হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ ধরা

0
212
Print Friendly, PDF & Email

প্রতিনিধি নওগাঁ: তলাবিহীন কলসিরআদলে বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে ছোট ছোট ছিদ্র রেখে শৈল্পিক কারম্নকার্যে সুনিপুণভাবে মাছ ধরার যে যন্ত্রটি তৈরি করা হয়৷ গ্রাম-গঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তারনাম ‘পলো’৷ এই এলাকায় পলো দিয়ে মাছ ধরাকে বলা হয় পলো বাওয়া৷ শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছধরতে নামতেন৷ এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়৷ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো দিয়ে মাছ ধরা৷ খনজোর গ্রামের বৃদ্ধ অমিত হলদার (৭০) বললেন, ‘সেই মাছও নেই আর পলোও নেই৷’
জানা গেছে, আগে প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতেই থাকতো দু-একটি পলো৷ ‘পলো’ মাছধরার কাজ ছাড়াও হাঁস-মুরগী ধরে রাখার কাজেও ব্যবহার হতো৷ পৌষ মাস থেকে শুরম্ন করে চৈত্র মাস পর্যনত্ম পলো দিয়ে মাছ ধরার মহড়া৷ জলাশয়ের এক প্রানত্ম থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরম্ন করতেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতেন সামনেরদিকে৷ অনেকেরই মাথায় থাকতো গামছা বাঁধা৷ চলতো পলো দিয়ে পানিতে একের পর একচাপ দেওয়া আর হৈ হুলেস্নাড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া৷ যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য৷ মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দিত৷ এতে বুঝা যেত শিকার এবার হাতের মুঠোয়৷ তখন পলোটিকে কাদা মাটির সাথে ভালোভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হতো যাতে নিচেরকোন দিকে ফাঁক না থাকে৷ এরপর ওপরের খোলা মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মনের আনন্দে ধরে আনা হতো সেই শিকার৷
পুরনো মাছ শিকারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পলোয়ে সাধারণত দেশি মাছই বেশি ধরা পড়তো৷ রম্নই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, আইড়, রাজপুটি, কালবাউস, বোয়াল, শোল, টাকি ও গজার প্রভৃৃতি মাছও ধরা পড়তো৷ মাছ দিয়ে মালার মতো তৈরি করে কাঁধে ঝুলিয়ে খুশিতে বাগবাগ হয়ে বাড়ি ফিরতেন৷ বর্তমানে বিভিন্ন নদী-নালা হাওর-বাওর খাল-বিল ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক পস্নট ও ফ্ল্যাট৷ কোথাও কোথাও কিছুটা জলাশয় থাকলেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায়না এবং আগের অনেক প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়৷ বর্তমানে যেটুকু অবশিষ্ট আছে এরবেশির ভাগের অসত্মিত্ব হুমকির মুখে৷ সে দিন বেশি দূরে নয়, পলো দিয়ে মাছ ধরা শুধু স্মৃতি হয়েই রবে, তাই এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করে সাধারণ মানুষ৷#

শেয়ার করুন