আরব্য রজনীর মহানায়ক (পঞ্চম পর্ব)

0
249
Print Friendly, PDF & Email

আর আপনিও তার মতো বিখ্যাত এবং মহান ব্যক্তির ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে নিজেকে গর্বিত ভাবতে পারবেন।

আমি বাবার কথা শুনে একদম তাজ্জব বনে গেলাম। আমি তার মেধা এবং ধীশক্তির কার্যক্ষমতা দেখে অবাক হলাম। মনে মনে বললাম, আপনি আমার মনের চাওয়াটুকু জানলেন কি করে। বাবা বোধহয় বুঝলেন! তিনি বললেন, আমিরুল মোমেনিন! আপনি যদি অনুমতি দেন তবে এই পড়ন্ত বিকালের মনোরম পরিবেশে, বিশেষ করে টাইগ্রিসের জলে গলা পর্যন্ত শরীর পানিতে ডুবিয়ে রেখে আপনার সমীপে আমার কিছু অভিজ্ঞতা পেশ করতে চাই। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম। বাবা বলতে আরম্ভ করলেন_

আমিরুল মোমেনিন, আমি দরবারিগণের কাছে শুনেছি আপনার পেরেশানির কারণ। আপনার জন্য এবং বিশেষত আপনার রাজসিক পদ-পদবির জন্য ক্রোধ এবং জিদ কখনো কখনো সাফল্যের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে একজন শাসক যদি তার নিজের, জনগণের এবং সর্বোপরি সাম্রাজ্যের মানসম্মান বৃদ্ধির জন্য জিদ করেন, তবে অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল ভালো হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাড়া করে সেই শাসককে যিনি কিনা পূর্বাপর বিবেচনায় না এনে হঠাৎ করেই রাগ হয়ে যান। এ ছাড়া যে শাসক যত বেশি মহান হতে চান, তাকে তত বেশি রাগ পরিহার করতে হবে। আল্লাহর হুকুমে শাসকগণ জমিনে বাদশাহী লাভ করেন। রাষ্ট্রের সর্ব ক্ষমতা যখন এক ব্যক্তির হাতে থাকে এবং তিনি যদি কোনো কারণে কোনো ব্যক্তি বিশেষের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা থাকে না। তাই শাসক কখনো রাগ করেন না। তিনি ন্যায়বিচার করেন এবং অপরাধীকে শাস্তি দেন। তিনি দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এবং অসহায় লোকদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি দুর্বলকে শক্তিশালীদের জুলুম থেকে রক্ষা করেন।

আপনি নিশ্চয়ই আলেকজান্ডার সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। আর জানেন খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব সম্পর্কে কিংবা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ সম্পর্কে, তারা সবাই জ্ঞানী-গুণীদের কদর করতেন। নিজেদের চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস ও স্বার্থের ওপর জ্ঞানী লোকদের মর্যাদাকে প্রাধান্য দিতেন। কোনো সম্মানিত লোক তাদের দ্বারা কোনো দিন কষ্ট পাননি। রাষ্ট্র সব সময়ই জ্ঞানবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। উল্লেখিত শাসকবৃন্দ নিজেরা ছিলেন মহান জ্ঞানী_ ফলে তারা জ্ঞানী ব্যক্তিদের চোখের ভাষা এবং দেহের অভিব্যক্তি বুঝতেন। কোনো সাধারণ মানুষকে দিয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন না। স্বয়ং নিজে গিয়ে উপস্থিত হতেন অথবা উপযুক্ত লোকের মাধ্যমে তাজিম সহকারে জ্ঞানী গুণীগণকে রাজদরবারে কিংবা প্রাসাদের রাজকীয় মেহমান হিসেবে দাওয়াত দিতেন। অনেক জ্ঞানীগুণী ইচ্ছা করেই শাসক থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। ফলে ওইসব লোক অনেক সময় শাসকগণের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন না। এমনকি স্বয়ং শাসক যদি তাদের কাছে হাজির হতেন সে ক্ষেত্রেও তারা দরজা বন্ধ করে হুকুম জারি করে শাসকগণকে চলে যেতে বলতেন। এতবড় অপমানের পরও মহান শাসকরা কখনো ক্রোধান্বিত হন না।

