স্থানীয় সরকার বাজেট চাই

0
188
Print Friendly, PDF & Email

মিউনিসিপ্যাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ম্যাব ও বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরাম-বিইউপিএফ কতর্ৃক জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ন্যায় সংগত বরাদ্দের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উগ্যোগে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়৷ এ মানব বন্ধন কর্মসূচিতে ম্যাব প্রণীত ৭ দফা এবং বিইউপিএফ প্রণীত ৮ দফা সুপারিশ সম্বলিত দাবী নামা উত্থাপন করা হয়৷ এই মানব বন্ধন কর্মসূচীতে প্রায় সাত শতাধিক স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন৷ মানব বন্ধনে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য আংশ গ্রহন করেন৷ ম্যাব মহাসচিব ও সিংড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক শামিম আল রাজি বলেন, দেশে ২ লৰ ৫২ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রদান করা হলেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ হতাশাজনক৷ তিনি বলেন আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার কমিশন বা স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন নেই এবং অর্থ বন্টনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালাও নেই৷ ফলে তৃণমূল পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বন্টন হয় না৷ দেশে টেকসই ও কার্যকর উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রয়োজন৷ আর শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের জন্য প্রয়োজন আর্থিক ৰমতায়ন৷ মেয়র শামিম আল রাজি বলেন ভারতের রেল বাজেটের আদলে দেশে এখন স্থানীয় সরকার বাজেট প্রয়োজন৷ স্থানীয় সরকার বাজেট এখন সময়ের দাবী৷ বিইউপিএফ এর সভাপতি ও সাহাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জনাব মাহাবুবুর রহমান টুলু বলেন, আমাদের ৮ দফা দাবী মানতে হবে, না হলে আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায়ে সচেষ্ট হবো৷ তিনি আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যে সম্মানীভাতা প্রদান করা হয় তা হাস্যকর ও অসম্মানজনক৷ অবিলম্বে সম্মানীভাতা সম্মানজনক করতে হবে৷ এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন ম্যাব এর সাবেক সভাপতি ও মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জনাব রমজান আলী, ম্যাব সদস্য ও কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র জনাব আনোয়ার আলী, ম্যাব সহ-সভাপতি ও পার্বতীপুর পৌরসভার মেয়র জনাব এজেডএম মেনহাজুল হক, ম্যাব এর যুগ্ম মহাসচিব ও কোটালীপাড়া পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব অহিদুল ইসলাম, ম্যাব এর যুগ্ম মহাসচিব ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জিকে গউছ, ম্যাব সহ-সভাপতি ও গফুরগাঁও পৌরসভার মেয়র এ্যাড. কায়ছার আহমেদ, শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র জনাব আনিসুর রহমান, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র জনাব আব্দুল মাজেদ, উলস্নাপাড়া পৌরসভার মেয়র জনাব বেলাল হোসেন, কাউন্সিলর সমিতির সভাপতি ও ভৈরব পৌরসভার কাউন্সিলর এ্যাড. আখতার হোসেন, নারী কাউন্সিলর কমিটির সভাপতি ও নরসিংদী পৌরসভার কাউন্সিলর এ্যাড. সুলতানা রাজিয়া, কুষ্টিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর রিনা নাসরিন, মানিকগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মিতু, সাভার পৌরসভার কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানা ও ডরফিন, যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর ডলি, কালিয়াকৈর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইমাম, পাঁচবিবি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরম্নল হুদা, ফুলবাড়ী পৌরসভার সচিব মাহাবুব হোসেন৷

