পহেলা জুন ছিল নারায়ণগঞ্জ উপনির্বাচনের যাচাই-বাছাই। প্রার্থী ছিল আটজন_ এস এম আকরাম, আলহাজ আনোয়ার হোসেন, রফিউর রাব্বী, আবু হামিদুর রহমান পরশ ভাসানী, সেলিম ওসমান, অ্যাডভোকেট মামুন সিরাজুল মজিদ, মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার ও ইকবাল সিদ্দিকী। আগেভাগে ঠিক সময়ে ডিসির সম্মেলন কক্ষে গিয়েছিলাম। শতাধিক চেয়ার ছিল সেখানে। একপাশে বেশ বড় বড় ছয়টি, বাকিগুলো ছোট ছোট এক সমান। বড়গুলো ছেড়েই বসেছিলাম। বহু বছর আগে একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখি বাবা ইজি চেয়ারে শুয়ে গুড় গুড় শব্দে শাহী বা ফুর্শি হুঁকা টানছেন। মা তার পাশে বসা। আমায় ডাকলে মা’র পাশে গিয়ে বসলাম। নানা উপদেশের মাঝে বললেন, ‘মানুষের জীবনে বিবেচনা হলো সব থেকে বড়। যার বিবেচনা বোধ নেই সে পশুর অধম। শুনি সব সময় সভা-সমিতি মজলিসে ঘুরো। কোনো জমায়েতে এমন জায়গায় বসবে না যার জন্য তুমি যোগ্য নও। কাউকে ইচ্ছা করে নিজের আসন দিতে হয় সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু অন্যের আসন দখল করে কখনো বসো না। আসনের জন্য তোমাকে যেন ছুটতে না হয়, বরং আসনই যেন সব সময় তোমার জন্য ছুটে। আসনের জন্য কোনো দিন নিজেকে বড় ভেবো না। সারা জীবন চেষ্টা করো, তোমার জন্য যেন আসন বড় হয় অথবা বড় ভাবে।’ কলেজ জীবনে মায়ের কথার ভাবার্থ তেমন বুঝিনি। এখন বয়স হয়েছে, এখনও যদি না বুঝি তাহলে আর কবে বুঝব? তাই সব সময় সংযত থাকি। সে কারণেই বড় চেয়ার ছেড়ে ছোট চেয়ারে বসেছিলাম। মনে করেছিলাম, দেশের কর্মচারীরা ওগুলোতে বসবে, মালিকরা বসবে ছোটগুলোতে। তাই আমিও ছোটগুলোর একটাতে বসেছিলাম। যাচাই-বাছাইয়ের সময় ঘর ভরে গিয়েছিল। অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ছাড়া আর কেউ বেশি কথা বলেনি। খোকন সাহাও তেমন খারাপ কিছু বলেনি। বরং যা বলেছে ভালোই বলেছে। সবদিক থেকে বিচার করলে যাচাই-বাছাই মোটামুটি ভালোই হয়েছে। বাছাই পর্ব সাধারণত যেভাবে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো হয়েছে। এ জন্য রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারে। হুজুর মওলানা ভাসানীর নাতি, আবু নাসের খান ভাসানীর ছেলে বিএনএফ-এর প্রার্থী আবু হামিদুর রহমান পরশ ভাসানীর মনোনয়ন গ্রহণ করেনি, করার কোনো উপায়ও ছিল না। প্রস্তাবক-সমর্থক দুজনই নির্বাচনী এলাকা-৫ এর ভোটার নন। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী যে কেউ হতে পারে কিন্তু প্রস্তাবক-সমর্থককে নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হয়। তার প্রস্তাবক-সমর্থক কেউ ৫ আসনের ভোটার নয়। তবে আগে তারা ভোটার ছিল। রিটার্নিং অফিসারকে বলেছি, ঘুরেফিরে এমনই হয়। কত নাম-গোত্রহীনরা নির্বাচন করে আর হুজুর মওলানা ভাসানীর নাতির মনোনয়নপত্র বাতিল হয় এটা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। মনোনয়নপত্র আরও বাতিল হয়েছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকি মঞ্চের আহ্বায়ক বা নেতা ত্বকির বাবা রফিউর রাব্বীর। ঋণখেলাপি অজুহাতে তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তবে জনাব রাব্বী যুক্তি দিয়েছেন, ২০১৩ সালের জুলাই মাসের এক আইনবলে কোনো যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা অংশীদারকে ঋণখেলাপি বিবেচনা করা হয় না বা হবে না। হতেও পারে। আইনটি পড়ে দেখিনি। এখন দেখব। আমি বাইরের মানুষ, তাই নারায়ণগঞ্জের ভিতরের খবর জানি না। যাচাই-বাছাই শেষে বেরুবার সময় শামীম ওসমানের সঙ্গে দেখা। প্রার্থী সেলিম যাচাই-বাছাইয়ে যায়নি। শামীম জনাব রাব্বীকে বারবার বাজে লোক বলে শাউড করছিল। তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জে যে ক’বার গেছি তাতে রাস্তাঘাটে শুনেছি তিনি নাকি ছেলের লাশ নিয়ে রাজনীতি করছেন। কেউ কেউ তার নির্বাচনে দাঁড়ানোটা ভালোভাবে নেননি। আবার কেউ কেউ পক্ষে আছেন যেমনটা এখন সর্বত্র হয়; বাপ মরলে ছেলে, স্বামী মরলে স্ত্রী। তাছাড়া বাদবাকি মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে তেমন কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার ২০০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা দিয়েছিল। অতিরিক্ত ৫০ টাকার স্ট্যাম্প তখনই সংযুক্ত করায় মনোনয়ন গ্রহণ করা হয়েছে। ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ উপনির্বাচনে খুব সম্ভবত ৫ জন প্রার্থী হবেন। ২ জন দলীয়, ৩ জন স্বতন্ত্র। ২ জন দলীয় প্রার্থীর মধ্যে একজন জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান। সেলিম একজন ব্যবসায়ী। কখনো রাজনীতি করেনি। শামীম তাকে হাতে ধরে জাতীয় পার্টিতে দিয়েছে। আগে রাজনীতি ছিল আদর্শ ঘিরে। এখন রাজনীতি চাকরির মতো। কোনো নীতি-আদর্শের প্রয়োজন নেই। নাসিমের সিট সেলিম নেবে। জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগ ভাই ভাই। অন্যদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দুজন মনোনয়ন দাখিল করেছিল_ শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার এবং ইকবাল সিদ্দিকী। যাচাই-বাছাইয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য দুজনকে প্রতীক দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ারের মনোনয়ন গৃহীত হয়েছে, সেহেতু ইকবাল সিদ্দিকী তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিবেন। দেশে এখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ছড়াছড়ি। তারা ভালোমন্দ পারে না এমন কোনো কাজ নেই। তবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নিরলস কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মন্দের চেয়ে ভালোটাই করেন বেশি। নারায়ণগঞ্জে ত্বকি হত্যা, ৭ অপহরণ, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যানকে পুড়িয়ে অঙ্গার করা_ এসব ঘটনা ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া যেভাবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে প্রকৃত পাহারাদারের ভূমিকা পালন করেছে তাতে তারা সমগ্র জাতির হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও সাধুবাদ পেয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক পাওয়ার অধিকারী তারা। তারা দেশের কাজ, জাতির কাজ করেছে। আর কাকে দেশের কাজ বলে? এসবই তো শ্রেষ্ঠ দেশের কাজ। বেরিয়ে আসার সময় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাদের বলেছি, যাচাই-বাছাই বেশ ভালো হয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাস নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে দেশবাসীর মনে যে ভয় ও দুশ্চিন্তা কাজ করছে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংগ্রহে যে সততা দেখলাম তাতে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় হৃদয় ভরে গেছে। নির্বাচনের আগেই ৩৬২৪ জন ভোটারের সমর্থন আদায় বা সংগ্রহ খুব একটা ছেলেখেলা নয়। যদিও তার মধ্যে কতটা ভুলত্রুটি ছিল বুঝতে পারিনি। তবে সেই তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশন ১০ জন করে ভোটারের খোঁজ নিতে রিটার্নিং অফিসারকে যে দায়িত্ব দিয়েছিল তারা তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করেছেন। বিশেষ করে ২ জন ভোটার যে প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে পরে অস্বীকার করেছিলেন রিটার্নিং অফিসার সেই ভোটারের জাতীয় আইডি কার্ডের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখেছেন উভয় স্বাক্ষর এক। তাদের এই কাজটি খুবই প্রশংসাযোগ্য। আজ ক’দিন শ্বাস ফেলতে পারছি না। চারদিকে একই অভিযোগ। কখনো কখনো মনে হয় সবাই বুঝি শলাপরামর্শ করে নিয়েছেন। গ্রামের ভাঙা কুটির থেকে রাজার প্রাসাদ সর্বত্রই একই ধ্বনি, তারেক এসব কী বলছেন? আপনি কিছু করুন। এই সেদিন যশোরের এক প্রবীণ আওয়ামী লীগার ফোন করেছিলেন_ ‘ভাই আর সহ্য হয় না। লন্ডনে বসে বসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কীসব যা তা বলছে এর জন্য মামলা-মোকদ্দমা করা যায় না? কোনো শাস্তি দেওয়া যায় না?’ ভদ্রলোককে বলেছিলাম, আমাকে বলছেন কেন? আমি তো এখন আর আওয়ামী লীগ করি না। ‘তাতে কি? রাজনৈতিক পিতা তো আপনারও।’ কদিন আগে খুবই উচ্চ পর্যায়ের একজনের সঙ্গে কথা হয়, তারও অভিব্যক্তি একইরকম। এক পর্যায়ে বললেন, ‘আপনার বড় ভাই এত গালাগাল করেন, তাচ্ছিল্য করেন সেসব পিতার আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করেন। ছোট বোন রেহানাকে এত আদর-যত্ন, সম্মান করেন। দেশ যে একেবারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একটা কিছু করুন না?’ পাঠক আপনারাই বলুন, আমি কী করতে পারি? কত হাইব্রিড নেতা আছে, আলবদরের ভাই ক্ষমতাবান মন্ত্রী আছেন। যারা বঙ্গবন্ধুর পিঠের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজিয়েছেন তারা অতি বিশ্বস্তের দলে। আর মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ৭ নভেম্বর জিয়া উদ্ধার অভিযানে ট্যাংকের ওপর লাফালাফি করেছেন, তারাই তো এখন আওয়ামী লীগ, তারাই তো সরকার। এখন আমি কীইবা করতে পারি? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বললে এখনো সুস্থ থাকতে পারি না, কেমন যেন বুকের ভেতর একটা চিরচিরে জ্বালা করে। কিন্তু কী করব, বর্তমানে ভালো মানুষের কোথায় কী করার আছে? কত হাইব্রিড নেতারা কত কথা বলছেন, তারেক রহমান একটা উন্মাদ, পাগল আর কত কি! কদিন পর তিনিই হয়তো প্রধান বিরোধী দলের নেতা হবেন, তাকে পাগল-ছাগল বলে কেন গালাগাল করতে যাব? প্রতিদ্বন্দ্বী উন্মাদ পাগল হলে অন্যরা কি? আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান, পৃথিবী সেরা একটা বাহিনী। মূল নেতৃত্বে ছিল আমির আব্দুল্লাহ নিয়াজী। যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য ‘টাইগার’ বলা হতো। আমরা টাইগারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে ‘বাঘা’ হয়েছি। প্রতিপক্ষ শৃগাল হলে আমরা তো আর বাঘ হতে পারতাম না। তাহলে প্রতিপক্ষ কি উন্মাদ, পাগল? তা যদি হয় উন্মাদ আর পাগলের কোনো বিচার নেই, বিচারের সুযোগ নেই। আইনের আওতায় আনতে হলে প্রতিপক্ষকে স্বাভাবিক বলে স্বীকার করতে হবে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বিরোধী দল। স্বাভাবিকভাবেই ষোলআনা সরকারবিরোধী, কিন্তু প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গেও একাত্দ নই। আমাদের মতো আরও অনেকেই নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো দাবি আদায় করতে হলে সবাইকে এক হতে হয়। সব বিরোধী দলের অটুট ঐক্য যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে কিন্তু পতন হবে না। এটা সেই আয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে দেখে আসছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ‘৯৬-র নির্বাচনের আগে জনতার মঞ্চ সবখানেই একই চিত্র দেখা গেছে। এখন যদি প্রধান বিরোধী দল নিজেরাই নিজেকে একশ একশ ভাবে তাহলে যতই লাফালাফি করুন সরকারের পতন হবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা অংশ নেইনি। আমাদের কারণে আরও অনেকেই নেয়নি। বিএনপি সে বিষয় বিন্দুমাত্র অনুভব করে বলে মনে হয় না। উপজেলা নির্বাচনে পাগলের মতো অংশ নিয়েছে। আমাদের সঙ্গে কোনো কথা তো বলেইনি, তাদের জোটের কোনো দলকেও কোনো সিট দেয়নি। আমরা সব খাব, এখন অচল। আমাদের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা কেউ কাউকে গুরুত্ব দেয় না, সম্মান করে না, সবাই নিজেই রাজা তাদের রাজত্বে। সেটা আওয়ামী লীগ যেমন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও তেমন। এই তো নারায়ণগঞ্জে উপনির্বাচন হচ্ছে। শোনা যাচ্ছিল ত্বকির বাবা রফিউর রাব্বীকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি তলে তলে সমর্থন করছে। তলে তলে উপরে উপরে সব চলে কিন্তু রাজনৈতিক সহমর্মিতা, শিষ্টাচার চলে না। প্রধান বিরোধী দল গত বছর ৪ মে মারাত্দক ভুল করেছে। ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া কোনো কাজের কাজ হয়নি। ৫ তারিখ হেফাজতের শাপলা চত্বরের অবরোধের সমর্থনে বিএনপি ও ঢাকাবাসীর দলে দলে রাস্তায় নেমে পড়ার আহ্বানে কেউ অংশ না নেওয়ায় বিএনপিপ্রধান খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেড়-দুই মাসব্যাপী হরতাল, অবরোধ, সর্বোপরি মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে ২৯ ডিসেম্বর দলীয় নেতা-কর্মীদের ঢাকা আসতে নির্দেশ দেওয়া ছিল সব থেকে বড় রাজনৈতিক ভুল। সারা দেশের নেতা-কর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় এনে ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন প্রতিরোধ করা যায় না। যাক, নেতৃত্ব কর্তৃত্ব যাদের হাতে তারা তাদের বিবেচনা তাদের মতো করে করবেন। আগে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর খেয়াল রেখে রাজনীতি হতো, এখন কে কার ইচ্ছার খেয়াল করে। রাজনীতি এখন আর জনসেবা নয়, রাজনীতি এখন জবরদস্তি। রাজনীতিকরা কেউ এখন আর সেবক নন, ব্যবসায়ী রাজনীতিকরা টাকার জোরে রাজার রাজা। এতসবের পরও এতদিন বিএনপি যে অবস্থায় ছিল লন্ডনে ভাতিজা তারেক রহমানের ভূমিকা বিএনপিকে সবদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শিক্ষিত ছেলেমেয়ে যারা এতদিন তারেকের ফ্যান ছিল, গ্রামেগঞ্জে যারা তাকে নিয়ে গর্ব করত তারা তার এ কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডে হতবিহ্বল, দিশাহারা। তারা এখন আর তারেকের কাছে ভালো কিছু আশা করে না। বঙ্গবন্ধুর সরকার অবৈধ হলে আমরা সবাই অবৈধ, তার বাবার ঘোষণা মূল্যহীন অবৈধ, বীরত্বসূচক বীরউত্তম খেতাবও অবৈধ। আসলে শেকড় না থাকলে কিছুই থাকে না। ভাতিজা একেবারে শেকড়ে কুড়াল মেরেছে। সেদিন বলেছে, সরকার চালাতে বঙ্গবন্ধু ব্যর্থ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ব্যর্থ হলে তার পিতা জিয়াউর রহমান সফল হন কী করে? সারা দুনিয়ার কত পণ্ডিত কত কথা বলেছেন কিন্তু এমন কথা কেউ বলেননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে কত রকমের অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাকে হত্যা করে খুনিরা বহু বছর চেষ্টা করে ২৭-২৮ হাজারের বেশি নগদ টাকা এবং ৬০-৭০ ভরির উপর সোনা আবিষ্কার করতে পারেনি। কামাল-জামালের যখন বিয়ে হয় তখন সোনার ভরি ছিল ১৭০-১৮০ টাকা। কামালের স্ত্রী সুলতানাকে একটা সোনার মুকুট দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় যার দাম তিন-চার হাজারের বেশি ছিল না। তা নিয়ে আসমান ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে এই দেশে বঙ্গবন্ধুর মতো নিঃসম্বল কপর্দকহীন মানুষ খুব কমই ছিল। তিনি রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়েছেন কিন্তু কোনো ঘুষ বা কমিশন নেননি। তাই ভাতিজাকে বলব, অনেক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তব্যে বিএনপির যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা খুব একটা সহজ হবে না। দেশের অনেক মানুষ তারেক রহমানের এসব মন্তব্যে খুবই বিরক্ত। অযাচিত কথা কখনো কোনো শুভ ফল দেয় না, বরং শুভ কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দেশের এই ক্রান্তিকালে আর কিছু না হোক আমরা একে অপরকে যথাযথ মূল্য দিতে, সম্মান করতে শিখব_ এটা অগণিত দেশবাসী আশা করে।