অলস বসে রয়েছে বাংলাদেশী জেলেদের ট্রলারগুলো
ইলিশ আহরণ মওসুমের অর্ধেকটা সময় পার হলেও নদী ও সাগরে ইলিশের দেখা মিলছে না। সাগরে জাল ফেলে মাছ না পেয়ে খালি ট্রলার নিয়ে ফিরে আসছে জেলেরা। অপর দিকে সাগরে ভারতীয় ‘ট্রলিং’ ট্রলারের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়াটা জেলেদের কাছে মরার উপর খাড়ার ঘা বিবেচিত হচ্ছে। মহাজনের ঋণের টাকা পরিশোধ করার চিন্তায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা জেলেরা জানান, জৈষ্ঠ্য মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ইলিশ আহরণ মওসুম। মওসুমের মাঝামাঝি সময় এসেও সাগর ও নদীতে ইলিশ সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ তেমন একটা মিলছে না। বিভিন্ন এনজিও ও গ্রাম্য মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে জাল ট্রলার ঠিক করে মাছ শিকারের আশায় বুক বেঁধে সাগরে গিয়ে জাল ফেলে নিরাশ হচ্ছে। জালে মাছ উঠছে না। তার উপর ভারতীয় ট্রলিং ট্রলারের জেলেদের দৌরাত্মে আমাদের জেলেরা অন্য প্রজাতির মাছও ধরতে পারছে না। তারা জানান, বঙ্গোপসাগরের বয়া এলাকা থেকে পূর্বে খেপুপাড়া মহিপুর উপকূল পর্যন্ত ভারতীয় ট্রলিং ট্রলার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা অবাধে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় ট্রলিং ট্রলার ও তাদের জালের সাথে এ দেশীয় জেলেরা পেরে উঠছে না। শরণখোলার খোন্তাকাটা গ্রামের এফবি ‘ভাইভাই’ ট্রলারের মালিক মোঃ আব্বাস হাওলাদার জানান, গত এক মাসে তিনি দুবার সাগরে গিয়ে জাল ফেলে মাছ পাননি। খালি ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে তার প্রায় দুই লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সাগরে মোরা এহন অসহায় ইন্ডিয়ান জাইল্যাগো সামনে মোরা কিছু না, মোগো সামনেইদ্যা হেরা মাছ ধইররা লইয়া যায়, মোরা কিছু হরতে পারি না।’ একই ধরনের বক্তব্য দিলেন সাগর থেকে খালি হাতে ফিরে আসা এফবি ‘মায়ের দোয়া’ ট্রলারের মালিক আবুল কালাম আকন, ‘এফবি রহিমা’ ট্রলারের মালিক মোঃ কামাল মোললা, ’এফবি মারুফবিল্লাহ’ ট্রলারের মালিক মোঃ আনোয়ার মুন্সি। তাদেরও দেড়/দুই লাখ টাকা করে লোকসান গুণতে হয়েছে। মোটা অংকের লোকসান দিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধের চিন্তায় তারা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।
শরণখোলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, মওসুমের বাকি যে সময়টুকু আছে এ সময়ে মাছ পাওয়া গেলে জেলেরা কিছুটা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারে। শরণখোলা উপজেলা মৎস্য অফিসার ফেরদৌস আনসারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সঠিক সময়ে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আর সাগরে আমাদের পানিসীমায় ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরার খবর তিনি শুনেছেন, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন পাথরঘাটার কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লেঃ আরিফ বলেন, ভারতীয় জেলেদের ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো খবর নেই।