জামাতের বিচারে আইন সংশোধনের সম্ভাবনা

0
118
Print Friendly, PDF & Email

শোধনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

দৈনিক সকালের খবরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরাজমান আইনে সংগঠনের বিচার করার বিধান সন্নিবেশিত রয়েছে। কিন্তু সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান নিরূপণ করা নেই। চলতি বছর জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর জামায়াতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দেওয়ার কাজ করছিলেন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের অন্তর্দ্বন্দ্বে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রদান থমকে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরে অপরাধী সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর বিচার হচ্ছে কি না জনমনে সে প্রশ্ন দেখা দেয়।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল হাইকোর্টে নিজ চেম্বারে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যমান আইনে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যায়। অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে শাস্তিও নির্ধারণ করতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল। তবে তিনি বলেন, যেহেতু ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে, তাই মামলার বিষয়ে কারোরই কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাইব্যুনাল।

শফিক আহমেদ যখন সাবেক আইনমন্ত্রী, তখনই যুদ্ধাপরাধের ঐতিহাসিক বিচারপর্ব শুরু হয়েছিল। তিনি গতকাল বলেন, জামায়াতের বিচার হবে কি না তা ট্রাইব্যুনালের বিবেচ্য বিষয়। এ নিয়ে বিতর্ক করার কোনো সুযোগ নেই। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেবেন জামায়াতের বিচার হবে কি না। বিচারাধীন বিষয়বস্তু নিয়ে বাইরে থেকে বক্তব্য দেওয়া স্বাধীন বিচার বিভাগে বাধাস্বরূপ। আদালতকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।

এদিকে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গতকাল এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা এখনই সম্ভব নয়। কারণ যে আইনের অধীনে সংগঠনটির বিচার হওয়ার কথা রয়েছে, সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের বিধিগুলো যথেষ্ট নয়। এজন্য আইনের সংশোধন প্রয়োজন।

আনিসুল হক বলেন, ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। সরকার দ্বন্দ্ব নিরসনের দ্রুত উদ্যোগ নেবে।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছেন, ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি দল পুনর্গঠন হওয়া উচিত। তাদের মধ্যে সমন্বয় ও সুসম্পর্ক থাকা দরকার।

রাজধানীর গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় গতকাল খাদ্যমন্ত্রী ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বর্তমান আইনমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান আইনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করা সম্ভব নয়। একটি মহল জামায়াতের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আইনমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, আইনের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটি সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যথাসময়ে জামায়াতের বিচার হবে।

জাপান সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জামায়াতের বিচার নিয়ে অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমার ওপর ভরসা রাখুন। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন। এটি শেষ হলে না ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের বিচার করলে নিবন্ধন বাতিলের মামলায় প্রভাব পড়বে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী জামায়াতের বিচার নিয়ে কথা বললে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আর কোনো বক্তব্য থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন মাহবুবে আলম।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারি শফিক আহমেদ আইনমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জাতীয় সংসদ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের সংশোধনী আনে। কিন্তু সংগঠনের শাস্তি কী হবে তা নির্ধারণ করেনি সংসদ।

এদিকে গত বছরের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে রায় দেন। বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

শেয়ার করুন