যশোরে আতঙ্কের নাম ‘পুলিশ’

0
628
Print Friendly, PDF & Email

যশোরে এখন আতঙ্কের নাম ‘পুলিশ’। একের পর এক গুলিবিদ্ধ হচ্ছে মানুষ। আর এতে করে কেউ কেউ চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। গত দুই মাস ধরে এই আতঙ্ক আরও বেশি বেড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এ সময়ে অন্তত ২৬ জন পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন দুই জন।

আবার ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অপহৃত হয়েছে বেশ কয়েকজন। এছাড়া খুন-গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড লেগেই আছে জেলাজুড়ে।

অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে নিশ্চিন্ন করতে বিশেষ মিশন নিয়ে এখানে এসেছেন।

তবে যশোর পুলিশের মুখপাত্র (সহকারী পুলিশ সুপার) রেশমা শারমিন জানান, গত দুই মাসে জেলায় ২৩ জন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে তারা সবাই সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

এদিকে যশোরের বর্তমান পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপরাধের অভিযোগ। তার পূর্বের কর্মস্থলে খুন-গুম, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি যশোর জেলার আগে নোয়াখালীতে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় সেখানে তৌহিদুর রহমান নামে এক বিএনপি নেতাকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে খুন-গুম, অপহরণসহ নানা অভিযোগ তোলেন বিএনপি নেতারা। এরপর তাকে নোয়াখালী থেকে যশোরে বদলি করা হয়।

জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত দুই মাসে তাদের ৬ নেতাকর্মীকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে চিরতরে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

গত ২৫ মার্চ যশোরে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন আনিসুর রহমান। যোগদান করেই পরদিন তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের কোনো অপোস নেই। কিন্তু সন্ত্রাস দমনের নামে পুলিশই এখন মূর্তিমাণ আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে এ জেলার মানুষের কাছে। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তার স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা। তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা (নেত্রকোনা-শেরপুর) আসনের সংসদ সদস্য। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ পরপর দুই বার সরকার গঠন করলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে তিনি নিজেই এখন অপরাধ করছেন বলে মনে করছে জেলার মানুষ।

গত  ১৪ মে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যশোর শহর শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম মোড়ল। এদিন সকালে চুরমনকাঠি এলাকা থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই আবুল খায়ের। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায়। তিনি যশোর এমএম কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে শহীদ মশিউর রহমান ‘ল’ কলেজে পড়াশুনা করছেন।

যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার রাতে পুলিশ তার চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর গাড়ি থেকে নামিয়ে একজন প্যান্ট উচু করে ধরে, আরেকজন পায়ে গুলি করে। জাহিদুলকে আটকের পর তাকে ক্রাসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবিও করা হয়। পরে দুই লাখ টাকা ও একটি পায়ের বিনিময়ে জীবনে রক্ষা পায় জাহিদুল ইসলাম।

একই দিন দুপুরে যশোর সদর হাসপাতালে এক রোগীর খাবার দিতে যান শহরের রেলগেট এলাকার আবুল কাশেম। তাকে পুলিশ হাসপাতাল থেকে আটক করে। এরপর চাঁচড়া ফাঁড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। রাতে চোরমারা দিঘিরপাড় এলাকায় নিয়ে তার পায়ে গুলি করে।

পুলিশের অভিযোগ, আবুল কাশেম ১২টি মামলার আসামি। রাতে আবুল কাশেমের স্বীকারোক্তিতে শহরের খড়কি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার অনুসারীরা পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। তখন পালাতে গিয়ে আবুল কাশেম গুলিবিদ্ধ হন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাশেম জানান, পুলিশ রাত ১টার দিকে তাকে চোরমারা দিঘিতে নিয়ে যায়। এরপর দিঘির মাঝখানে ফেলে দেয়। পরে দুজন তার পিঠের ওপর ওঠে বসে। এ সময় এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ওই সময় চিৎকার করলে পুলিশ তার পায়ে এক রাউন্ড গুলি করে। তারপর আরো চার/পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুড়ে ধর ধর বলে চিৎকার করে। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

এর আগে ১১ মে জেলার অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শিবির নেতা সুলাইমান কবির গুলিবিদ্ধ হন। আহত শিবির নেতা উপজেলার বনগ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি যশোর আল-হেরা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি। আহত শিবির নেতা সুলাইমান কবির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানিয়েছেন, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে পায়ে গুলি করেছে।