আমার আকা-আমার মাওলা_ আপনি নিশ্চয়ই এমন একজন শাসক হতে চান, যিনি তার আপন মহিমায় কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের স্বপ্ন ও ভালোবাসার ধন হয়ে বেঁচে থাকতে চান। আর যদি তাই হয়, তাহলে আপনাকে সব কিছু জানতে হবে এবং প্রতিটি উপযুক্ত বিষয়ের সঙ্গে তদ্রূপ উপযুক্ত বিষয়ের সমাবেশ ঘটাতে হবে। আপনি যখন ক্রোধান্বিত হয়ে দরবার ত্যাগ করলেন তখন একবারও কি চিন্তা করেছেন, কেন আপনি রাগ করলেন? কার ওপর রাগ করলেন? নিজের ওপর, জাবির ইবনে হাইয়ানের ওপর, নাকি আপনার দূতের ওপর! মোদ্দা কথা হলো, আপনি এত কিছু ভেবে রাগান্বিত হননি। আপনার হুকুম তামিল হয়নি, কথাটি শোনা মাত্র আপনি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে পড়েন। এটি ঠিক আছে, তবে সাধারণ শাসকদের জন্য। আপনার জন্য নয়। আপনার বংশ, আপনার রাজরক্ত এবং আপনার অতি উচ্চমার্গের শিক্ষা-দীক্ষার কারণেই এই জমিনের সব প্রাণী-মাটি-বাতাস এবং বৃক্ষলতা আপনার কাছে কেবল ন্যায় বিচার আশা করে।

এবার জাবির ইবনে হাইয়ান প্রসঙ্গে আসি। তিনি কেবল এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিতই নন, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের অন্যতম। জ্ঞানবিজ্ঞানের সব শাখায় তার যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ব্যুৎপত্তি তা এ যাবৎকালের দুনিয়ায় কেউ কোথাও দেখাতে পারেনি। তার কারণেই আমরা এখন সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, ইউক্লিড, পিথাগোরাস, আর্কিমিডিস প্রমুখ মহান লোকের কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে জানতে পারছি। তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নিজ বাড়িতে বসে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন বিশ্ববাসীর জন্য। তিনি কারও কাছে না কোনো প্রতিদান নিয়েছেন কিংবা চেয়েছেন এবং সম্ভবত আশাও করেন না। তিনি কোনোদিন কোনো রাজপুুরুষের কাছে যাননি এবং এ ধরনের সাধক পুরুষরা সাধারণত শাসকদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন। এ অবস্থায় হঠাৎ যদি আপনার দূত তার বাড়িতে গিয়ে পরোয়ানা জারি করে বলে বসে, তল্পিতল্পাসহ বাগদাদে এসে আপনার অনুগ্রহভাজন হওয়ার জন্য, তাহলে ভদ্রলোকের জন্য বিষয়টি আদৌ সুখের হবে?

আমার মালিক আপনি অবশ্যই জানেন, কেবল ধান্দাবাজ লোকজনই শাসকদের কাছে বেহায়া এবং বেশরম হয়ে দিনরাত ধরনা দেয়। কোনো সম্মানিত এবং আত্দমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি ভুলেও শাসকদের প্রাসাদের চার দেয়ালের কাছে আসবে না বিনাপ্রয়োজনে। যারা অতি উচ্চমার্গের মর্যাদাসম্পন্ন জ্ঞানী ব্যক্তি, তারা নিজেদের জীবনমান এবং চাহিদা এমনভাবে নির্ধারণ করে নেন, যাতে কখনো তাদের শাসকের কাছে যেতে না হয়। অন্যদিকে যে শাসক যত বড় হন ততই তিনি নিজেকে সাধারণের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসেন। জনগণের স্বার্থে তিনি সবকিছু করতে পারেন। জনস্বার্থে তিনি যুদ্ধ করেন। আবার জনস্বার্থে যুদ্ধ বন্ধ করে সন্ধি করেন। জনগণের জন্য তিনি সিংহাসনে বসে সিংহ বিক্রমে হুঙ্কার ছাড়েন আবার সেই জনগণের কল্যাণের জন্য ভিখেরির মতো রাস্তায় নেমে আসেন_ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্য প্রার্থী হন।

