শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ভয়ডরহীন ইংল্যান্ড ও সহজাত উইন্ডিজ

0
678
Print Friendly, PDF & Email

প্রধান নির্বাচক হিসেবে দলের সঙ্গেই আছেন ক্লাইভ লয়েড। উত্তরসূরিদের নিশ্চয়ই শোনাচ্ছেন প্রায় তিন যুগ আগের সেই ফাইনালের গল্প। ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড ফাইনাল’ বললেই তো সবার চোখে ভাসার কথা ১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল।

RELATED STORIES
উইন্ডিজকে হারাতে পারে কেবল গেইল-স্যামিরাই!
‘শর্ট অব ব্রেইন’ তকমাই স্যামিদের চালিকাশক্তি!
আবার গোলিয়াথ বধ করতে চান স্যামি
স্বপ্নের ফাইনালের আগে উড়ছে ইংল্যান্ড
সিমন্সের সাফল্যের রহস্য ঘুম!
ভিভ রিচার্ডসের সেই অনন্য সাধারণ ইনিংস, শেষ বলে মাইক হেনড্রিককে কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া শটে ছক্কা, শতরানের উদ্বোধনী জুটির পর ইংল্যান্ডের হুড়মুড় করে ভেঙে পড়া, বিগবার্ড জোয়েল গার্নারের বিষাক্ত সব ইয়র্কার, ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে লয়েডের হাতে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ট্রফি। সেই ফাইনালের প্রায় ৩৭ বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

নতুন মোড়কে মঞ্চায়নের অপেক্ষায় ক্রিকেটের বহু পুরোনো এক দ্বৈরথ। রোববার কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেবারের সেই ফাইনালে হারের অভিশাপ দীর্ঘদিন পিছু ছাড়েনি ইংল্যান্ডের। অধরাই ছিল একটি বৈশ্বিক শিরোপা। ২০০৪ সালে আরেকটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছিল এই দু দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে আবারও নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছিল ইংল্যান্ড। দ্বৈরথের রোমাঞ্চে এবার নতুন আখ্যান যোগ হওয়ার অপেক্ষা।

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপের শাপ কেটেছে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্ব শিরোপা। নবতম সংস্করণেই এবার সুযোগ আরেকটি ট্রফির।

ইডেন গার্ডেনসের সঙ্গেও কিছ বোঝাপড়া বাকি আছে ইংল্যান্ডের। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে এই মাঠেই পাগলাটে এক রিভার্স সুইপ খেলে আউট হয়ে মাইক গ্যাটিং জমিয়েছিলেন আজীবনের আক্ষেপ। শিরোপার সুবাস পেয়েও হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই আক্ষেপ হয়ত ঘুচবে না। তবে এবার জিতলে ইডেনের সেই দু:স্বপ্নের কালো আড়াল হবে হয়ত সাফল্যের রঙে।
লয়েডের মতো টানা দুবার না হোক, ৪ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার হাতছানি ড্যারেন স্যামির সামনে। একটু ব্যাটিং আর একটু বোলিং মিলিয়ে স্যামি নিজে যেমন মূলত টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটার, তার দলও তেমনি খুব মানিয়ে যায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টির উৎসব, রঙ, বুনো আর খ্যাপাটে ব্যপারটি তারা হৃদয়ে ধারণ করে। একসময় ক্যালিপসো সুরে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করা দলটির দাপট আজ শুধু টি-টোয়েন্টিতেই। সেটির আরেকটি প্রমাণ এবারের বিশ্বকাপ।

নিজেদের সহজাত ঘরানার ক্রিকেট খেলেই ফাইনালে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যথারীতি বিস্ফোরক ব্যাটিং দলের ইঞ্জিন রুম। ব্যাটিং গভীরতাও দারুণ। ওপেনিংয়ে ক্রিস গেইল থেকে শুরু করে নয় নম্বরে কার্লোস ব্র্যাথওয়েট পর্যন্ত একাই জেতাতে পারেন ম্যাচ। বোলিং বিধ্বংসী নয়, তবে কার্যকরী। প্রথম ম্যাচের পর কোনো স্পেশালিস্ট পেসার খেলায়নি তারা, কিন্তু একাদশে পেস বোলিং অলরাউন্ডার চার জন! সঙ্গে দারুণ কিপটে দুজন স্পিনার। চোখধাঁধানো ফিল্ডিং। অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দারুণ রেসিপি!

তবে নিজস্ব রেসিপিতে দারুণ সফল ইংল্যান্ডও। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের আর সব দল থেকেই আলাদা এই ইংল্যান্ড। প্রথাগত ইংলিশ ঘরানাকে ঝেরে ফেলে ভয়ডরহীন, চিত্তাকর্ষক, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার দু:সাহসী পথ বেছে নিয়েছে ওয়েন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড। শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে দিয়ে, টি-টোয়েন্টিতেও সেটি ধরে রেখে তারা বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে।

মর্গ্যানের দলেরও সবচেয়ে বড় শক্তি ব্যাটিং। ক্যারিবিয়ানদের মতোই গভীরতা অনেক। মইন আলি, আদিল রশিদ পর্যন্ত ব্যাট হাতে জেতাতে পারেন ম্যাচ। বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানে ঠাসা ব্যাটিং লাইন আপকে এক সুতোয় গেঁথে রাখেন জো রুট। সময়ের দাবি মেনে যিনি কখনও প্রান্ত বদল করে আগলে রাখেন উইকেট, কখনও তোলেন ঝড়।

রোববারের ফাইনাল তাই সহজাত ক্যারিবিয়ান শক্তির সঙ্গে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডের লড়াই। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচেও মুখোমুখি হয়েছিল এই দু’দল। ক্রিস গেইলের খুনে সেঞ্চুরিতে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে পরের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার ২২৯ রান তাড়া করে চমকে দিয়েছে ইংল্যান্ড। জিতেছে টানা চার ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোঁচট খেয়েছিল আফগানিস্তানের কাছে হেরে। তবে সেমি-ফাইনালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দারুণ জয়ে টগবগ করে ফুটছে তারাও।

অনেক ধ্রুপদি লড়াইয়ের ঐতিহাসিক মঞ্চে তাই আরেকটি রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের উপলক্ষ প্রস্তুত। ভারত নেই বলে স্বাগতিক দর্শকদের আবেগ-উত্তেজনা হয়ত বাঁধনহারা হবে না। তবে বিশ্বকাপ ফাইনাল বলে কথা, ইডেনের গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকার কথা নয়।

উড়ালসড়ক ট্র্যাজেডিতে শোকাহত কলকাতাবাসীদের শোকও হয়ত ক্ষণিকের জন্য ভুলিয়ে দিতে পারে ক্রিকেট মাঠের একটি জমজমাট লড়াই!

শেয়ার করুন