দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। দেশের একমাত্র এই খনিতে পানি প্রবাহের কারণে প্রায় দু’মাস থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে খনি শ্রমিকরাও কাজ করতে রাজি হচ্ছে না। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে খনিটি ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়বে।
১৯৯৪ সালের ২৭ জুন থেকে খনির কাজ শুরু এবং ২০০৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ৫ এপ্রিল খনির ভিতরে কাজ করার সময় কয়লা স্তরে ফাঁটল ধরে। এতে পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে পুরো খনিটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তিতে ভূ-গর্ভের পুরো ডিজাইন পরিবর্তন করে নতুন ডিজাইনে কাজ শুরু করা হয়। এতে প্রকল্প ব্যায় ৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ১৪৩১ কোটি টাকা দাড়িয়েছিল। ২০০০ সালে আবার খনি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ৪টি বিষয়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে উচ্চ তাপমাত্রা, পানির উচ্চ তাপমাত্রা, পানির প্রবাহ, রুফফন্ট (ছাঁদে ফাঁটল), আদ্রতা (হাই হিউমিডিটি) ও কয়লার স্ফূর্ত প্রজ্জলন। বিশ্বের আর কোনও কয়লাখনিতে ৪টি ঝুঁকি নিয়ে কোন কাজ করা হয় না। কিন্তু বড়পুকুরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কয়লাখনি হিসাবে চিহ্নিত। এই খনির তাপমাত্রা ২৭/৩২ ডিগ্রীর অধিক সেলসিয়াস হলেও খনির অভ্যন্তরে তাপমাত্রা রয়েছে ৪৯০। পানির উষ্ণতা রয়েছে প্রায় ৫-৬০। খনিতে পানি প্রবাহ রয়েছে ১০০০ থেকে ৮০০ মিটার কিউবিক। কিন্তু মাঝে মধ্যে পানির প্রবাহ আরোও বেড়ে যায়। চলতি বছরের ২৪ মার্চ ১২০৬ নং ফেসে কয়লা তুলতে গিয়ে পানির প্রবাহ এতো বৃদ্ধি পায় যা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যদিও চীনের এক্স.এম.সি ও সি.এম.সি কনসালটেন্টরা পানির প্রবাহ বন্ধ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, চীন থেকে বিশেষজ্ঞ আসার পর খনির ভূ-গর্ভের উত্তর দিকে ১২০৬ ফেসের পানির প্রবাহ বন্ধে ব্যবস্থা নেবে। বর্তমানে ভূ-গর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের কাজ চলছে। পানির প্রবাহ বন্ধ না করা পর্যন্ত কয়লা তুলতে পারবে না। ২০০২ সালে কয়লা উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮/১০ জন শ্রমিক দূর্ঘটনার শিকার হন ও ১ জন ব্রিটিশ কনসালটেন্ট দূর্ঘটনায় মারা যান। এই অবস্থায় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূ-গর্ভ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। দূর্ঘটনা কবলিত হলে খনি থেকে উদ্ধারে চীনা বিশেষজ্ঞদের কোন ভারী যন্ত্রপাতি নেই। খনির কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, পানি নিষ্কাশন বন্ধ হলে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে।