রিমান্ডে নির্যাতন করে নাশকতায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ অভিযোগ করেন।
হরতাল অবরোধ বিরোধী ‘নাটকের’ মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা সরকারের নিরাপত্তা বেষ্টনীকেই দুর্বল করে দিতে পারে-এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার, বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সুশাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে দেশের সর্বস্তরের জনগণ আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। সংগ্রামী জনতার ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান গণআন্দোলন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।’
চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানান তিনি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টকারী অবৈধ সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে গদি রক্ষা করতে চায়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করাই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল। জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরুপে সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। অথচ সেই সংবিধানকে এক ব্যক্তির অভিব্যক্তি হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র থেকে প্রিয় মাতৃভুমিকে মুক্ত করার জন্য আজ সকল দেশপ্রেমিক জনগণ ঐক্যবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, চলমান গণআন্দোলনকে কলুষিত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পুলিশ রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে এবং তাদের মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে নাশকতার সঙ্গে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা জড়িত। পরিকল্পিতভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত ও দলকানা কতিপয় গণমাধ্যমে তা দিনরাত ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণের এজাতীয় আওয়ামী চক্রান্তের বিষয়ে আমরা ইতোপূর্বে অনেকবার আমাদের বক্তব্য প্রদান করেছি। আমরা আবারো অবৈধ সরকারের এজাতীয় ঘৃন্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের জনগণ এ ধরনের সরকারি চক্রান্ত ও অপপ্রচারে বিশ্বাস করে না, যেহেতু জনগণ প্রত্যক্ষ করছেন যে, বিরোধী দলীয় আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদেরকে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্রসফায়ারে হত্যা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আষাঢ়ে গল্প সাজাচ্ছে। অতএব, সরকারি বাহিনী এসব নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের দায় এড়াতে পারবে না।’
সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘সরকারি দলের দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা ও অন্যান্য অবৈধ অস্ত্রসস্ত্রসহ বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়লেও তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশ সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়মুক্তির গ্যারান্টি দিতে পারে না। সুতরাং অবৈধ ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যারা আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করবেন তার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে তাদের ওপরই বর্তাবে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে এও লক্ষ্য করছি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধ আবাসস্থলের কাছে সরকারপন্থি কিছু সংগঠন হরতাল-অবরোধবিরোধী নাটক মঞ্চস্থ করছে এবং দেশনেত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।’
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা শাসকশ্রেণীর নিরাপত্তা বেষ্টনীকেই বরং দুর্বল করে তুলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।