পানি এলে ইলিশ যাবে মমতাকে প্রধানমন্ত্রী

0
96
Print Friendly, PDF & Email

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আরো বেশি করে পদ্মার ইলিশ পেতে চায়_ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন কথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদ্দেশে বলেছেন, পানি এলে ইলিশ যাবে।
শনিবার দুপুরে তার বাসভবন গণভবনে মমতা দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দুজনের দীর্ঘ সাক্ষাতে দুই বাংলার মধ্যকার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এসব আলোচনার মধ্যে অন্যতম ছিল তিস্তার পানিবণ্টন ও সীমান্ত চুক্তি। সাক্ষাৎকালে মমতাকে নৌকা উপহার দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যেন পর্যাপ্ত পানি থাকে, এ নৌকা যেন চলতে পারে।’
জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে তার ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। তবে সুযোগ নিয়ে তিনিও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ সরবরাহ কমে যাচ্ছে। পদ্মার ইলিশ আরো বেশি করে পেতে চায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।
তার এই কথার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পানি এলে ইলিশ যাবে।’
শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে। প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর দুজন একান্তে কথা বলেন প্রায় আধঘণ্টা। সেখানে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা না গেলেও প্রথম আলোচনায় অমর একুশে পালনের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানোয় মমতা প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি আপ্লুত, আমি ধন্য। মহান একুশের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই আমন্ত্রণ আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আশ্বাস দিয়ে বলেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া ভারতীয় সংসদের (লোকসভা) অধিবেশনে সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে তিনি সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন।
মমতা বলেন, ‘প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে অন্যতম অমীমাংসিত বিষয় হলো সীমান্ত চুক্তি। আমাদের পক্ষ থেকে এই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। আশা করি, আগামী ২৩ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া লোকসভার অধিবেশনেই এর সমাধান হয়ে যাবে। বিলটি লোকসভায় উত্থাপিত আছে, এখন পাস হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।’
তার এই আশ্বাস ও ভূমিকায় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পর্কে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশ আমারও দেশ। বাংলাদেশের স্বার্থকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। দুই দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখব।’
‘অনেকদিন কলকাতা যান না’_ শেখ হাসিনার উদ্দেশে এমন কথা বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাকে পশ্চিমবঙ্গ সফরের আমন্ত্রণ জানান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কলকাতায় যে চেয়ার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, সেই উপলক্ষে এবং কলকাতায় প্রস্তাবিত বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষেই এ সফর হতে পারে বলে মত দেন মমতা ব্যানার্জি। প্রধানমন্ত্রী এই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন, সুবিধামতো সময়ে তিনি অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ সফর করবেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলে বাংলাদেশিদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরলে মমতা বলেন, তিনি নিজেও ওই এলাকা ঘুরে দেখেছেন, দুর্ভোগ দেখেছেন। এই বিবেচনা থেকেই যত দ্রুত সম্ভব সীমান্ত চুক্তি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মত দেন দুই নেতা।
শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা মমতাকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসেন; তিনিও শেখ হাসিনাকে বড় বোনের মতো শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সম্পর্কের কারণেই আলোচনা ছিল আন্তরিকতায় ভরা।
মমতা ব্যানার্জি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, তখন তিনি ছোট ছিলেন; এবং সেই সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান নিয়মিত শুনতেন।
দুই বাংলার মধ্যে সুসম্পর্ক অটুট রাখতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যতকিছু দরকার করবেন বলে আশ্বাস দেন মমতা ব্যানার্জি।
দুই নেতার মধ্যে ব্যবসায়িক আদান-প্রদান, সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ওপরও আলোচনা হয়। একটি যৌথ কমিটি করে দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক উৎসব করার কথা বলেন মমতা ব্যানার্জি। প্রধানমন্ত্রী এতে সায় দেন।
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের জন্য জমি দেয়া হবে_ এমন সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নিয়ে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে আলোচনায় জানান মমতা। এছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের নামে পশ্চিমবঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথাও বলেন তিনি।
এই সফরের মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেই মনে করেন দুই নেতা। তাদের মতে, এই সম্পর্ক হবে দীর্ঘস্থায়ী।
আলোচনা ছাড়াও ছিল উপহার দেয়া-নেয়ার পালা। মমতা ব্যানার্জিকে একটি নৌকা উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নৌকা হাতে তুলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নৌকা চলার পানি যেন পাই।’ উত্তরে মমতা বলেন, পানি বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী পাবে। দুই দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখেই পানিবণ্টন হবে। এ ব্যাপারে তার ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে।
মমতা বলেন, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, পানির ব্যবস্থা হবে।’

শেয়ার করুন