নওগাঁর সাপাহারে পুলিশের উপস্থিতে ৬০ ভূমিহীনদের বসতবাড়ি দখলে নিল আদিবাসীরা

0
289
Print Friendly, PDF & Email

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের হাঁপানিয়া শিয়ালমারী গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৮বিঘা অর্পিত খাস সম্পত্তির উপর বসবাসরত ৬০টি ভূমিহীন পরিবারকে তাড়িয়ে দিয়ে বসতবাড়ীর জবর দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আর একদল ভুমিহীন আদিবাসীরা৷
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পুলিশের উপস্থিতিতে বসবাসরত ভুমিহীনরা কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘর-বাড়ির তালা ভেঙ্গে বসতবাড়ী জবর দখল নেয়৷ এদিকে সরকার যখন খাস সম্পত্তি ভুমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দিচ্ছেন৷ ঠিক সেই মুহূর্তে আদিবাসী ভুমিহীনরা অন্য স্থানে বরাদ্দ না নিয়ে ঘটনাস্থলের সম্পত্তি জবর দখল করার ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাঁপানিয়া মৌজার ১৩৪ খতিয়ানের ৭২৮,৭২৯,৭৩০ দাগের প্রায় ৮ বিঘা সম্পতির মালিক ছিলেন তত্‍কালিন জমিদার খিতিশ চন্দ্র রায়৷ তিনি ১৯৫৬ সালে জমিদারীর সম্পত্তি ফেলে ভারতে চলে যান৷ এরপর থেকে জমিটি অর্পিত খাস হিসাবে চিহৃত হয়ে আসছে৷ কিছুদিন আগেও পাশের পোরশার উপজেলার মামুন শাহ নামে এক প্রভাবশালী জোতদার বিপুল পরিমানের ওই খাস জমিটি দাপটের সাথে ভোগদখল করে আসছিলেন৷
শিয়ালমারী এলাকার ভুমিহীনরা জানতে পারেন ওই সম্পত্তি অর্পিত খাস সম্পত্তি৷ সরকারী খাস সম্পত্তি হিসেবে গত ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের দিকে ভুমিহীন নেত্রী হাসিনা বেগম, ইউসুফ আলী, সোলাইমান আলীর নেতৃত্বে সংঘঠিত হয়ে ১০টি আদিবাসী পরিবারসহ ৬০টি পরিবার সেখানে বসবাস শুরু করে৷ এ ঘটনায় ওই এলাকার প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে ভুমিহীন পরিবারগুলো৷ বিভিন্ন সময়ে তাদের উপর উচ্ছেদের হুমকী পুলিশী হয়রানী চলতে থাকে৷
সেখানে বসবাসরত হাসিনা বেগম, নূর জাহান, সামসুন নাহার শাহিনুর বেগমসহ ওই পলস্নীর অনেকেই জানান, ঘটনার মঙ্গলবার সকালে গ্রামের পুরষ লোকজন প্রতিদিনের মত কাজে চলে যায়৷ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই দিন বেলা ১১টার দিকে প্রথমে সাপাহার থানার এসআই শাহিন ও দুই জন কন্সটেবল নিয়ে পলস্নীতে এসে এই জায়গা ফাঁকা করে দিতে বলেন৷ এই কথা বলার সাথে সাথে আশে পাশের আদিবাসী পাড়ার শতশত লোকজন ওই বসতি হামলা চালিয়ে মহিলাদের মারপিট শুরম্ন করে৷ এসময় ওই বসতির নূরজাহার, সামসুন নাহার ও সাহিনুর বেগম তাদের হামলার শিকার হয়৷
পরে তারা একে একে ঘরের তালা ভেঙ্গে বসতবাড়ী গুলো জবর দখল করে নেয় এবং বসবাসকারীদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়৷ এই ঘটনার পর বসতবাড়ি হারিয়ে ভুমিহীন পরম্নষ-মহিলারা পাশের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়৷ তবে তারা পুনরায় ওই সম্পত্তি ফিরে পেতে আবারো সংগঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ এতে করে ওই দুই ভুমিহীনরা এখন মুখোমুখি৷ যে কোন সময় রক্তৰয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী৷
সরজমিনে দেখা দেছে, ওইদিন বিকেল থেকে বুধবার দুপূর পর্যনত্ম ওই পলস্নী জবরদখলকারীরা পুরো গ্রামে ঘিরে রেখেছে৷ মূল রাসত্মায় পাহারা বসানো হয়েছে৷ জবর দখলকারীদের নেতা রবিলাল এক্কা বলেন ওই বিবাদমান সম্পত্তি নিয়ে প্রায় ৯/১০ বছর ধরে আদালতে মামলা চলে আসছে৷ উপর মহলের নির্দেশেই ওই সম্পত্তি দখল করা হযেছে৷ এব্যাপারে নওগাঁ জেলা বাসদের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন জেলায় খাস জমির সংকট নেই৷ যেখানে সেখানে আদিবাসীদের খাস সম্পত্তি বন্দোবসত্ম দেওয়া যেত৷ এছাড়া সেখানে পুলিশের উপস্থিতি বিষয়টি প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে৷ পুলিশ এই প্রথম কোন আদিবাসীদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে৷ তিনি বলেন বিকল্প ব্যবস্থা না করে কোন ভুমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি৷
এব্যাপারে সাপাহার থানার ওসি নূর ইসলাম সেখানে পুলিশের উপস্থিতি একদম অসম্ভব উলেস্নখ করে বলেন, বুধবার বিকেল পর্যনত্ম থানায় এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি৷
এ ব্যাপারে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রম্নহুল আমিন জানান, ঘটনা তদনত্ম করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷#

শেয়ার করুন