রিয়ালের অগি্নপরীক্ষা

0
192
Print Friendly, PDF & Email

প্রায় ত্রিশ বছর ধরে যন্ত্রণাটা বয়ে বেড়াচ্ছে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথম লেগে ইতালিয়ান কোনো দলের বিপক্ষে জিতলেও দ্বিতীয় লেগে আর পারে না। সর্বশেষ ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ইউরোপসেরার লড়াইয়ে ন্যাপোলির বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে ১-১ গোলে ড্র করেছিল লস ব্লাঙ্কোসরা। অথচ প্রথম লেগে রিয়াল ২-০ গোলে জিতেছিল; কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে তুরিনে জুভেন্তাসের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় কার্লো অ্যানচেলত্তির দল। এবার পরিসংখ্যান উল্টে গেছে। যে কারণেই ভয় রিয়াল সমর্থকদের। কারণ নকআউট পর্বের দ্বিতীয় লেগে ইতালিয়ান জুজু কাটাতে পারে না দশবারের ইউরোপসেরারা। তাই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে জুভেন্তাসের বিপক্ষে আজ রিয়ালের মাস্ট উইন ম্যাচে বাধা ইতিহাস। ২৮ বছরের অভিশপ্ত পরিসংখ্যান। এটাই যেন ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্তাসের জন্য আশীর্বাদ। তাই পুরনো রক্ষণাত্মক কৌশলে না হেঁটে এবার আক্রমণাত্মক খেলেই রিয়ালের মাঠে জয় পেতে চায় আজ্জুরিরা।
প্রথম লেগে ২-১ গোলে হারলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি রিয়াল মাদ্রিদের। আজ ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জিতলে দুই লেগ মিলিয়ে দু’দলের গোলের সমীকরণ হবে ২-২। কিন্তু তুরিনে এক গোল করায় অ্যাওয়ে গোলের সুবিধায় রিয়াল মাদ্রিদ চলে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে। আর কোনোক্রমে যদি জুভেন্তাস আগে গোল দেয়, তাহলে বার্লিনে ফাইনালে খেলতে হলে রিয়ালকে জিততে হবে ৩-১ গোলে। রিয়াল যদি ২-১ গোলে জেতে, তাহলে ম্যাচটা গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে কোনো দল গোল না করলে শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হবে।
ইতিহাস বা পরিসংখ্যান যা-ই বলা হোক না কেন, ঘরের মাঠে নব্বই হাজার দর্শকের সামনে রিয়াল তারকাদের দ্যুতি ছড়াতেই হবে। তুরিনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো-হামেশ রদ্রিগেজরা ফুল হয়ে ফুটতে পারেননি। এবার বার্নাব্যুতে কঠিন পরীক্ষায় সেরাটাই মেলে ধরতে হবে। তবে রিয়াল সমর্থকদের জন্য সুখবর, ইনজুরি কাটিয়ে এ ম্যাচে ফিরেছেন ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা। তাই আক্রমণভাগটা আরও শক্তিশালী হলো অ্যানচেলত্তির দলের। বেল-বেনজেমা-ক্রিশ্চিয়ানো_ তিন বিবিএস জ্বলে উঠলে প্রতিপক্ষের সেরা রক্ষণভাগও দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তবে ইতালিয়ান দল বলেই রিয়ালের জন্য শঙ্কাটা বেশি। কারণ ২০০৩ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখা জুভেন্তাস নিজেদের সব শক্তি প্রয়োগ করবে। রিয়ালকে রোখার জন্য সব অস্ত্রও তৈরি আজ্জুরিদের। তবে এবার রক্ষণাত্মক নয়, আক্রমণাত্মক খেলেই রিয়াল জয় করবে জুভেন্তাস_ এমনই স্বপ্ন দলটির রক্ষণভাগের অন্যতম সৈনিক জর্জিওস চিয়েলি্লনি, ‘আমাদের অবশ্যই গোল করতে হবে। কারণ মাদ্রিদের মতো সেরা আক্রমণভাগের দলকে রোখাটা সহজ হবে না। আমাদের স্পিরিট অনেক উঁচুতে এবং বিশ্রাম নিয়েই একটি সপ্তাহ কাটিয়েছি আমরা। এরই মধ্যে স্কুডেট্রো জিতেছি। এ ম্যাচের জন্য আমরা তৈরি এবং বুধবারের সন্ধ্যার (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪৫ মিনিট) জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’
সময়টা ভালো যাচ্ছে না রিয়াল মাদ্রিদের। বার্নাব্যুতে ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে স্প্যানিশ লা লীগার শিরোপার স্বপ্নটা অনেকটা শেষই হয়ে গেছে কার্লো অ্যানচেলত্তির দলের। এ মৌসুমে ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকেই। কিন্তু প্রথম লেগে জুভেন্তাসের কাছে ২-১ গোলের হার; সমীকরণটাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে অনেক চাপে আছেন রিয়াল তারকা। তবে যত চাপই থাকুক না কেন, জুভদের বিপক্ষে ঠিকই জয় ছিনিয়ে নেবে রিয়াল_ এমনটাই বিশ্বাস দলের প্লে-মেকার হামেশ রদ্রিগেজের, ‘আমরা কাউকে ভয় পাই না। আমরা বিশ্বের সব দলকেই সম্মান করি। এটাও জানি, সেরা রক্ষণভাগ হিসেবে ইতালিয়ান দলের অবস্থা অনেক ভালো। তাদের রক্ষণভাগকে ভাঙতে হলে আমাদের সেরাটাই মেলে ধরতে হবে। আমাদের গোল করতে হবে এবং সেটা করতে পারলে বার্লিনে ফাইনালে খেলতে পারব আমরা।’
আজকের ম্যাচে দু’দলেরই শক্তি বেড়েছে। চোট কাটিয়ে জুভেন্তাস দলে ফিরেছেন পল পগবা। একই সঙ্গে এ ম্যাচে খেলতে পারেন বারজাগলি। তবে শক্তি বেশি বেড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের। ফরাসি তারকা বেনজেমার সঙ্গে ফিরছেন জার্মান তারকা টনি ক্রুস। আক্রমণভাগের সঙ্গে মধ্যমাঠও অনেক শক্তিশালী রিয়ালের। রক্ষণে জুভেন্তাস এগিয়ে; তবে আসল লড়াইটা হবে দু’দলের আক্রমণভাগে। কারণ তেভেজ-পগবা-মোরাত্তা; জুভদের তিন আক্রমণভাগের তারকা বর্তমানে দারুণ ফর্মে আছেন। এই তিন তারকা জ্বলে উঠলে হারিয়ে যেতে পারেন রোনালদো-বেনজেমা-বেলরা। আর বারো বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠবে মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির দল। ফলে ভেঙে যাবে রিয়ালের এগারোতম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন।

শেয়ার করুন