ক্ষমতা চায় পুলিশ; কিন্তু ছাড়তে রাজি নয় দুদক। মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত নিয়ে অনেক দিন ধরেই এ পরিস্থিতি চলছে। দুই পক্ষের অনোমনীয় মনোভাবের কারণে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। উচ্চপর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠকও করা হয়েছে; কিন্তু তার পরও এর কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে এখন এটির সমাধানের ভার ছেড়ে দেয়া হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে। আইন মন্ত্রণালয় অনেকটা এককভাবে এ বিষয়ে একটি উপসংহারে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত করার ভার দুদকের পাশাপাশি পুলিশকে দেয়া হলে সে ক্ষেত্রে বিদ্যামান আইনটি সংশোধন করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, পুলিশের পক্ষ হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচিত আইনটি সংশোধন করে মুদ্রাপাচার বিষয়ে তদন্ত, গ্রেফতার ও মামলা করার ক্ষমতা দুদকের পাশাপাশি পুলিশের হাতে দেয়ার কথা বলেছে। এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে অনেক যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমান আইনে মুদ্রাপাচারসংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত ও মামলা দায়েরের ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে দুদকের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। এর ফলে সীমিত জনবল নিয়ে দুদকের পক্ষে মুদ্রাপাচারসংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে অনেক অভিযোগ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। পাশের দেশের উদাহরণ টেনে পুলিশের পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হয়েছে, ভারতেও একাধিক সংস্থা দিয়ে এ ধরনের মামলার তদন্ত করানো হয়ে থাকে। মুদ্রাপাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ফাইনেন্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) পুলিশকে দিয়ে মুদ্রাপাচার অপরাধের তদন্ত করার সুপারিশ করেছে। আইনটি সংশোধন করে দুদকের পাশাপাশি পুলিশকেও মুদ্রাপাচারসংক্রান্ত ঘটনা তদন্ত, গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের ক্ষমতা অর্পণ করা হলে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখা সম্ভব হবে। কিন্তু এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যাখ্যা ভিন্ন। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছেÑ বিদ্যমান ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২’-এ মুদ্রাপাচার সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় তদন্ত ও মামলা করার দায়িত্ব একভাবে দুদককে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সংস্থাটি বেশ ভালো সাফল্য দেখিয়েছে। এ পর্যন্ত ২৮৫ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫৫টির ক্ষেত্রে মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক সংশ্লেষের পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। চার্জশিট দেয়া হয়েছে ১৬২টির ক্ষেত্রে। তিনটি মামলায় সাজা হয়েছে। ১৬৩ কোটি টাকা ফেরত আনা হয়েছে। একই পরিমাণ অর্থ বাজায়েপ্ত করা হয়েছে। তাই এ ধরনের মামলার তদন্তভার দুদকের কাছে থাকার প্রয়োজন। দুুদকের পাশাপাশি পুলিশকে যদি অপরাধের তদন্তভার দেয়া হয় তবে সে ক্ষেত্রে ‘দ্বৈতশাসন’এর উদ্ভব হতে পারে। অন্য কাউকে তদন্ত ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হলে সে ক্ষেত্রে দুদকের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যাবে। একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমর্যাদাও নষ্ট হবে। এতে আইনের অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে ল কমিশনের মতামত চাওয়ার কথা বলছেন কেউ কেউ। তবে সে ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। পরে পুরো বিষয়টি নিষ্পত্তির ভার ছেড়ে দেয়া হয় আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। তাই বিষয়টি শিগগিরই নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘(১) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারার্থ আমলে গ্রহণ (কগনিজেন্স) করিবেন না।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব মতো আইন সংশোধন করা হলে মুদ্রাপাচারসংক্রান্ত কোনো অভিযোগ তদন্ত করা বা সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেফতার ও মামলা করার জন্য পুলিশকে আর দুদকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পরবে না।