দুই দেশের মধ্যে চুক্তির আওতায় ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা থাকলেও ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। কমতে কমতে এখন সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে তা ৩৫০ মেগাওয়াটে নেমেছে।
জানতে চাইলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় অভিন্ন। ওই সময়ে দুই দেশেই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ৫০০ মেগাওয়াট সঞ্চালনের ক্ষমতা সঞ্চালন লাইনের থাকে না। অন্য সময়ে (অফ-পিক সময়ে) ৪৬০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে৷
এই বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে গ্রিড উপকেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সে দেশের প্রচলিত দামে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২৫ বছর বাংলাদেশে রপ্তানির অনুমোদন দেয়। এরপর ভারতের বেসরকারি খাত থেকে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী ভারতের পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশনের কাছ থেকে তিন বছর মেয়াদে ওই বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। সেদিন থেকে ভারতের সরকারি খাতের ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছিল। গত ডিসেম্বরে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। কিন্তু আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ৫-৬ শতাংশ কারিগরি পদ্ধতিগত লোকসান (টেকনিক্যাল সিস্টেম লস) থাকায় বাংলাদেশ শুরু থেকে সর্বোচ্চ ৪৭০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পায়নি। ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ কমতে থাকে। সেচ মৌসুম শুরু ও গ্রীষ্মকাল আসতে থাকায় ওই সময় থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকে। মার্চে বিদ্যুতের আমদানি ৪০০ মেগাওয়াটের নিচে নেমে আসে, বিশেষ করে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা)। এরপর পর্যায়ক্রমে কমে এখন ৩৫০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, সন্ধ্যাকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ভারতেও বিদ্যুতের সরবরাহ ঘাটতি থাকায় ৫০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে না।
অবশ্য সরকারি সূত্র জানায়, সঞ্চালনব্যবস্থায় কারিগরি পদ্ধতিগত লোকসানের কারণে যে পরিমাণ (২৫-৩০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে, সেই পরিমাণ বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ জন্য বাংলাদেশ আলাদা চুক্তি করতে পারে, কিংবা বিদ্যমান চুক্তির অধীনেও নিতে পারে। তবে এখনো এ ব্যাপারে বাস্তবে কিছু দেখা যাচ্ছে না।
ভারতের সরকারি খাত থেকে আনা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে প্রায় সাড়ে চার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ৫০ পয়সার মতো সঞ্চালন খরচ (হুইলিং চার্জ)। বেসরকারি খাত থেকে আনা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়ছে ছয় টাকা ৩৪ পয়সা। এর সঙ্গেও সঞ্চালন খরচ দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতি ইউনিটের গড় দাম পড়ছে প্রায় সাড়ে ছয় টাকা। তবে ভারতের সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি কমিশন সময়ে সময়ে এই দাম পুনর্নির্ধারণ করবে, যা সে দেশের জন্যও কার্যকর হবে। বাংলাদেশেও বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় সাড়ে ছয় টাকার বেশি।