চিফ হুইপের অবৈধ বাড়ি, পাটমন্ত্রীর ব্যর্থতা, ব্যাংক থেকে কোটি টাকা লুটে অর্থমন্ত্রীর দায়, ১২ হত্যা মামলার আসামিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া থেকে শুরু করে সাবেক বিরোধী দল সবাইকে তুলোধুনো করলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। প্রত্যেকের দুর্নীতি ও ব্যর্থতা উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে সমালোচনার ঝড় তুললেন তিনি।
দশম জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীদের কঠোর সমালোচনা করেন।
সংসদ সচিবালয়ে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের একাধিক বাড়ি ‘দখলে’ রাখা প্রসঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘চিফ হুইপ যে চার-পাঁচটি বাড়ি দখলে রেখেছেন তা তিনি বলেননি। তিনি কয়টি বাড়ি কোথায় কোথায় দখলে রেখেছেন তা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। আরো কোথায় আছে কে জানে। এখন তিনি (চিফ হুইপ) কী বলতে চান? যদি আপনি করে থাকেন তাহলে সঠিক কাজ করেননি।’
তিনি বলেন, ‘একটি গরীব দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা এভাবে অপব্যয় করবেন তা হতে পারে না। আপনার কত বাড়ি, কত অফিস দরকার। আপনি জায়গায় জায়গায় বাড়ি নেবেন আর খানকা শরিফ খুলবেন, তাতে জনগণ মোমবাতি জ্বালাবেন তাতো হতে পারে না। এসব বাদ দেন।’
গোপালগঞ্জবাসীর দুর্ভাগ্য তাই তিনিও সরকারি জমি পাননি বলে মন্তব্য করেন ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জে খালে-নদীতে অনেক জল আছে। পাটমন্ত্রী যদি গোপালগঞ্জ থেকে পানি গ্রহণ করতেন তাহলে আমরাও মতিঝিলে প্লট পেতাম।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সব পাটকল, জায়গা বিক্রি হয়ে গেছে। এত বিক্রির পরও কেন এত ঘাটতি? চট্টগ্রাম সমিতিকে জায়গা দিলেও গোপালগঞ্জ সমিতিকে জায়গা দেননি কেন?’
তিনি শ্লেষের সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সমিতিকে জায়গা দেয়ার ব্যাখ্যায় উনি লিখেছেন, ‘চট্টগ্রামের মেজবানি আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। চট্টলা কন্যার পানি পান করিয়াছি বিধায় আমি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ চট্টলা সমিতিকে দিয়াছি। তিনি বাংলার ছাত্র বলে সাহিত্য ভালো লেখেন!’
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক খাতে বরাদ্দ সম্পর্কে কাজী ফিরোজ বলেন, ‘দিনে দুপুরে একের পর এক ব্যাংক ডাকাতি হয়ে ফতুর হয়ে যাচ্ছে। বেসিক ব্যাংকের ডাকাতির পরও চেয়ারম্যান বহাল তবিয়তে। এভাবে ব্যাংক থেকে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনায় অর্থমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে। এসব ব্যাংক ডাকাতি ও লুটপাট দেখার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘অসাধু কর্মকর্তা, ব্যাংকের পর্ষদ যোগসাজসে এসব লুটপাট হচ্ছে। মিথ্যা এলসি দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা নিচ্ছে, তবুও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীকে এগুলোর জন্য একদিন জবাব দিতে হবে। শেয়ারবাজারে সরকার ও তৎকালীন বিরোধীদলের সদস্যরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে কিন্তু তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যে দুষ্ট লোকদের আপনি (অর্থমন্ত্রী) সাজা দিয়ে চেয়েছেন তারা আজও বহাল তবিয়তে।’
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্দের টাকা নিয়ে জনগণের কোনো কাজ করে না। তাদের কাজ হলো নিজেরা হজ্জে যাওয়া ও আত্মীয় স্বজনদের হজ্জে পাঠানো। এদের কোনো ভালো কাজই নেই।’
জনগণের জন্য বরাদ্দ টাকা দিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পিয়নরা দুই থেকে তিনবার হজ্জ করে আসছে- এমন অভিযোগ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘এসব পিয়নের আত্মীয় স্বজনদের ফর্ম পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে। দেশের বহু আলেম ওলামা আছেন যারা অর্থের অভাবে জীবনে একবারও হজ্জ করতে পারেন না। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী হজ্জের টাকার অব্যবহার করেন।’
কাজী ফিরোজ সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ঝেরেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ওপর। তার কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, ‘তিনি একজন বিদ্যান ব্যক্তি। নামের আগে ডক্টরেট ডিগ্রি আছে। তিনি একজন ডিসিকে ১২টি হত্যা মামলার আসামিকে একটি রিভলবারের লাইন্সেস দিতে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন। ১০ বছর কারাগারে থাকার পর তিনি তাকে খালাস তো করেই দিয়েছেন, আবার তাকে রিভলবার দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ধরনের নির্দেশ যেন বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী না দেন।’
এসময় সাবেক বিরোধী দল বিএনপির সমালোচনা করতেও ছাড়েননি বর্তমান বিরোধী দলের এ নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে, বাজেট দেয়ার পর বিরোধীদল বাহিরে গিয়ে বলে- বাজেট উচ্চবিলাসী হয়েছে। হরতাল দেয়। সরকার দল বলে- ভালো বাজেট হয়েছে। আমরা বিরোধীদল হিসেবে কোনো হরতাল দেইনি। তবে বাজেট যদি বাস্তবসম্মত না হয় তাহলে দীর্ঘ ৪৩ বছরের অভিজ্ঞতায় যা হয়েছে আমরাও তাই করবো।’