মেসি থেকে ওজিল॥ বিশ্বকাপের মাঠ কাপাতে অপেক্ষা করছেন শীর্ষ ১০ তারকা

0
138
Print Friendly, PDF & Email

সময়ের বিবেচনায় বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর বাকি আর মাত্র ১০ দিন। অর্থাৎ আগামী ১২ জুন পর্দা ওঠছে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদার এবং সর্ববৃহৎ টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপ ফুটবলের। ব্রাজিলে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে এবার কারা মাঠ মাতাবেন। ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি থেকে জার্মান তারকা মেসুত ওজিল পর্যন্ত সবাই এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ব্রাজিলের বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি আদায় করতে।

লিওনেল মেসি: কোথা থেকে শুরু করা যায়? গোল দিয়ে, নাকি গোলের সুযোগ সৃষ্টি নিয়ে? বল নিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে প্রতিপরে গোল মুখের দিকে ছুটে চলা নিয়ে, নাকি কখনো নিজের খেলার ধরনে শিথিলতা না দেখানো ? এসব কিছুর জবাব এখনো বিদ্যমান রয়েছে ২৬ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসির মধ্যে। মেসি যদি একবার স্থির সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি নিজেকে বিশ্ব সেরার আসনে দেখতে চান, তাহলে ভিন গ্রহের বাসিন্দাদের মত অসাধারণ পারফর্মেন্স দিয়ে তার পক্ষে সেটি আদায় করা সম্ভব। তবে তার একটিই আক্ষেপ, সেটি হচ্ছে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে একবারের জন্যও চালকের আসনে নিয়ে যেতে না পারা। যাতে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা : স্প্যানিশ ফুটবলের এই টাকওয়ালা মাস্টার ফুটবলারকে দলের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনেই ব্যবহার করা সম্ভব। গতানুগতিক ‘টিকিটাকি’ স্টাইল দিয়ে তিনি ছয় বছর ধরেই বিশ্ব ফুটবলে স্থান দখল করে আছেন। আপনি হয়তো বলতে পারেন তার খেলার এই ধরনের সঙ্গে জাবি কিংবা হুয়ান মাতাকেও আলোচনায় আনা যায়। তবে সৃষ্টিশীল ও যোগ্যতার ক্ষেত্রে ইনিয়েস্তার পারদর্শিতা কিছুটা ভিন্ন। এটি খুঁজে নেয়ার জন্য তার বেশি জায়গা নিতে হয় না। প্রতিপক্ষের শিবিরে দ্রুত হানা দিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার অসাধারণ এক দক্ষতা রয়েছে তার মধ্যে। যেটি তাকে অন্যদের তুলনায় বেশি গুরুত্বপুর্ণ করে রেখেছে। ২০১০ বিশ্বকাপে স্পেনের হয়ে ইনিয়েস্তার শিরোপা জয়ী গোলের কথাটি এখনো নিশ্চয় সবাই ভুলে যায়নি।

অস্কার : ২২ বছর বয়সী চেলসির এই ব্রাজিলীয় তারকাকে মাঠে নামলে কিছুটা খর্বাকৃতির মনে হলেও আপনি তার কাছ থেকে যেমন বলের দখল নিতে পারবেন না তেমনি তার সুনিপুণ পাস দেয়া থেকে নিবৃত করতে পারবেননা। কারণে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বলের ব্যবহার বিধি সুনিপুণভাবে পালনের ব্যাপারে তিনি খুবই দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী। তার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বলা যেতে পারে সেটি হচ্ছে, স্বাগতিক ব্রাজিল যদি নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করতে পারে তাহলে সেখানে তার ভুমিকাটি হবে সিনিয়র খেলোয়াড়ের মতো।

ওয়েসলি স্নেইডার : আয়াক্স একাডেমি ছেড়ে তিনি বের হয়েছেন ১২ বছর হয়ে গেছে। গালাতাসারেতে যোগ দেয়ার ফলে তিনি হয়তো ইউরোপের অভিজাত ফুটবল থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছেন। তবে গত বিশ্বকাপে তার দুর্দান্ত পারফর্মেন্স এখনো সবার দৃষ্টিতে লেগে আছে। ওই আসরে জায়ান্ট দলগুলোকে পেছনে ফেলে হল্যান্ডের ফাইনালে খেলার নেপথ্যে ছিল স্নেইডারের পারফর্মেন্স। ডাচ কোচ লুইস ভ্যান গাল এখনো ২৯ বছর বয়সী এই ফুটবল তারকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আসন্ন বিশ্বকাপে তিনি তার সেরাটা উপহার দেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছেন।

মেসুত ওজিল : এই প্লে মেকারকে নিয়ে মন্তব্যে দুটি ভাগে বিভক্তি পাওয়া যায়। তবে মজার বিষয় হল দুই পক্ষের কারোরই নিজ নিজ মতের কারণে হতাশ হাবার উপায় নেই। একটি ক্যাম্পে আর্সেন ওয়েঙ্গার তার ব্যাপক প্রশংসা করে বলেছেন, ওজিলের নির্ভেজাল অন্তর দৃষ্টির প্রখরতায় তিনি মুগ্ধ। মাঠে খেলার সময়ও তার মস্তিষ্ক দারুনভাবে সচল থাকে এবং কখন কোন জায়গাটিতে অবস্থান করতে হবে সেটি তিনি বুঝে নিতে পারেন। পাশাপাশি বলে কম ছোয়া দিয়ে কত দ্রুত ছুটে চলা যায় তা তিনি ভালভাবেই রপ্ত করেছন। অপরদিকে কার্লো আনচেলত্তির দৃষ্টিতে এই খেলোয়াড়টির মধ্যে দারুণ প্রতিভা থাকলেও মাঠে তার কম মাত্রাই তিনি নিজের জন্য ব্যবহার করেন। তাকে জার্মান সতীর্থদের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে চলতে হবে। তবে তিনি এই মতপার্থক্যের নিস্পত্তি ঘটাতে পারেন আসন্ন ব্রাজিল বিশ্বকাপ দিয়ে।

