বাংলাদেশের আইপিএল সাকিবই

0
167
Print Friendly, PDF & Email

* বাংলাদেশে আইপিএলের জনপ্রিয়তা কেমন?

‘যখন আমরা খেলি, তখন লোকে ম্যাচ দেখে। ওদের ইন্টারেস্ট থাকে। বাংলাদেশের প্লেয়ার না খেললে অতটা থাকে না।’ ২৭ মে ২০১২, আইপিএল ফাইনালের আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাত্কারে এমন কথাই বলেছিলেন সাকিব আল হাসান।

* দুই বছর পর, গত ২৪ মে আনন্দবাজার পত্রিকায় সাকিবকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনে লেখা হলো, ‘সোনালি-বেগুনি জার্সিতে তিনি নামলেই ঢাকায় টিভি শোরুমের সামনে আবার গিজগিজে ভিড়, এফএম চ্যানেলে ম্যাচের কমেন্ট্রি জোরে বাজিয়ে দেওয়া, তিনি বাউন্ডারি মারলে তুমুল উল্লাস, চায়ের দোকানে-আড্ডায় আবার তিনি তর্কের বিষয়বস্তু।’

এবার আরেকটি উদাহরণ। প্রথম আলোয় প্রকাশিত কলকাতা নাইট রাইডার্স-সংক্রান্ত অধিকাংশ খবরই থাকে সাকিব-কেন্দ্রিক। যেমন: ১৮ মে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম করা হলো, ‘সহজ জয় পেল সাকিবের কলকাতা’। এ খবরের প্রতিক্রিয়ায় জাহিদুল নামের এক পাঠক মন্তব্য করলেন, ‘কেকেআর-এর মালিক সাকিব নাকি? প্রথম আলো সব সময় যেভাবে সাকিবের কলকাতা বলে, তাতে তো মনে হয়, শাহরুখ খান কেকেআর-এর মালিকানা সাকিবের কাছে হ্যান্ডওভার করেছেন।’ এর জবাবে শাকিল নামের আরেক পাঠক সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন, ‘জাহিদুল ভাই, এইভাবে আপনি বলতে পারলেন? সাকিব আছে বলেই তো কলকাতার খেলা দেখি। আর সাকিব তো পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। চায়ের দোকানে বা রাস্তায় যেদিন দেখবেন ভিড় বেশি, সেদিন বুঝবেন কলকাতার খেলা।’

আইপিএলে এ দেশের সমর্থকদের দৃষ্টির সীমানা যে সাকিব পর্যন্ত বিস্তৃত, সেটি নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে। যখন কলকাতার খেলা থাকে, তখন অধিকাংশ সময়ই দল ভালো খেলল নাকি সাকিব ভালো খেলল—সেটিই হয়ে যায় বাংলাদেশের সমর্থকদের মাথাব্যথার কারণ। কেননা, সাকিব যে আইপিএলে বাংলাদেশের একমাত্র বিজ্ঞাপন! সাকিব মূল একাদশে কিংবা দলে না থাকলে দর্শকদের কাছে আইপিএল হয়ে ওঠে পানসে, বিবর্ণ।

শিরোপা জয়ের পর কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ খানের সঙ্গে সাকিব ও তাঁর স্ত্রীর শিরোপা-জয় উদযাপন। সাকিবের ফেসবুক পেইজ থেকে নেওয়া ছবি।সাকিব সমর্থকদের হতাশ করেননি। আইপিএলে ২০১১ সালে অভিষেক হওয়ার পরই বাংলাদেশের এ অলরাউন্ডারের শনৈঃশনৈঃ উন্নতি। ২০১১ সালে ৭ ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৯ রান, বল হাতে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। ২০১২ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপা জয়ের পেছনেও রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ৮ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৬.৫০ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। ব্যাট হাতেও খেলেছিলেন বেশ কয়েকটি সময়োচিত ইনিংস। সেবার রান করেছিলেন ৯১। তবে এবার আসরে সাকিব যেন আরও পরিণত, আরও উজ্জ্বল। ১৩ ম্যাচে করেছেন ২২৭ রান ও নিয়েছেন ১১ উইকেট ৷ এবারও  ব্যাট হাতে খেলেছেন অসাধারণ কয়েকটি ইনিংস। আইপিএল ক্যারিয়ারে ২৮ ম্যাচে ৩৪৭ রান ও ৩৪ উইকেট। আইপিএলে সাকিবের পারফরম্যান্স গ্রাফ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। ২০১১ আসরে খেলেছিলেন ৭ ম্যাচ, পরের আসরে ৮ ম্যাচ আর এবার ১৩ ম্যাচ। অর্থাত্ তিনি যে দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছেন, ম্যাচ সংখ্যা বৃদ্ধি তারই প্রমাণ।
কদিন আগে কলকাতার একটি পত্রিকাকে সাকিব বলেছিলেন, ‘দুই বছর আগে পারলে দুই বছর পরেও পারব। আশা করি, কাপটাও জিততে পারব।’ পেরেছেন সাকিব, শিরোপা এবারও জিতেছেন। কেবল শিরোপাই নয়, জিতেছেন সমর্থকদের মনও। নাচ-গান নয়, সিনে পর্দার নায়ক-নায়িকাদের অহেতুক নর্তন-কুর্দনও নয়, নানা নেতিবাচক খবরে আকীর্ণ আইপিএল বাংলাদেশের সমর্থকদের টানে কেবল সাকিবের জন্যই।

শেয়ার করুন