ব্যাট হাতে দারুণ পরিণত এক ইনিংস খেললেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গোছানো বোলিং আর ক্ষুরধার ফিল্ডিংয়ে মাঝারি সংগ্রহই প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে উঠল দুরূহ। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩ রানে হারিয়ে দুর্দান্তভাবে শুরু হলো বাংলাদেশের যুবাদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ অভিযান।
শান্তর ৭৩ রানের ইনিংসে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় কখনোই সেভাবে জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এক প্রান্ত আগলে রেখে দারুণ এক শতক করেছেন ওপেনার লিয়াম স্মিথ। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা গুটিয়ে গেছে ১৯৭ রানে।
প্রথম ইনিংসেই উইকেটে বেশ গ্রিপ করেছে বল, ব্যাটে বল এসেছে খানিকটা থেমে। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, এই উইকেটে ২৪০ রান তাড়া করা কঠিন হবে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের জন্য। হয়েছেও সেটিই। স্মিথ ছাড়া স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেননি কেউ।
নতুন বল হাতে নিয়ে দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন কাইল ভেরেইনকে (৫)। প্রথম পরিবর্তিত বোলার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জোড়া ধাক্কায় নাড়িয়ে দেন প্রোটিয়াদের। দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন ভিযান মুল্ডারকে (৮), অধিনায়ক টনি ডি জর্সি বোল্ড হন ইয়র্কার ঠিকমত ব্লক করতে না পেরে।
স্পিনাররা আক্রমণে এসে এরপর আরও চেপে ধরেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের। থমকে যায় রানের গতি। পঞ্চম উইকেটে ডায়ান গালিমকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন স্মিথ। তিক্ষ্ম টার্ন ও বাউন্সে গালিমকে (২২) বোল্ড করে ৫২ রানের এই জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার সাঈদ সরকার।
স্মিথ এক প্রান্ত থেকে চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু রান-বলের টানাপোড়েনের সঙ্গে পেরে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত। ১৪৫ বলে শতক ছোঁয়ার পরের বলে অধিনায়ক মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরে গেছেন স্মিথও। চ্যাম্পিয়নরা করতে পারেনি দুইশও।
৩টি করে উইকেট নিয়েছেন অধিনায়ক মিরাজ ও পেসার সাইফুদ্দিন। দুটি করে দুই স্পিনার সাঈদ ও সালেহ আহমেদ শাওন।
এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসটা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এক ঘোড়ার রথ ছিল না বটে, তবে শান্তর ইনিংসটিই ছিল দলের মেরুদন্ড। টপ অর্ডারে রান পেয়েছেন পিনাক ঘোষ ও জয়রাজ শেখ। তবে দারুণ শুরুর পরও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি এই দুজন। পরে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নিয়ে গেছেন শান্ত।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল সাবধানী। সকাল নয় টায় শুরু ম্যাচ, উইকেট ছিল খানিকটা আর্দ্র। পেসার গালিমের সঙ্গে আরেক প্রান্তে অফ স্পিনার লুক ফিল্যান্ডারকে দিয়ে বোলিং শুরু করে প্রোটিয়ারা। প্রথম ৩ ওভারই মেডেন খেলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও পিনাক।
ফিল্যান্ডারকে টানা দুটি চার মেরে অস্বস্তির শেকল ভাঙেন পিনাক। তবে সাইফ গতি দিতে পারেননি নিজের ইনিংসটাকে। ৩১ বলে ৬ করে আউট হয়েছেন ডাউন দ্য উইকেটে খেলে।
পিনাক ও জয়রাজ খেলেছেন চোখধাঁধানো কিছু শট। মুল্ডারের শর্ট বলে দুর্দান্ত দুটি পুল শটে ছক্কা মেরেছেন পিনাক। দ্বিতীয় ছক্কায় বল পাঠিয়েছেন গ্যালারিতে! জয়রাজ খেলেছেন দারুণ কিছু ফ্লিক ও ড্রাইভ। তবে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে দুজনের বোঝাপড়ার অভাব ফুটে উঠেছে বেশ কবারই। শেষ পর্যন্ত সেটিরই বলি পিনাক, রান আউট হয়েছেন ৪৩ রানে।
জয়রাজের আউটে অবশ্য বোলারের কৃতিত্বই বেশি। বাঁহাতি স্পিনার শন হোয়াইটহেডকে সুইপে ছক্কা মেরেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ওই ওভারেই টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া দারুণ এক ফ্লাইটেড বলে কটবিহাইন্ড জয়রাজ (৪৬)।
হঠাৎই নড়বড়ে বাংলাদেশের ইনিংসটাকে থিতু করেছে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের জুটি। চতুর্থ উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েছেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক টনি ডি জর্সিকে উইকেট দিয়ে অধিনায়ক মিরাজ ফিরেছেন ২৩ রানে। জাকির (১৯), সাইফুদ্দিনরা (১৭*) প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি শেষ দিকে।
তবে আরেক পাশ থেকে দলের রান বাড়িয়েছেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত রান বাড়ানোর চেষ্টায়ই আউট হয়েছেন ৭৩ রানে। ৮২ বলের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছক্কা।
বাংলাদেশের রান হতে পারত আরও বেশি, যদি সিঙ্গেল নেওয়ায় আরও মনোযোগী হতেন ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসজুড়ে সিঙ্গেল আরও বেশি নিতে না পারার দায় দেওয়া যায় বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানকেই। তবে দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন সবাই।
বাংলাদেশের শিরোপা স্বপ্নের অভিযান শুরু তাই জয়ের হাসিতেই।