রংপুরে ‘বিপজ্জনক’ ১৩ এলাকায় নজর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

0
228
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ শুরুর পর রংপুর বিভাগের যেসব স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা মারার ঘটনা বেশি ঘটছে, সেসব এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।

 অবরোধের আগুনে বাসেই জীবন্ত দগ্ধ চারজন

এ ধরনের ১৩টি এলাকাকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করে নাশকতাকারীদের দমনে অভিযান শুরু হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।  

রংপুর রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হুমায়ুন কবীর বলেন, অবরোধ শুরুর পর থেকে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, রানীরবন্দর, কাহারোল, ঘোড়াঘাট, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকা, রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, গাইবান্ধার সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে যানবাহনে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।

“এসব এলাকা জামায়াত অধ্যুষিত। ২০ দলীয় জোট অবরোধ ও হরতাল আহ্বান করলেই এসব এলাকায় যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হামলা চালানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও।”

রংপুরে নাশকতা ঠেকাতে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান ডিআইজি হুমায়ুন কবীর।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রংপুর সেক্টরের উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চলের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহফুজুর রহমান জানান, রংপুর বিভাগের মহাসড়কের নিরাপত্তায় ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা রয়েছে।

এছাড়া দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ রাখতে নীলফামারীর সৈয়দপুর, রংপুরের মিঠাপুকুর, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জে বিজিবির চারটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান,  গত ৬ জানুয়ারি অবরোধ শুরুর পর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব এলাকায় অবরোধকারীদের পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন তিন শিশুসহ ১৫ জন। তাদের মধ্যে ১৩ জন বাসযাত্রী, একজন ট্রাকচালক এবং অন্যজন ট্রাকচালকের সহকারী।

নাশকতার এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৫ জন, যাদের ৪২ জনই পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছেন।

বিজিবি কর্মকর্তা মাহফুজ জানান, ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোয় ৬ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৮০টি যানবাহন ভাঙচুর, ৩৪টি বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমা মারা হয়।

অবরোধের আগুনে পোড়া ১৯ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে, গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালে দুই জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে একজন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

সবশেষ গত শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলসিঘাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বাসে ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে দুই শিশুসহ সাতজন নিহত এবং ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ১৯ জন, গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গত ১৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাতাসন ফতেপুর এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে বাসে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মারা যান এক শিশুসহ ছয়জন। আহত হন ৩০ জন। এদের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন দগ্ধ ছয়জন।

এছাড়া ২৪ জানুয়ারি রাতে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন ট্রাকচালক হামিদুল ইসলাম ও তার সহকারী আব্দুর রশীদ। পরে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান রশীদ। একই দিন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন ট্রাকচালক আনিসুর রহমান।

গত শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় বাসে পেট্রোল বোমায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের

গত শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় বাসে পেট্রোল বোমায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের
১৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমায় নিহত হন ছয়জন

১৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমায় নিহত হন ছয়জন
২১ জানুয়ারি রাতে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হন ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল মালেক। ২৬ জানুয়ারি রংপুর মেডিকেলে মারা যান মালেক। রফিকুল এখনও চিকিৎসাধীন।

১২ জানুয়ারি ঢাকা যাওয়ার পথে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পেট্রোল বোমা হামলায় আহত হন বাসযাত্রী আসাদুল (৩৫) ও স্বপন (৩৫)।

গত ৬ জানুয়ারি অবরোধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নাশকতার আগুনে পুড়ে অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বহু মানুষ।

শেয়ার করুন