শুধু কি স্তন ক্যানসার, যা পরিবারে কারো থাকলে অন্যদেরও হওয়ার আশঙ্কা থাকে? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মহিলাদের স্তন ক্যানসারের মতো পুরুষদের কোলন ক্যানসারেও এই একই ‘পারিবারিক’ ঝুঁকি রয়েছে। জিনবাহিত হয়ে যা ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যদের মধ্যেও। এরই উদাহরণ হিসেবে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই ভাইয়ের ‘কেস হিস্ট্রি’ পাঠানো হয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর কাছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সামান্য সচেতনতাই বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেকগুলো প্রাণ।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মহিলাদের স্তন ক্যানসার, পুরুষের কোলন ক্যানসার এবং মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে চোখের ক্যানসার (রেটিনা ব্লাস্টোমা) জিনবাহিত হয়ে ছড়ায় বহু ক্ষেত্রেই। তবে কোলন ক্যানসার মূলত পুরুষদের হলেও মহিলাদের হয় না, তা নয়। মূলত তিন ধরনের জিন রয়েছে, যা কোলন ক্যানসারের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই জিন পজিটিভ হলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু কোলন ক্যানসারের এই চরিত্রটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন কাজ হয়নি।
কলকাতার ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কোলন এবং রেকটাল ক্যানসার একসাথে যাকে কোলোরেকটাল ক্যানসার বলা হয়, সেটা একই পরিবারে অনেকেরই হয়ে থাকে। গোড়ায় ধরা পড়লে ভালো ফল পাওয়া যায়। জেনেটিক বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সতর্ক থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি।’
ঠিক কী ধরনের সতর্কতা? ‘নিয়মিত ফলোআপ, বয়স ৪০ পার হলে এক বছর অন্তর কোলোনোস্কোপি এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন জরুরি। ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া দরকার। অতিরিক্ত প্রোটিন, বিশেষত রেড মিট খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।’
‘ইরিটেবল বাওয়েল হ্যাবিট’ অর্থাৎ কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য, কখনও পেট খারাপ, পাশাপাশি মলের সাথে রক্তপাত। এটাই হলো মূল উপসর্গ। অনেকেই তাই অর্শের সাথে উপসর্গ গুলিয়ে ফেলেন। ফলে রোগটা ধরা পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট কিছু জিন থাকে যা থেকে কোলনে পলিপ হয়। পরে তা থেকেই ক্যানসার ছড়ানোর ভয় থাকে। যে পরিবারে কারো কোলন ক্যানসার রয়েছে, সেখানে বাকিদেরও এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে পলিপ হলে তা দ্রুত অস্ত্রোপচার করে নেওয়াই শ্রেয়।
অর্থাৎ এই ক্যানসারে শুধু রোগীর নয়, গোটা পরিবারের ফলোআপ চিকিৎসাটাই জরুরি। রহমত আর আহমেদের জীবনের গল্পের মাধ্যমে সেটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।