বিইউপিএফ সাধারণ সম্পাদক জনাব মোর্শেদ আলম, বক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা জুয়েল, কাকড়কান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুলস্নাহ তালুকদার মুকুলসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ৷ মানব বন্ধনে প্রায় দুই শতাধিক মেয়র-কাউন্সিলরবৃন্দ এবং প্রায় পাঁচশতাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন৷
এছাড়াও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দের পৰে ডেমোক্রেসি ওয়াচ, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, খান ফাউন্ডেশন, প্রিপট্রাস্ট, আইআইইডি ও নাগরিক উগ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন৷
ম্যাব ও বিইউপিএফ নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রী ৬৮ হাজার স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কথা বিবেচনা করে এবং স্থানীয় উন্নয়নের স্বার্থে জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন গঠন বা আর্থিক বন্টন নীতিমালা প্রণয়ন পূর্বক কার্যকর পদৰেপ গ্রহণ করবেন৷
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ম্যাব মহাসচিব ও সিংড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক শামিম আল রাজি৷
— — — —

ম্যাব প্রণীত ৭ দফা সুপারিশ
১. প্রসত্মাাবিত নগর উন্নয়ন নীতিমালা এবং ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা বাসত্মবায়ন করতে হবে৷
২. নগর শিৰা ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধির উপর হসত্মানত্মর করতে হবে৷
৩. পৌর ভৌগোলিক সীমার মধ্যে অবস্থিত সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পৌরসভার উপর ন্যাসত্ম করতে হবে৷
৪. পৌর এলাকার আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব সংশিস্নষ্ট প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত করে পৌর কর্তৃপৰের উপর ন্যাসত্ম করতে হবে৷
৫. পৌরসভা আইনের ৩১, ৩২, ৩৮ ও ৪৯ নং অনুচ্ছেদ বাতিল করতে হবে৷
৬. স্থানীয় সরকার বাজেট প্রণয়ন করে জাতীয় আয়ের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত এবং স্থানীয় সরকার অর্থ কমিশন গঠন অথবা আর্থিক বন্টন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে৷
৭. নগর আদালত/বিরোধ নিস্পত্তি বোর্ড গঠন করতে হবে৷

বিইউপিএফ প্রণীত ৮ দফা সুপারিশ
১. ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্মানজনক পদমর্যাদা নির্ধারণ করতে হবে এবং তা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে অনত্মর্ভূক্ত করতে হবে৷
২. চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী ভাতা যুগোপযোগী করে চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে ১৫,০০০ ও সদস্যদের ৮,০০০ টাকায় উন্নীত করতে হবে৷
৩. সংবিধান ও আইন পরিপন্থী পরিপত্রসমূহ বাতিল এবং সকল প্রকার হসত্মক্ষেপ বন্ধ করতে হবে৷
৪. টিআর, কাবিখা, এডিপি, ভূমি হসত্মানত্মর করের ১% সহ সকল প্রকার বরাদ্দ সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদকে প্রদান করতে হবে৷
৫. ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ধারা ৮ অনুযায়ী প্রশাসনিক ইউনিট হিসাবে এবং ধারা ৬৩ ও তৃতীয় তফসিল এর আলোকে ইউপি পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ইউনিয়ন পরিষদে হসত্মানত্মরের ব্যবস্থা করতে হবে৷ এছাড়া ধারা ৬২ অনুযায়ী জরম্নরী ভিত্তিতে একজন হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিতে হবে৷
৬. ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ধারা ৩৪ (চেয়ারম্যান বা সদস্যগণের সাময়িক বরখাসত্মকরণ ও অপসারণ) অবশ্যই বাতিল করতে হবে৷ এছাড়া ধারা ৭৭ (খ) ও (গ) অনুযায়ী একজন সত্‍, যোগ্য এবং নিষ্ঠাবান জনপ্রতিনিধির পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে তার সদস্যপদ বাতিল করার যে বিধান করা হয়েছে তাও বাতিল করতে হবে৷
৭. ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলার সম্পদ ও আয়ের খাতসমূহ সুনির্দিষ্ট করে অবিলম্বে হাটবাজার, জলমহাল, খেয়াঘাট, শ্যালোঘাট, খাসজমি ইত্যাদি ইজারা দেয়ার ক্ষমতা ইউপিকে অর্পন করতে হবে৷
৮. গ্রাম আদালতের বিচারিক ক্ষমতা ২৫,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০,০০০ টাকায় উন্নীত করতে হবে৷

শেয়ার করুন