোগ, নামাজের সময় প্রকল্পের মসজিদে প্রবেশ করে মুসলি্লদের সামনেই ধ্বস্তাধ্বস্তি করে রোহানিকে টেনেহিঁচড়ে মসজিদ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ ব্যাপারে উত্তম কুমার সমকালকে জানান, ফ্ল্যাট মালিক আব্দুল্লা রোহানির সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। তবে তা মসজিদের বাইরে হয়েছে। তিনি তাকে অপমানও করেননি।
তবে প্রকল্পের বাসিন্দারা বলছেন, নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বাধীন এই চক্রের ভয়ে তারা তটস্থ থাকেন। কেউ কথা বললেই গ্যাস-বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই চক্রের সদস্যরা হলেন, মো. তৌপিন হাসান, মিজানুর রহমান শেলী, মো. শামসুজ্জামান, শাহ আলম ও কামরুল ইসলাম। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া না হলেও প্রকল্পে তাদের জন্য আলাদা অফিস নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে অস্বাভাবিক খরচ: তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত দুই বছর ৯ মাসে বিদ্যুৎ লাইন মেরামত বাবদ ১১ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৬ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ লাইন মেরামতের দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডেসকোর। বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ডেসকোর মেরামত করার কথা থাকলেও একই সময়ে এ খাতে খরচ দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৭১ হাজার ৪৮৫ টাকা। এই সময়ে বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার সার্ভিসিংয়ে এক লাখ ১৭ হাজার তিনশ’ টাকা খরচ দেখানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো ভাউচার সংরক্ষণ করা হয়নি। এই পৌনে তিন বছরে ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে পানির বিল বাবদ এক কোটি ৩৬ লাখ ৭০ হাজার ১৭৯ টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ প্রকল্পের নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপন করা ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ওয়াসার কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্ত প্রতিবেদন মতে, পানির বিল বাবদ আদায় করা ওই টাকা পরিশোধের কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পানির লাইন মেরামত বাবদ ১১ লাখ ২৫ হাজার সাত টাকা আদায় করে প্রতি মাসে যে পরিমাণ মেরামত খরচ দেখানো হয়েছে তাও অস্বাভাবিক।
উল্লেখিত পৌনে তিন বছরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাতে ১৪ লাখ চার হাজার ৯২৮ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। যা অস্বাভাবিক। ওই সময়ে মসজিদ উন্নয়নে ৪৫ হাজার, গাড়ি মেরামতে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫২২, টাইলস ক্রয় ও মজুরি বাবদ তিন লাখ ৯৮ হাজার ২২০, অফিস মেরামত ও রঙের কাজ বাবদ ৯৫ হাজার ২৩৫, অফিসের ছাদ মেরামত বাবদ ১২ হাজার ৭১২ টাকাসহ মোট পাঁচ লাখ ছয় হাজার ১৬৭ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন খাতে এ রকম অবিশ্বাস্য খরচ দেখানো হয়েছে। এসব খরচকে অস্বাভাবিক মনে করে তদন্ত কমিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই পৌনে তিন বছরের আগে ২০০৮-২০১২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সেবার নামে আরও ৮-৯ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।
এনএসপিডিএলের নির্মাণসামগ্রী বিক্রি: চুক্তি বাতিলের পর এনএসপিডিএল প্রচুর পরিমাণ নির্মাণসামগ্রী প্রকল্পের গোডাউনে রেখে যায়। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলীর ছত্রছায়ায় একটি চক্র কম-বেশি অর্ধকোটি টাকার এই নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছে। সেবার নামেও আদায় করা হয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ।
তবে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সমকালকে জানান, এনএসপিডিএল প্রকল্প ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের রেখে যাওয়া মালপত্র কাউকে বুঝিয়ে দিয়ে যায়নি। তাদের মালপত্র কে বা কারা বিক্রি করেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাট মালিকদের সেবা দিতে প্রতি মাসে যে ২১-২২ লাখ টাকা আদায় হয়, তার পুরোটাই খাতভিত্তিক খরচ হয়। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। ফ্ল্যাট বিক্রিতেও কোনো দুর্নীতি হয়নি।’ তবে অবিক্রীত ফ্ল্যাট নিয়ে প্রতারণা-জালিয়াতি হতে পারে বলে স্বীকার করেন তিনি। প্রকল্পের জমি দখল করে মাটি ভরাট ও টিনশেড ঘর নির্মাণের বিষয়ে তিনি অবগত বলে জানান।
প্রকল্পের সার্বিক চিত্র: ৪৭.৯০ একর জমির ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পে মোট ১১১টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির পর ২০১০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাত বছরে এনএসপিডিএল নির্মাণ করে ১৮টি ভবন। ২০১০ সালের শেষ দিকে ভূমি মন্ত্রণালয় চুক্তি বাতিল করে। ওই সময় এনএসপিডিএল আরও ১২টি ভবনের ৭০-৯০ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ করেছিল। সর্বমোট ১১১ ভবনের মধ্যে বাকি ৮১ ভবনের বেশির ভাগেরই পাইলিং ও ভিত্তি স্থাপনের কাজ শেষ করে এক তলা পর্যন্ত পিলার নির্মাণ করা হয়েছিল। আবার কোনোটার একতলা, দোতলা পর্যন্ত ছাদও নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণাধীন ওই ভবনগুলো রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্মিত ওই ১৮ ভবনের মধ্যে এনএসপিডিএল কর্তৃক ১০টি ভবনের এ-টাইপ, বি-টাইপের মোট এক হাজার ৫৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৯৮৪টি ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়েছে। এই দশ ভবনের ‘এ’ ও ‘বি’ টাইপের আরও ৭২টি ফ্ল্যাট বিক্রির আগেই ২০১০ সালের অক্টোবরে নির্মাণ চুক্তি বাতিল হয়। কোম্পানি প্রকল্প ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আট ভবনে চুনকাম, বাথরুম ফিটিংস ও গ্যাস, বিদ্যুৎ লাইনের কাজ শেষ করে এ ও বি টাইপের মোট ৯৬০টি ফ্ল্যাট বিক্রি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। এই ৯৬০ টি ফ্ল্যাট বিক্রি সময় ওই দশ ভবনের ৭২টি ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়নি। এসব ফ্ল্যাটের বেশ কয়েকটি নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বাধীন চক্রের সদস্যরা নানাজনের কাছে ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘প্রকল্পটি রক্ষার দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়েছে তারাই প্রকল্পটি ধ্বংস করছে। একটি চক্র এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে ওই চক্রের সদস্যদের অপসারণ করে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে।’