বাগেরহাটে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সোনালী ধানের মাঠ। পুরো এলাকা এখন সোনালী ধানে মুখোরিত হয়ে আছে। এমন দৃশ্য এখন পুরো দক্ষিণাঞ্চলের ধান ক্ষেতগুলোতে। চলছে ধান কাটার মৌসুম। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অঞ্চলের ধান চাষীরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন এ অঞ্চলের ধান চাষীরা। এ অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকের নিজস্ব জমি নেই। তারা অন্যের জমিতে বর্গা চাষ অথবা জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করে থাকেন। দক্ষিণাঞ্চলের এসব জমিগুলোতে ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল ফলানোও অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ এসব জমি থেকে ধান ওঠার পরে অর্থাৎ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গরমের প্রচণ্ড উত্তাপে জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। যে সকল জমি সেচ কার্যের ফলেও কৃষিযোগ্য করা সম্ভব নয়। ফলে এখানকার কৃষকদের এ একটি ফসলের উপরই নির্ভর করতে হয়। তাই এ অঞ্চলের কৃষকদের সকল আশা-ভরসা এই একটি ফসলকেই কেন্দ্র করে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো দুর্যোগের মোকাবেলা করে থাকেন নদী-নালা বেষ্টিত এ অঞ্চলের মানুষ যেমন- বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ঘনবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি অথবা নদীভাঙ্গনে নষ্ট হয় ফসল। এ অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর তেমন কোন আবহাওয়ার দুর্যোগ না থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে এ বছর ধানের যে মূল্য তা দিয়ে উৎপাদন খরচও উঠবে না বলেও জানান তারা। বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার সন্ন্যাসী এলাকার ধানচাষী সুলতান শিকদার। তার চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ। শীর্ষ নিউজের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কৃষক সুলতানের কথা হয়। শীর্ষ নিউজকে তিনি বলেন, গত বছর ধানের ফলন তেমন একটা ভাল না হলেও ধানের দাম বেশি ছিল তাই আমরা কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর ফলন ভালো হলেও দাম কমায় লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানানা, এ বছর ৫ বিঘা ৫ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছেন। এ জমিতে ৬৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন এই কৃষক। যদিও গত বছর এই পরিমাণ জমিতে ৪৫ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে বলে জানান। স্থানীয় বাজারে এ বছর ধান বিক্রি হচ্ছে মন প্রতি ৬’শ টাকা করে। এ দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা বড় ধরনের লোকসানে পড়বে বলেও জানান এই অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষক রমজান আলী জানান, ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে সার, কীটনাশক, বীজ ধান, হাল চাষ এবং তা মাড়াই পর্যন্ত নিয়ে যেতে অন্যান্য খরচসহ প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তাই এই মুহূর্তে ধানের দাম না বাড়ালে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, এত কষ্টার্জিত উৎপাদনের পরেও আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না। কারণ আমারা যে ধান পাচ্ছি তার তিন ভাগের দুই ভাগই যাচ্ছে মহাজন বা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা ধান কিনে নিচ্ছেন অর্ধেক দামে। পুরনো সেই দিনের মতো দাদন ব্যবসার ফাঁদে পড়ে চাষীরা এখন বিপন্ন। ধান লাগানোর পর টাকার অভাবে জমিতে সার দিতে না পেরে তারা অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংকের নিকট দ্বারস্থ হয়েছিলেন কিন্তু ব্যাংকও তাদের বিমুখ করেছে। অবশেষে বাধ্য হয়ে ধরণা দিয়েছেন দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে কোন কোন কৃষক মণপ্রতি মাত্র সাড়ে তিনশ’ টাকা চুক্তিতে টাকা নিয়েছেন মহাজনের কাছ থেকে। তারপর আবাদ এবং অবশেষে বাম্পার ফলন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাদন ব্যবসায়ী বা মহাজনের খপ্পরে ধান চাষীরা থাকে বিপাকে।