নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়ায় আদালত অবমাননা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।
চট করে র্যাব বন্ধ করা সম্ভব না: শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আদালতের নজরে আনলেন আইনজীবী
এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত না থাকায় আদালতের ‘সাহস’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের নেতা খন্দকার মাহবুব বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদেও রয়েছেন।
জাপান সফর নিয়ে গত শনিবার শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য বুধবার সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্ট বিভাগের নজরে আনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান সর্বোচ্চ আদালতের এই আইনজীবী।
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা, শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে
শেখ হাসিনা, শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে
এক পর্যায়ে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “কী, কনটেম্প করবে? আমি পরোয়া করি না।”
তার ওই বক্তব্য পরদিনই বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চের নজরে এনেছিলেন আইনজীবী তামজিদা মিলা।
খন্দকার মাহবুব বুধবার আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্বলিত দৈনিক ডেইলি স্টারের দুটি প্রতিবেদন আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন এজলাসের নজরে আনেন।
প্রধান বিচারপতি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আনতে বললে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে যান তিনি।
আদালত কোনো আদেশ না দিয়ে পত্রিকা দুটি নথিতে রেখে দেয়। তামজিদা মিলা নজরে আনার পরও একই বক্তব্য এসেছিল আদালতের।
দুই আদালত থেকে ফিরে খন্দকার মাহবুব সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সাংবাদ সম্মেলনে আসেন।
তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই, যে বক্তব্য এসেছে; সেটা অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের (সাংবাদিকদের) সামনে বলেছেন, তিনি আদালত অবমাননাকে ভয় পান না। এটাও আদালতের প্রতি চরম অবমাননাকর।”
“আমরা দেখেছি, ছোটখাটো ব্যাপারে আদালত কথায় কথায় দেশের মাননীয় ব্যক্তিদের এনে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
অথচ এখানে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকা সত্ত্বেও, সরাসরি আদালতকে কটাক্ষ করা সত্ত্বেও আমাদের প্রধান বিচারপতি ও সংশ্লিষ্ট বিচারপতি এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই।”
খন্দকার মাহবুব হোসেন (ফাইল ছবি)
খন্দকার মাহবুব হোসেন (ফাইল ছবি)
খন্দকার মাহবুব মনে করেন, এই ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বিচার বিভাগের দুর্বলতা প্রমাণ করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের তরফে যতটুকু করার ছিল, আমরা করেছি, যেখানে সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। সংবিধানের ১০৮ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট যে কোনো ব্যাপারে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করতে পারে।
“তখনকার দিনে আদালতের যে ভাবমূর্তি ছিল, সাহসী ভূমিকা ছিল, আজকে সেই সাহসী ভূমিকার হয়তবা অভাব দেখা দিয়েছে। নতুবা সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।”
সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “নতুবা বিচার বিভাগ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম নয় বলে আমরা মনে করব।”