তিনি জানান, ঘটনার দিন দুপুরে তিনি ধান বিক্রি করতে অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজারে যান। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। গভীর রাতে অভয়নগর থানা পুলিশ তার চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে প্রেমবাগ এলাকায় এনে গুলি করে।

চলতি মাসের ৭ মে জেলার মণিরামপুর উপজেলায় পুলিশের গুলিতে আলী কদর নামে এক শিবিরকর্মী আহত হন। উপজেলার জয়পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলী কদর সাংবাদিকদের জানান, ফসলের মাঠে কর্মরত অবস্থায় পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তার ডান পায়ে গুলি করে।

এর আগে ৪ মে যশোরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের গুলিতে দুই দুর্বৃত্ত আহত হয়। শহরতলীর বাদাদুরপুরের রজনীগন্ধা ফিলিং স্টেশনের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন, শহরের চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার করিমুল ইসলামের ছেলে আরিফ হোসেন ও আবদুর রবের ছেলে রানা। পুলিশের দাবি, গুলিবিদ্ধ দুজনই ডাকাত। তারা ওই ফিলিং স্টেশনে ডাকাতির চেষ্টা করছিল।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফ হোসেন জানান, ৪ মে দুপুরে দেড়টার দিকে খাজুরা রাজারে মোটরসাইকেল মেরামত করতে গেলে পুলিশ তাকে ও রানাকে আটক করে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানায় নিয়ে আসার পথে রজনীগন্ধা ফিলিং স্টেশনের পেছনে নিয়ে গুলি করে।

আরিফ আরো জানান, গত ৪ বছরে কোনো রাজনীতি কিংবা অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে পায়ে গুলি করেছে। তার সংসারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে।

এর আগে গত মাসের ৩০ এপ্রিল জেলার মণিরামপুর উপজেলায় রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবককে গুলি করে পুলিশ। তিনি উপজেলার আমিনপুর গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে।

মণিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক ওই দিন জানান, রফিকুল ইসলামের নামে মণিরামপুর ও কেশবপুর থানায় বেশ কয়েকটি মামলা আছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, রাত ৯টার দিকে মণিরামপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সারা রাত থানায় রেখে ভোরে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গুলি করে।

২৯ এপ্রিল যশোরে পুলিশের গুলিতে মজনু নামে এক ব্যক্তি আহত হন। তিনি সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামের হাশমত আলীর ছেলে।

কোতোয়ালী থানার এএসআই রবিউল আলম পলাশ দাবি করেন, মজনু একজন ডাকাত। মজনু ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে দুটি হাতবোমা ছোঁড়ে। এতে আসাদ নামের এক কনস্টেবল আহত হন। পুলিশ এ সময় পাল্টা গুলি চালালে মজনু আহত হন। তার ডান পায়ের হাঁটুতে এক রাউন্ড গুলি বিদ্ধ হয়েছে।

তিনি জানান, মজনুর বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ চার/পাঁচটি মামলা রয়েছে।

একই দিন (২৯ এপ্রিল) শিবিরের দুই নেতাকে ধরে নিয়ে গুলি করে আহত করে পুলিশ। তারা হলেন, সংগঠনের যশোর জেলা পশ্চিম শাখার সেক্রেটারি রুহুল আমিন এবং শার্শা উপজেলা কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম।

পুলিশের দাবি, স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধারে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শিবিরের ওই দুই নেতা আহত হন।

তবে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ রুহুল আমিন জানান, সকালে তাদের আটক করা হয়। দুপুরে তাদের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। মধ্যরাতে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তাদের গুলি করে আহত করে।

ওই দিন পুলিশ সাংবাদিকদের কাছে শিবির নেতাকর্মীদের আটকের কথা স্বীকার করতে চায়নি। এরপর মধ্যরাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।

আহত রুহুল আমিন ঝিকরগাছা উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান শেষবর্ষের ছাত্র এবং ইসলামী ছাত্রশিবির জেলা পশ্চিম শাখার সেক্রেটারি। আবুল কাশেম শার্শার অগ্রভুলট গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে। তিনি এমএম কলেজে ইসলামের ইতিহাসের প্রথমবর্ষের ছাত্র এবং শার্শা উপজেলা শিবিরের সভাপতি।

সূত্র জানায়, ৩০ মে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তাহের নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।  শহরতলী ঝুমঝুমপুর এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত তাহের শহরতলী ঝুমঝুমপুর নিরিবির এলাকার মৃত সোনা মিয়ার ছেলে।

যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসীরা ময়লাখানায় গোপন বৈঠক করছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এসময় সেখানে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত তাহের একজন মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন তিনি।

গত ৩১ মে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফিঙে লিটন বাহিনীর সদস্য মাসুদুর রহমান নান্নু (৩৮) গুলিবিদ্ধ হন। এসময় সবুজ নামে এক কনস্টেবল আহত হন।

যশোর কোতোয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জহুরুল আলম জানান, ভারতে পালাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফিঙে লিটন বাহিনীর সদস্য মাসুদুর রহমান নান্নুকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে মনিহার এলাকা থেকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ শহরতলীর ভাতুড়িয়া এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে নান্নুর সহযোগীরা পুলিশের উপর বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। এসময় কনেস্টবেল সবুজ আহত হন।

পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টাগুলি ছুঁড়লে পায়ে গুলিবিদ্ধি হয় নান্নু। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি ও ৫টি বোমা উদ্ধার করে।

২৭ এপ্রিল যশোরে পুলিশের গুলিতে আনোয়ার নামে এক ‘ছিনতাইকারী’ গুলিবিদ্ধ হন। শহরের চাঁচড়া বধ্যভূমি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। আনোয়ার চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার ফারুক হোসেনের ছেলে।

২৩ এপ্রিল যশোরের অভয়নগর উপজেলার শংকরপাশায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাইফুল ইসলাম শিকারী নামে এক যুবক নিহত হন। ‘বন্দুকযুদ্ধের’ সময় তার সহযোগীদের ছোঁড়া গুলিতে সাইফুল মারা যায় বলে দাবি করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র এএসপি (সদর সার্কেল) রেশমা শারমিন জানান, সাইফুলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ ডাকাতি ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে আটটি মামলা রয়েছে।

২২ এপ্রিল মুহাইদ হোসেন নামে ছাত্রশিবিরের সাবেক এক নেতাকে গুলি করে আহত করে পুলিশ। আহত মুহাইদ হোসেন ২০১১ মেয়াদে সরকারি সিটি কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত। শহরতলীর হামিদপুর ময়লাখানার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের দাবি, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে।

তবে মুহাইদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাবি করেছেন, তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে থানায় রাখা হয় এবং পরে নির্জন স্থানে নিয়ে গুলি করে জখম করা হয়।

তার বাবা আব্দুস সালাম হাসপাতালে এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমি যা বলবো তা সব লেখো কিনা? লেখার পর আমি কোনো বিপদে পড়বো কিনা?’

৮ এপ্রিল যশোরে মনু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে আহত করেছে পুলিশ। মনু মিয়া শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত ফজের আলীর ছেলে।

পুলিশের দাবি, মনু মিয়া আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনু মিয়ার অভিযোগ করেন, ‘আমি যশোর-বেনাপোল রুটের বাসের হেলপার। পুলিশ শহরতলির পুলেরহাট এলাকা থেকে আমাকে ধরে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। গভীর রাতে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে পুলিশ পায়ে গুলি করে।’

১ এপ্রিল যশোরে আল-আমিন নামে এক যুবক পুলিশের গুলিতে আহত হন। পুলিশের দাবি, ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাকে গুলি করা হয়। তবে আল-আমিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গুলি করেছে।

পুলিশ সুপার আনসুর রহমান যোগদানের পরদিন (২৬ মার্চ) যশোরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইসরাফিল নামে এক যুবককে আটক করে।

পুলিশের দাবি, তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি শ্যুটারগান, দুই রাউন্ড গুলি, একটি রাম দা, বার্মিজ চাকু ও দড়ি।

আর এভাবে যশোরের পুলিশ কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে অন্তত ২৫ জনকে গুলিবিদ্ধ করেছে। যার অধিকাংশ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। অনেকের পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকরা।

যশোর বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলিবিদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে জেলা পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র এএসপি (সদর সার্কেল) রেশমা শারমিন বলেন, গত দুই মাসে যারা বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তারা সবাই অপরাধী। এদের সকলের নামে মামলা রয়েছে। যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাদের সবার কাছ থেকেই অস্ত্র পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, পুলিশের যেকোনো তথ্য জানতে মিডিয়া সেলের (সহকারী পুলিশ সুাপার রেশমা শারমিন) সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি সব জানাতে পারবেন।

শেয়ার করুন