সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, এখন আর আগের মত আমাদের তরুণ-তরুণীরা বই পড়ে না। তারা ক্রমেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের একটাই এখন লক্ষ্য কেমন করে জিপিএ ফাইভ পাওয়া যায়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ-লন্ডনের উদ্যোগে আয়োজিত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিনের আর্ট প্যাভিলিয়নে বাংলা একাডেমী লন্ডন ৫ম বই মেলা ২০১৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার বই মেলাকে আমরা এখন ইউরোপেও ছড়িয়ে দিতে চাই। সেজন্যে লন্ডনে বই মেলাকে নিয়ে এসেছি। মন্ত্রী বলেন, আমরা ধীরে ধীরে বইয়ের প্রতি আগ্রহ ও বই পড়াকে উৎসাহিত করার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় বই মেলা করার উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় গ্রন্থাগার আছে। অথচ পাঠক না থাকার দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ইচ্ছে আছে এই বইয়ের পাঠাগার স্থাপনের। আমাদেরকে পাঠকও তৈরি করতে হবে। প্রবাসীদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নিজের দেশ, নিজের দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের তরুণ-তরুণীদের জানার সুযোগ করে দিতে হবে। সেজন্যে ইতিহাস ঐতিহ্য কেন্দ্রিক ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য, পুস্তিকা ও বই প্রকাশের উদ্যোগের কথাও জানান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ-লন্ডনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, লেখক সাংবাদিক কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী, বাংলা একাডেমীর ডিজি শামসুজ্জামান খান, আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি, মরহুম হুমায়ূন আহমদ খ্যাত অন্য প্রকাশনীর মাযহারুল ইসলাম, পাঞ্জেরী প্রকাশনীর আমরুল হাসান শায়েখ, আহমদ পাবলিশার্সের মেসবাহ উদ্দিন আহমদ, মওলা ব্রাদার্সের আহমেদ মাহমুদুল হক। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, এক সময় গোটা কয়েক বই নিয়ে চিত্তরঞ্জন সাহা যে বই মেলার সূচনা করেছিলেন, সময়ের স্রোতে আজ সেই বই মেলা দেশ বিদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। চিত্তরঞ্জন সাহার অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে বলে তিনি উপস্থিত কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বই মেলায় টাওয়ার হ্যামলেটস বারার নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারের বই মেলায়ও আমরা শরিক ও সহযোগিতা করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। এই সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। এবারের বই মেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে কাজ করছে চ্যানেল আই ইউকে ও বেতার বাংলা ১৫০৩ লন্ডন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী, বর্তমানে কানাডা নিবাসী তপন চৌধুরী। তপন চৌধুরীর গানে গানে পুরো হল সঙ্গীতের তালে তালে মুগ্ধ ও অভিভূত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রীর কবিতা আবৃত্তি করে দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। শনিবার ছিলো ছুটির দিন। অত্যধিক ঠান্ডা এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেলায় লোকসমাগম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম হলেও দিনব্যাপী হওয়াতে সারাক্ষণই লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দিনে লন্ডনের বেতার বাংলার শিল্পী ও কলাকুশলীবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সঙ্গীত অনুষ্ঠানের শুরুতে বেতার বাংলার এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর নাজিম চৌধুরী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। আগামীতেও বই মেলার সঙ্গে বেতার বাংলা ১৫০৩ শরিক থাকার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। এর পর মঞ্চে আসেন শিল্পী তপন চৌধুরী। বই মেলা চলবে রোববার রাত ৯টা অবধি। সমাপনী অধিবেশন শুরু হবে রোববার বিকেল থেকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, ছড়াকার ও সম্মিলিত সংস্কৃতি পরিষদ ইউকের দিলু নাসির।