অর্ধেক গ্রাহক মোবাইল নেটওয়ার্কে বিরক্ত মাত্র ২.৩ ভাগ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবায় সন্তুষ্ট টেলিকম খাতে নৈরাজ্য-শেষ পর্ব

0
190
Print Friendly, PDF & Email

দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অর্ধেকই নেটওয়ার্কে বিরক্ত। কল কেটে যাওয়া, বারবার চেষ্টা করেও লাইন না পাওয়াসহ নানা অভিযোগ তাদের। পাশাপাশি ইন্টারনেট সার্ভিসে সন্তুষ্ট মাত্র ২ দশমিক ৩ জন গ্রাহক। আর শতকরা ৩০ ভাগ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবায় কোনোভাবেই সন্তুষ্ট না। ইন্টারনেটের গতি ও মাঝে মধ্যে লাইন ড্রপ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ খুবই বিরক্ত। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা নিয়ে সর্বশেষ এক জরিপে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। প্রায় এক হাজার সাধারণ গ্রাহকের উপর এই জরিপ পরিচালিত হয়।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাজান মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘গ্রাহকের অভিযোগ নিয়ে আমরা সব সময়ই সচেষ্ট। এ কারণেই সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ শোনার জন্য গণশুনানির আয়োজন করেছি। আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে যে অভিযোগ পাই সেটার ব্যাপারে তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নেই। গণশুনানির পর চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ আইসিটি সাংবাদিক ফোরাম ও এক্সপো মার্কেট যৌথভাবে জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে ৯০০ জন সাধারণ গ্রাহকের সঙ্গে তাদের কথা হয়। এই গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতেই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

গত বছরের শেষ দিকে এই জরিপটি পরিচালিত হয়েছে। এরপর আর এমন কোনো জরিপ পরিচালিত হয়নি। ওই জরিপে দেখা গেছে, ‘মাত্র ২.৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট সেবায় সন্তুষ্ট। আর ১০.৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন ইন্টারনেটের যে গতি বা সেবা তা মোটামুটি চলে। আর ৫৭ ভাগ বলেছে খারাপ না। আর ২৯.৮ শতাংশ মানুষ বলেছে ইন্টারনেট সেবায় তারা মহা বিরক্ত। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ৬ কোটি ৩২ লাখ।

জরিপে দেখা গেছে, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান নেটওয়ার্কে ৪৬.২৫ ভাগ মানুষ খুবই বিরক্ত। আর ৯.২ ভাগ মনে করে মাঝে মধ্যেই নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১২ ভাগ মনে করে নেটওয়ার্ক কখন বিচ্ছিন্ন হবে কেউ বলতে পারে না। এই নেটওয়ার্কের ওপর কারো হাত নেই। আর ৩২.৬ ভাগ মানুষ বলেছেন প্রায় সময়ই নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মোবাইল কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক খুবই খারাপ বলে মনে করেন অর্ধেক মানুষ।

সারাদেশে ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটরের ৪০ হাজার ৭০০টি টাওয়ার রয়েছে। অপারেটরদের দাবি, তারা সারা দেশেই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে পেরেছেন। এবং সব জেলা শহরেই তাদের থ্রিজি সেবা পৌঁছে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ঢাকা শহরের বাইরে গেলেই থ্রিজির কোনো নেটওয়ার্কই পাওয়া যায় না। এমনকি ঢাকা শহরের মধ্যেই থ্রিজি নেটওয়ার্ক মাঝে মধ্যেই চলে যায়। রাজধানীর বাইরে ইন্টারনেটের গতি একেবারেই কম। সাম্প্রতিককালে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক খুবই খারাপ হয়ে গেছে। রাজধানীতেই ঠিকমতো কথা বলা যায় না।

মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, থ্রিজির যুগে প্রবেশের পর ইন্টারনেটে গতি বেড়েছে কয়েকগুণ। মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইন্টারনেট হচ্ছে সভ্যতার মেরুদণ্ড। তাই ইন্টারনেট ছাড়া সভ্যতা কল্পনা করাও কঠিন। ফলে জনগণ যে টাকা দিচ্ছে তার যেন সঠিক সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সংখ্যায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের গ্রাহক বিরাট। কিন্তু তারা একটি ব্যাংকের কর্পোরেট অফিসে কানেকশন দেন। সেখানে অন্তত ১ হাজার পিসিতে সংযোগ দিতে হয়। সেখানে কী পরিমাণ ডেটা ব্যবহার হয়? এখনও মূলত মানুষ ডেটা ব্যবহার করে ব্রড ব্যান্ডের লাইন থেকেই। মোবাইল অপারেটরদের সমালোচনা করে তারা বলেন, ‘নানা ছলে-বলে ওরা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে। এরপর থেকে শুধু বিল কাটতেই থাকে।’

শেয়ার করুন