জাবির ইবনে হাইয়ান সম্পর্কে যদি আপনি একটু মনোযোগী হন তবে দেখতে পাবেন, আপনার কাছে তার কোনো কাজ নেই; নেই কোনো স্বার্থ। অন্যদিকে জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতাকারী হিসেবে আপনি যদি নিজের নাম, যশ এবং খ্যাতিকে অমরত্ব দিতে চান তবে আপনাকেই যেতে হবে তার কাছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন না সেই রাজার নাম, যিনি সক্রেটিসকে শাস্তি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে সক্রেটিসের নাম আপনার সালতানাতের সব শিক্ষিতজনই জানেন। কাজেই প্রয়োজন মনে করলে আপনাকেই যেতে হবে তার কাছে উল্টো তাকে ডাকা চলবে না। আর তিনি যদি আপনার ডাকে বাগদাদ এসে উপস্থিত হন সে ক্ষেত্রে আপনি আর সেই আদি, অকৃত্রিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ানকে পাবেন না। আপনি পাবেন নতুন একজন পোষ্য_ নতুন এক অনুগ্রহভাজন যিনি আকার-আকৃতিতে হয়তো মানুষ কিন্তু আচরণে হবেন আপনার দরবারের অন্যসব বেতনভুক্ত কর্মচারী, দালাল বা খয়ের খাঁদের মতো।

বাবার কথা শুনে আমার অন্তর শীতল হয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি পানি ছেড়ে তীরে উঠলাম এবং ভেজা পোশাক পরিবর্তন করে নিলাম।

এরপর ঘোড়ায় চড়ে প্রাসাদের দিকে রওনা দিলাম। সূর্য ডোবার তখনো কিছুটা সময় বাকি ছিল। পশ্চিম দিগন্তে রক্ত গোলকের ন্যায় সূর্যটি অস্ত যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি আকাশের দিকে তাকালাম এবং পরে জমিনে দৃষ্টি নামিয়ে আনলাম। মরুভূমিতে তখন হাজার হাজার উট চরছিল_ আর দিগন্তে উড়ছিল অগুনতি পাখ-পাখালি। এমনতর পরিবেশে আমার খুব ইচ্ছা হলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখি এবং উন্মুক্ত প্রান্তরে নামাজ আদায় করি। বাবাকে আমার ইচ্ছার কথা বলতেই তিনি পুরো কাফেলা থামিয়ে দিলেন। আমি ঘোড়ার পিঠে বসেই সূর্যাস্ত দেখতে লাগলাম।

প্রাসাদে ফিরে রাতের খাবার খেলাম। এরপর আমার লাইব্রেরিতে প্রবেশ করলাম অধ্যয়নের জন্য। এটা আমার মোটামুটি নিত্যদিনের অভ্যাস, খাওয়া-দাওয়ার পর পড়াশোনা এরপর এশার নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত। সবশেষে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত এবং ঘুম। সাধারণত বিছানায় শরীর রাখা মাত্র আমার দুচোখে ঘুম ভর করে। কিন্তু সে রাতে আমার ঘুম আসছিল না। বার বার বাবার কথাগুলো মনে আসছিল, তার মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন এক অদ্ভুত মায়া লেগেছিল আমার। আমি যেদিন খেলাফত লাভ করেছিলাম সে দিন অর্থাৎ ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর বাবা ছিলেন বন্দী। আমার আব্বা হুজুর খলিফা আল মাহদি তার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে হঠাৎ করেই বাবাকে বন্দী করে জেলখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আব্বা হুজুর মারা যান ৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে। এরপর মাত্র এক বছরের জন্য খলিফা ছিলেন আমার বড় ভাই আল হাদি যার পুরো নাম ছিল আবু আবদুল্লাহ মুছা ইবনে মাহদি আল হাদি।

