নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, একটি মহল আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে।
আগামী ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ আসন থেকে ইতোমধ্যে ছয়জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সিটি মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এ আসনের সাবেক এমপি এস এম আকরাম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। আইভীর অপর ঘনিষ্ঠজন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বির মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হলেও তিনি আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ তিন নেতা ২০০৩ সালের পৌরসভা ও ২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন। তাদের মধ্যে আকরাম ও আনোয়ার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আইভীর পক্ষে কাজ করেন।
যদিও এ দু’জনই ইতোমধ্যে মেয়র আইভীর সমর্থন চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা আইভী তাদেরকে সমর্থন দিয়ে ঋণ শোধ করবেন কিংবা দায়িত্ব পালন করবেন।
উপনির্বাচনে এ আকরাম ও আনোয়ার প্রার্থী হলেও তাদের কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্নের। আগামী ৯ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা যাবে তাদের দু’জনের একজন থাকবেন না দু’জনই অটল থাকবেন ভোট নিয়ে।
এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরে জাতীয় পার্টি এ আসনে সেলিম ওসমানকে মনোনীত করে যিনি এ আসনের প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের ছোটভাই।
এরই মধ্যে খবর ছড়িয়েছে, রোববার রাতে ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর বাসায় তার উপস্থিতিতে আকরাম ও আনোয়ারের মধ্যকার একটি সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। এতে আকরাম ও আনোয়ারের মধ্যে অনেক বাদানুবাদ হয়েছে।
মঙ্গলবার ওই খবর নিয়ে নারায়ণগঞ্জে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। খবরের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হয় এস এম আকরামের সাথে। তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
যোগাযোগ হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর সাথে। তার সাফ জবাব, এটা গভীর ষড়যন্ত্র। নির্বাচনে একটি মহল ভীত হয়েই এ ধরনের প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে রোববার রাতে আমার বাসায় কোনো ধরনের সমঝোতা হয়নি। এটা নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
তথ্যসন্ত্রাসের শিকার দাবি করে আইভী বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে আমি তথ্যসন্ত্রাসের শিকার হচ্ছি। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের কারণে একটি মহল চাচ্ছে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে।
আইভী আরো বলেন, ‘বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ও পরেও ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এবার যোগ হয়েছে তথ্যসন্ত্রাস। উপনির্বাচন নিয়ে প্রার্থী হওয়ায় এস এম আকরাম, আনোয়ার হোসেনের সাথে আমার উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট একটি খবর। বিষয়টি আমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।’
‘সাংবাদিকদের আরো খোঁজখবর নিয়ে সংবাদ পরিবেশনেরও তাগিদ দেন আইভী। একই সাথে তিনি ওই খবরে কোনো ধরনের সত্যতা থাকলে তার প্রমাণ দেখাতে বলেছেন।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেছেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ছড়াচ্ছে। কারো সাথে আমার কোনো সমঝোতা বৈঠক হয়নি। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কোনো সিটিং, মিটিং অথবা বসা তো দূরের কথা কিছুই হয়নি।
ভোট প্রতিহত করবে বিএনপি : এ দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি এস এম আকরাম বলে আসছেন বিএনপির লোকজনের সাথে তার কথা হয়েছে। বিএনপি তার ভোটের ভরসার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ বিএনপি দাবি করেছে, আগের নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনও বয়কট করবে বিএনপি। সেই সাথে নির্বাচন কঠোরভাবে প্রতিহত করবে তারা।
গত ২৫ মে এক সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন এস এম আকরাম। সেদিন তিনি বলেন, বিএনপির বড় একটি সমর্থন পাবো আশা করছি। গত ১ জুন মনোনয়নপত্র বাছাই শেষেও উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে আকরাম বলেছিলেন, সব দলের ভোটই আমি পাবো। তবে বিএনপি বলছে, জাতীয় নির্বাচন আমরা অনেক আগেই বয়কট করেছি। তাই এই নির্বাচনও বয়কট করব। সেই সাথে চলমান আন্দোলনকে গতিশীল করতেই এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা বিএনপির।
এস এম আকরামের দাবির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এস এম আকরাম যদি দাবি করেন বিএনপির ভোট তার ভরসা তাহলে সেটা অমূলক। আর যদি এ দাবি করেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ উনার সাথে আছেন সেটাও অমূলক। কারণ আমরা জাতীয় নির্বাচন বয়কট করেছি। তাই বিএনপি এ উপনির্বাচনও বয়কট করবে।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল বলেন, আমরা তো এ নির্বাচন প্রতিহত করব। যেহেতু বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না সেহেতু বিএনপির লোকজন ভোটও দেবে না।