ক্ষমতাসীনদের দাপট, ভয়ভীতি আর বিচ্ছিন্ন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের শ্বশুরবাড়ি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ। বিকেল চারটায় ভোট শেষে এখন চলছে গণনা।
এদিকে, সরেজমিনে মদনখালি ইউনিয়নের জাফরপাড়া ভোটকেকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সিল মেরে নিতে দেখা গেছে। পাশাপাশি আনসার ও ভিডিপির পোশাক পরে ভোটকেন্দ্রে মহড়া দিয়েছেন ছাত্রলীগকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পীরগঞ্জের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও ভোট কারচুপি আর সংঘাতের শঙ্কা ছিলো সাধারণ ভোটারসহ অন্যদলের প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের চোখে মুখে।
পীরগঞ্জের মদনখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন এক চিত্র। আনসার ও ভিডিপি প্রতিরক্ষা বাহিনী লেখা বেশ কয়েকটি ইউনিফর্ম পরে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
আনসার-ভিডিপির ইউনিফর্ম পরে ওই কেন্দ্রে লাঠি হাতে দাঁড়িয়েছিলেন লিটন মিয়া নামে এক ছাত্রলীগকর্মী। তার পরিচয় জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের কর্মী পীরগঞ্জ শাহ আব্দুর রউফ কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়ি। পীরগঞ্জ আনসার ভিডিপি অফিস থেকে আমাদের এই ইউনিফর্ম দেয়া হয়েছে। আনসারের কোনো নাম নম্বর ও সনদ নেই তাদের। কতো টাকা ভাতা পাবেন তাও জানেন না। জানেন না উপজেলা আনসার কমান্ডারের নাম ও কিংবা ইউনিট প্রধানের নাম।
একই কথা বললো একই ইউনিফর্ম পরা ছড়ান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি দেয়া শাহান আলী। সে বলে, দুই দিনের জন্য আছি। লিডারের নির্দেশ। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হয় নি শাহান আলী।
তবে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ভিডিবি পোশাকধারী ছাত্রলীগকর্মীরা চমকে ওঠে। পাশেই আওয়ামী লীগকর্মীদের দেখা যায় তাদের আর ইনফরমেশন না দিতে নির্দেশ দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো পীরগঞ্জেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা আনসার-ভিডিপির ইউনিফর্ম পরে ডিউটি করছে।
এদিকে, মদনখালি ইউনিয়নের জাফরপাড়া দারুল উলুম কামিল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রের ২ নং বুথে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট জেসমিন বেগম গোপন কক্ষে গিয়ে সব ভোটারের ভোট নিজেই দিচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই কেন্দ্রে বিএনপির সকল এজেন্টকে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারা নিয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডলের সাথে বুথের ভেতরে গোলযোগ হয় আওয়ামী লীগ এজেন্টদের সাথে।
পরে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল অভিযোগ করেন, ‘এটা তামাশার নির্বাচন, আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হচ্ছে। প্রশাসনকে বার বার বলার পরও তারা কোনো অ্যাকশন নিচ্ছে না। তারা কেন্দ্রের বাইরে আছে’।
এদিকে সিল মেরে ভোট নেয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এজেন্ট জেসমিন বেগম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘যদি ভোটারদের আপত্তি না থাকে তবে আপনাদের সমস্যা কোথায়?’
এই বুথের পোলিং অফিসার সেকেন্দার আলী বলেন, আমার করার কিছুই নেই। এ ঘটনার পর সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে সেখানে আসেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-বি সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রিয় সিন্ধু তালুকদারের নেতৃত্বে মোবাইল টিম। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তারা চলে যাওয়ার পর আবারও সিল মারতে থাকে সরকার দলীয় সমর্থকরা।
পীরগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে ১০৭ টি কেন্দ্রের ৬৪৩ টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এখানে ভোটার আছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৩ জন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫৩ জন, মহিলা সদস্য পদে ১৩৭ জন এবং সদস্য পদে ৪৪১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।