আব্বা হুজুর তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু এবং খিলাফতের প্রধান উজির ইয়াহিয়া বার্মেকি যাকে আমি বাবা বলে সম্বোধন করতাম তাকে কেন হঠাৎ করে বন্দী করলেন তা অদ্যাবধি কেউ খোলাসা করে বলতে পারে না। আব্বা হুজুর জীবিত অবস্থায় যেমন বলেননি তেমনি বাবাও মুখ ফুটে টুঁ-শব্দটি উচ্চারণ করেননি। আমি নিজে বহুবার চেষ্টা করেও তাকে কথাটি জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। আমার ভয় ছিল, পাছে তিনি বিরক্ত বা বিব্রত হন কিংবা এমন কিছু প্রকাশ করে দেন, যা শুনে আমি নিজেই হয়তো বিব্রত, নয়তো অসুখী মানুষে পরিণত হয়ে যাব। তার চেয়ে বরং না শোনাই ভালো। তবে বিষয়টি যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং মারাত্দক কিছু একটা ছিল_ তাতে সন্দেহ নেই।

কারণ বাবার পরিবারের কয়েক হাজার লোক খিলাফতের সব বড় বড় সামরিক ও বেসামরিক পদগুলো দখল করেছিল সেই দাদা হুজুরের আমল থেকেই। বাবার পিতা খালিদ ইবনে বার্মেকি আব্বাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আব্বাস আস সাফফার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বার্মেকি বংশের লোকজন বহু শতাব্দী ধরে বলখে বসবাস করতেন। ৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে আরবরা বলখ দখল করে। পরবর্তীতে খালিদ ইবনে বার্মেকি তার ভাই ব্রাদারসহ পরিবারের লোকজন নিয়ে বসরা নগরীতে হিজরত করেন এবং সেখানে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

মূলত খালিদ ইবনে বার্মেকির সাহায্য-সহযোগিতা এবং সামরিক শক্তির ওপর ভরসা করে আবুল আব্বাস আস সাফফাহ উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। খিলাফত লাভের পর তিনি হয়ে গেলেন রাজ্যের সর্বেসর্বা। খলিফা মূলত তার কথামতোই সব কিছু করতেন। আস সাফফাহ মারা যান ৭৫৪ সালের ১০ জুন।

আমার দাদা হুজুর আল মনসুরের বয়স তখন ৪০ বছর। ফলে একজন পরিপূর্ণ এবং অভিজ্ঞ মানুষ হিসেবে তিনি ক্ষমতায় বসলেন। তিনি বুঝলেন, বার্মেকিদের ছাড়া রাজ্য চালানো যাবে না। আবার সর্ব ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাজ্য চালানোটাও ঠিক হবে না। তিনি খালিদ ইবনে বার্মেকিকে প্রধান উজির না বানিয়ে বাগদাদ নগরী প্রতিষ্ঠার প্রধান কর্তা হিসেবে নিয়োগ দিলেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দিলেন ফারের গভর্নরের দায়িত্ব। ৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে তাকে তাবারিস্তানের গভর্নর বানিয়ে রাজধানী বাগদাদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। দাদা হুজুরের মৃত্যুর পর তিনি রাজকার্য থেকে কার্যত অবসর নিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসেন। অন্যদিকে দাদা হুজুরের মৃত্যুর কয়েকমাস আগে আমার বাবা ইয়াহিয়া বার্মেকিকে নিয়োগ দেওয়া হয় আজারবাইজানের গভর্নর হিসেবে। এ নিয়োগ একদিকে যেমন ছিল বার্মেকি পরিবারের জন্য আনন্দ ও সম্মানের বিষয়, অন্যদিকে তার চেয়েও অসম্মান আর মর্যাদাহানিকর ঘটনা আঘাত করল পরিবারের সবচেয়ে মর্যাদাবান মানুষটি অর্থাৎ খালিদ ইবনে বার্মেকিকে_[চলবে]

শেয়ার করুন