ওয়েন রুনি : কেউ কেউ হয়তো জাতীয় দলের তালিকায় অন্যদের সঙ্গে রুনির অন্তুর্ভুক্তি বিষয়ে আলোচনা না করে কৌশলে এড়িয়ে যাবার চেস্টা করবে। তবে চলতি মৌসুমে তার পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে যদি দেশটির অভিজাত তালিকায় তাকে যুক্ত করা হয় তাহলে এর পক্ষে বিপক্ষে ব্যপক আলেচানা সমালোচনা আসবে। ২০০৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে তড়িৎগতির পারফর্মেন্সের পর থেকে ইনজুরি ও ফর্মহীনতায় জর্জরিত রুনি পরবর্তী সবগুলো বড় ইভেন্টেই হতাশ করেছেন। ইংল্যান্ডের সফলতা প্রশ্নে তিনি দুর্ভাগ্যজনকভাবে বার বার হতাশ করেছেন। তাকে ঘিরে থাকা তরুণ মেধাবীদের সহযোগিতা ছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা মঠেও আলো ছড়াতে পারবেন না।

সিনঝি কাগাওয়া : ম্যানচেস্টার ইউনাটেডে দুই বছর দুঃখ কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত করার পরও জাপানের কাগাওয়া মনে করেন বিশ্বকাপের চেতনা তার মানষিক দৃঢ়তাকে আরো এগিয়ে নিয়েছে। বিশ্ব আসরে গ্র“পভুক্ত কলম্বিয়া, গ্রীস ও আইভরি কোস্ট এর বিপরে ম্যাচগুলো তার জন্য সঠিক একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে যেখানে তিনি পয়েন্ট আদায়ের মাধ্যমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তাকে যারা উপো করেছে তাদের সমুচিত জবাব দিতে পারবেন। ম্যানচেস্টারে যোগ দেয়ার আগে দ্রুতগতির দৌড় এবং অবস্থান নেয়া সংক্রান্ত তীè সচেতনতার কারণে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন খেলোয়াড়ের আসনে পৌছে গিয়েছিলেন।

মারিও গোটশে : বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে একটি হাতাশাজনক মৌসুম শেষ করার পর গতজে নিজের সব ঝাল মেঠানোর জন্য বেছে নিয়েছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপকে। মাত্র ২১ বছর বয়সী জার্মান তারকা গোটশের সামনে অপো করছে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়। বিশাল অর্থের বিনিময়ে ডর্টমুন্ড থেকে বায়ার্নে যোগ দেয়া এই তারকা কি সেখানেই আরেকটি মৌসুম মধ্যমাঠ সামলানোর ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন, নাকি নিজের ভাগ্যকে তুলে দিবেন অন্য কোথাও? তার চাতুর্য, পাস এবং উদ্যম তার সম্ভাবনার দ্বারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য উন্মোচন করে দেবে যদি ব্রাজিল বিশ্বকাপে জোয়াচিম লোর বাতলে দেয়া পথে তিনি নিজেকে এগিয়ে নিতে বাধ্য করতে পারেন।

এ্যালেক্সিস সানচেজ : আধুনিক ফুটবলের গুণাবলীসম্পন্ন খেলোয়াড় সানচেজ আক্রমণভাগের যেকোনো পজিশনে খেলতে এবং গোল করতে পারদর্শী। কিন্তু স্পেন ও হল্যান্ডকে টপকে সানচেজের দক্ষতায় ভর করে জর্জ সাম্পাওলির চিলি দলের উচ্ছাসা শেষ পর্যন্ত বাস্তবতার মুখ নাও দেখতে পারে। সানচেজ অবশ্য বলেছেন, তার কাব বার্সেলোনার চেয়ে নিজ দেশ চিলির খেলার স্টাইলের সঙ্গে তিনি বেশি মানিয়ে নিতে পারেন। যেটি তার স্প্যানিশদের সঙ্গে সম্ভাব্য লড়াইটিকে বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে।

জেমস রড্রিগুয়েজ : সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারেই বিভিন্ন ডাক নাম পেয়ে গেছেন ২২ বছর বয়সী এই তারকা। তবে অভিষেকেই ‘এল নুয়েবো পাইবে’ নামটি খুব বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো কলম্বিয়ান তারকা কার্লোস ভালদারামার উত্তরসুরি হিসেবে তার নাম দেয়া হয়েছে ‘দ্য নিউ কিড’। অবশ্য ভালদারামার মন্তব্যের কারনেও এই নামটি গুরুত্ব পেয়েছে। দেশটির শ্রেষ্ঠ ওই ফুটবলারের মতে সানচেজের মধ্যে তার প্রতিচ্ছবি রয়েছে।

শেয়ার করুন