দেশে মানবাধিকার সংগঠনের নামে ব্যবসা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নাম ব্যবহার করে ব্যবসা শুরু হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এবং হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট কমিশনের নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে সরকারকে অবগত করলেও কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’ মঙ্গলবার দুপুরে জতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এসোসিয়েশন ফর ল রিসার্চ এন্ড হিউম্যান রাইটস (এলার্ট) আয়োজিত ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এর প্রতিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মানবাধিকার বিষয়টি এক নয় উল্লেখ করে ড. মিজানুর রহমান বলেন-খুন, গুম, ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন এগুলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে বুঝায়। কিন্তু ঘটনার পর কোনো ভুক্তভোগী যদি রাষ্ট্রের কাছে এর সঠিক প্রতিকার না পায় তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। যেমন-বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার বিচার এবং রায় কার্যকরে দীর্ঘসূত্রতা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে জবাবদাহিতায় আনতে হবে।’ রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি মানবাধিকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । এই জ্বালাও পোড়াও ও ‘স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি বন্ধ করুন। আর তা না হলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।’ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে সেখানে তারা মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। অথচ তারা সারা বিশ্বে যে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, শিশু হত্যা করছে সে বিষয়ে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তাই আমাদের মানবাধিকার নিয়ে তাদের সমালোচনা কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা এখন বিবেচনার বিষয়।’ তিনি বলেন, সততা, মানবসত্ত্বার মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যয়বিচার অর্থাৎ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই বাংলাদেশের জন্ম। তাই কেউ যাতে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে বলেও দাবি জানান তিনি। দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হ্রাসপাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশে ৩৪ শতাংশ সংখ্যালঘু থাকলেও এখন তা ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এর কারণ এবং সে বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে মানবাধিকার কমিশন খতিয়ে দেখছে। শিগগিরই রিপোর্ট আকারে তা প্রকাশ করা হবে।’ আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বলেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং সংবিধানে বিসমিল্লাহ রেখে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ গড়া সম্ভব নয়। এ সরকার মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’ সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মনোরঞ্জন ঘোষালের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন এলার্টের সভাপতি এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম খান, অধ্যাপক দূর্গাদাস ভট্টাচার্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট রানা দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ মাইনরটি ওয়াচের প্রেসিডেন্ট এড. রবীন্দ্র ঘোষ, শিক্ষক চন্দন কুমার সরকার প্রমুখ।