আসছে রমজান মাসকে ‘সাংগঠনিক মাস’ হিসেবে ঘোষণা করে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। কেননা রোজার মাসে তেমন কোনো কর্মসূচি থাকে না। তাই এই সময়ে দলের প্রতিটি অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠন গোছাতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, রমজান মাসে দল ও জোটের প্রতিটি অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি দেশের সুশীল সমাজ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে মতবিনিময় করবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর উদ্দেশ্য হলো, আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করা। যাতে করে আন্দোলন চূড়ান্ত বিজয়ে পরিণত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান শীর্ষ নিউজকে বলেন, দেশে গণতন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সময়ের প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচিও আসবে।
নতুন কর্মসূচি কবে নাগাদ আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচি ঈদের আগেও আসতে পারে, আবার ঈদের পরেও আসতে পারে। তাছাড়া দেশের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজনে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি যে কোনো সময় পালনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু শীর্ষ নিউজকে বলেন, মুসলিম দেশ হিসেবে এখন বাংলাদেশে যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছেন, এটি তাদের বড় ধরনের দেশ বিরোধী আত্মাহুতি। বিএনপি রমজান মাসে রাজপথে আন্দোলন করবে না।
তবে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে দল গোছানো, আলোচনা সভা করা, বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে মতবিনিময় করবে বিএনপি। যা পরবর্তী দিনে সরকার পতনের আন্দোলনে সহায়ক হবে বলে মনে করি।
বিএনপি’র দফতর সূত্র জানায়, যেহেতু নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন যখন সারাদেশে তুঙ্গে, তখন খোদ রাজধানী ঢাকা নিরুত্তাপ। দলের সিনিয়র নেতাদের পরস্পর বিরোধী আচরণ, আত্মরক্ষার প্রবণতা আর একে অন্যকে ঘায়েল করার মানসিকতার কারণেই রাজধানীর আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। ফলে সারাদেশে আন্দোলনের গতি ছড়ালেও ঢাকায় ব্যর্থতার কারণে গোটা আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। তাই এবার হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নয়, ধীর গতিতে আন্দোলন শুরু করে সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে নিয়ে যাওয়াই হবে মূল লক্ষ্য।
দলের অপর একটি সূত্র জানায়, আগামী দিনে বিএনপি তথা ১৯ দলীয় জোটের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবেন বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যার জন্য ইতোমধ্যে বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে দায়িত্ব কাকে কাকে দেওয়া হয়েছিল, কে কতটুকু আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে, আর কে কে আন্দোলন থেকে নিজেকে বিভিন্ন অজুহাতে দূরে সরিয়ে রেখেছে সে সব বিষয়ে তারেক রহমান তার নিজস্ব লোক মারফত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সরকার পতন আন্দোলন পরিচালনা ও সফল করার মূল দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। আন্দোলনে মাঠে থাকা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের এমনো অভিযোগ- ক্ষমতা দখল আর পদ আঁকড়ে থাকা নেতাদের মাঠে না পাওয়ায় আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। মহানগর নেতাদের দিক নির্দেশনা আর নেতৃত্বের অভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের দেওয়া কর্মসূচিও ছিল গা ছাড়া। তাই তৃণমূলের দাবি দল গোছানোর প্রথম শর্ত মহানগর কমিটির রদবদল।