নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন: ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জড়িয়ে দায় স্বীকার সাবেক ২ র্যাব কর্মকর্তার

0
129
Print Friendly, PDF & Email

এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশে নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে চাকরিচ্যুত র‌্যাব-১১’র সাবেক কর্মকর্তা মেজর (অব.) আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) এম এম রানা। তারা কেবল আদেশ পালন করেছেন।

সাবেক এই দুই র‌্যাব কর্মকর্তার আদালতে দেওয়া জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসাইন খান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রথম স্বীকার করেন মেজর (অব.) আরিফ হোসেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারিক হাকিম কে এম মহিউদ্দিন। ৩৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে মেজর আরিফ অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন। এরপর বৃহস্পতিবার একই আদালতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন রানা। জবানবন্দিতে তিনি র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রায় ৩০ পৃষ্ঠার।

তিনি আরো জানান, আরিফ ও রানা নিজেরা যে বাহিনীর হয়ে কর্মরত ছিলেন সেই নির্দিষ্ট বাহিনীটিরই একটি শীর্ষ পদে কর্মরত এক কর্মকর্তার নামও উল্লেখ করেছেন তারা।

তিনি জানান, অপহরণের কৌশল, অপহরণের পর অপহৃতদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কোথায় ও কিভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছিল, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিলেন এবং হত্যার নির্দেশ কারা দিয়েছিলেন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন আরিফ এবং রানা। এমনকি কোথা থেকে ও কিভাবে ইট, বস্তা ও রশি সংগ্রহ করা হয়েছিল, কিভাবে মৃতদেহগুলোকে বাঁধা হয়েছিল, অপহরণের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে কোন কোন যানবাহন ব্যবহার করা হয়েছিল এবং শীতলক্ষ্যা নদীতে মৃতদেহগুলো কিভাবে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এসবকিছু সম্পর্কেই স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে জানিয়েছেন তারা।

তিনি আরো জানান, তারা দু’জন ইতিমধ্যে সাত খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের জবানবন্দিতে জানা যায় পুরো কিলিং মিশন তারেক সাঈদ নিজে উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করেছেন। যেভাবে সাতজনকে খুন করা হয়েছে তার লোমহর্ষক বিবরণ দিয়েছেন তারা। এ হত্যায় পরিকল্পনাকারীর একজন হয়ে তারেক সাঈদ পুরো কিলিং মিশন মনিটরিং করেছেন। জবানবন্দিতে বের হয়ে এসেছে এ হত্যায় নূর হোসেনের হয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে কাজ করেছেন। এ হত্যায় র‌্যাবের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নিম্নপদস্থ কারা কারা জড়িত তা বের হয়ে এসেছে। তারেক সাঈদ এ কিলিং মিশন করে পবিত্র একটি বাহিনীকে কলঙ্কিত করেছেন।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত ওই তিন কর্মকর্তা বারবারই অপহরণ ও হত্যার ওই আদেশ শীর্ষ পদের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে তারা পেয়েছিলেন যা অগ্রাহ্য করা তাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। বুধবার আরিফ তার বক্তব্যে যা যা স্বীকার করেছেন তার সঙ্গে বৃহস্পতিবার রানার দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যের বেশ মিল রয়েছে।

তিনি জানান, মেজর (অব.) আরিফ তার দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে ২৩ জন র‌্যাব সদস্য এবং রাজনৈতিকভাবে খ্যাত গডফাদারসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেছিলেন। আর আরিফের উল্লেখ করা নামগুলোই স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় রানাও উল্লেখ করেন এবং এসব নামের মধ্যে তাদের নামও রয়েছে যারা এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি পর্যায়ের কথাই ধাপে ধাপে বর্ণনাও করেছেন তিনি। পুরো ঘটনাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি পরিষ্কার বর্ণনা প্রদান করেছেন তিনি যা রেকর্ডও করেছে আদালত।

আইনজীবী সাখাওয়াত জানান, সবকিছুই সবাই জানতে পারবে। কিন্তু চলমান তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে র‌্যাব-১১’র সাবেক তিন কর্মকর্তাকে কিছুদিন আগে গ্রেফতার করা হয়। এই তিনজনের মধ্যে শুধু র‌্যাব-১১’র প্রধান চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দেননি।

শেয়ার করুন