০ দ্রুত গড়ে উঠছে কাঁচা-পাকা হাজার হাজার বাড়ি
০ চারা ইরি ধান কেটে ফেলা হচ্ছে
০ ক্ষতিপূরণের নামে বেশি অর্থ আদায়
০ জমি ভাড়া নিয়ে হচ্ছে বাড়িঘর
ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে অনেকটাজুড়ে কোদালিয়া গ্রাম। মহাসড়কের পাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ ধানক্ষেত। কাঁচ-পাকা ধানে নয়ন জুড়িয়ে যায়। হঠাৎ করে গত কিছুদিন ধরেই এক অভিনব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। কাঁচা-পাকা ধানের জমি নষ্ট করে দ্রুত গড়ে তোলা হচ্ছে ঘরবাড়ি। যেন আলাদিনের কাজ এগুলো। কোনটা টিনের চালা দিয়ে বাঁশের বেড়া। আবার কোনটা পাকা দেয়ালের ওপর টিনের চালা। কোন কোন জায়গায় দোতলা বাড়িও দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এর প্রকৃত রহস্য। স্থানীয় কৃষক আবিদ সরল মনে স্বীকার করলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের জন্য এসব জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে জমির পাশাপাশি বসতবাড়ি ও প্রতিটি ঘরের জন্য আলাদা আলাদা দাম ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। আর এ কারণেই মহাসড়কের দু’পাশে কাঁচা-পাকা দালান ঘর তোলার হিড়িক পড়েছে। এ জন্য অনেকে সদ্য আবাদকৃত ইরি ধানের চারা গাছ কেটে ফেলেছে। কৃষক ওই জমিগুলোতে স্থাপনা তৈরি করে সরকারের কাছ থেকে বেশি টাকা পাওয়ার আশা করছে। এদের পেছনে জুটেছে একশ্রেণীর দালাল। যারা এই টাকা পাওয়া নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে পাওয়া গেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সমেজ উদ্দিনের ছেলে মজিবর রহমান জানান, প্রতিবছরের মতো কোদালিয়া মৌজায় ১০ শতাংশ জমির ওপর পাট চাষ করেছিলেন তিনি। এবার সোহাগপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তিকে ১৫ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ওই জমি ভাড়ায় দিয়েছেন। এভাবে আরও প্রায় ১০-১২ কৃষক প্রায় ৩ একর জমি এক বছরের জন্য ভাড়ার চুক্তি করেছেন। পরবর্তীতে জমির মালিকরা জানতে পেরেছেন, ঐ ব্যক্তি ঢাকার আরেক ব্যক্তিকে জমিগুলো ভাড়ায় দিয়েছেন। বরিশালের এক ঠিকাদার ওই জমির ওপর নিম্নমানের ঢেউটিন ও ইট দিয়ে প্রায় অর্ধশত আধা পাকা দুইচালা ঘর নির্মাণ করছেন। ঢাকার ওই ব্যক্তি ও ঠিকাদারের সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জমির মালিকরা শুনেছেন।
সোহাগপাড়া গ্রামের ওই ব্যক্তি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কোদালিয়া মৌজায় তার বাবার নামে ১৪ শতাংশ জমি রয়েছে। যা তার বাবা নিজেই ২১ হাজার টাকায় এক ব্যক্তিকে এক বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছেন। এভাবে কোদালিয়া ও পাহাড়ী এলাকার ১০-১২ জন কৃষক তাঁদের প্রায় ৩ একর জমি ভাড়া দিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। ঢাকার ওই ব্যক্তির নাম ও যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি পরে দেখা করতে বলেন। কোদালিয়া মৌজায় ধানী জমিতে ঘর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সর্দার রিপন মিয়া বলেন, তাঁরা ৪০ জন শ্রমিক গত ৫ দিন ধরে দিন-রাত ঘর নির্মাণ করছেন। কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া, রুবেল ড্রাইভার ও সেলিম মিয়া বলেন, বেশি টাকা পাওয়ার আশায় একটি চক্র স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে এসব ধানী জমি ভাড়ায় নিয়ে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নামমাত্র ঘর তৈরি করছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দু’পাশের উঁচু-নিচু, ডোবা-পুকুর এমনকি ধানী জমিতে কাঁচা-পাকা ও আধা পাকা ঘর তৈরির হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকা এবং মির্জাপুর উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ’ কাঁচা-পাকা ও আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত দ্বৈত (ডবল) রেললাইন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য যেসব জমি অধিগ্রহণ হতে পারে, সেগুলোতেও বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায় জমির মালিকরা ঘর তৈরি শুরু করেছেন। ঢাকা-জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন ৭০ কিঃমিঃ মহাসড়ক কাজ শুরুর আগেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মহাসড়কের দু’পাশের কাঁচা ধান ক্ষেত, ডোবা-পুকুর ও নিচু জমিতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ও পাকা দেয়াল উঠিয়ে উপরে টিনের চাল বসিয়ে ৭-৮ ফুট উচ্চতার ঘর নির্মাণ করছে। প্রকল্পের ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় দালাল চক্রের যোগসাজশে অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে অর্থলোভী একটি চক্র অবৈধভাবেই নিচু জমিতে এসব টিনের ঘর ও আধা কাঁচা ঘর নির্মাণ করে চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই দালাল চক্রটি নিরীহ জমির মালিকদের নানাভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জমি ভাড়া নিয়ে রাতারাতি এই ঘর নির্মাণ করছে। মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অবৈধ এই ঘর নির্মাণের হিড়িক। গত দুই মাস ধরে চলছে এই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকাজ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেনতেন এই স্থাপনা নির্মাণে উভয় প্রকল্পের জরিপসহ অধিগ্রহণ কাজে নিয়োজিতদের যোগসাজশ আছে। ক্ষতিপূরণের তালিকাভুক্ত হওয়া না-হওয়াও এই যোগসাজশের মধ্যে থাকে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। আর জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। আর রেললাইন তৈরির প্রকল্প বাংলাদেশ রেলওয়ের। এই দু’টি সংস্থার একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সব বড় প্রকল্পেই জমি অধিগ্রহণের কথা চাউর হওয়ার পর একটি চক্র নতুন ঘর তৈরির তোড়জোড় শুরু করে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়। এই ঝামেলা এড়াতে অনেক বড় প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের আগেই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তার দু’ধারের ছবি সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন করতে টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলায় প্রায় ৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় হবে প্রায় ২০ একর। ইতোমধ্যে উপজেলার গোড়াই, গন্ধব্যপাড়া, কোদালিয়া (রহিমপুর একাংশ) ধানী জমির ওপর ও সদরে শতাধিক টিনের ঘর ও আধা পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া গোড়াই ইউনিয়নের ধেরুয়া এলাকার রাস্তার দু’ধারের জমির ধান কেটে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি অফিস সূত্র জানায়, এই মহাসড়কে চার লেন করার জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মির্জাপুর উপজেলার ক্যাডেট কলেজ এলাকা থেকে নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ওপেন ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ও আবুধাবী ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় এ মহাসড়কের চার লেন উন্নীতকরণের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে মহাসড়কের দুই পাশে গাজীপুর জেলা ও টাঙ্গাইল জেলার ৮৭ দশমিক ৫১৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। ঐ জমির মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা অংশের জমি পড়েছে ১৩ দশমিক ৭৬৮৯ একর। আর এই জমিগুলো হলো- মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, হাঁটুভাঙ্গা, গোড়াই, নাজিরপাড়া, সোহাগপাড়া, ধেরুয়া, দেওহাটা, বাওয়ার কুমারজানি, মির্জাপুর বাইপাস, পুষ্টকামুরি, নয়াপাড়া, ইচাইল, কুরনি, ধল্লা, পাকুল্লা, জামুর্কি ও নাটিয়াপাড়া মৌজা।
এলাকাবাসী জানায়, জমি অধিগ্রহণের খবর শুনে কিছু অসাধু চক্র যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চার লেন প্রকল্পের কিছু দুর্নীতিবাজ চক্র এবং স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ঐ সব জমির ওপর অবৈধভাবে টিনের ঘর নির্মাণ শুরু করেছে। দুর্নীতিবাজ এই চক্রটি জমি ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে নির্মাণ করছে এসব স্থাপনা। জমির মালিক এবং দালাল চক্র অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে রাতারাতি ঘরবাড়ি নির্মাণ করে চলেছে। কেউ লম্বালম্বিভাবে চাল দিয়ে ঘর নির্মাণ আবার কেউ আধাপাকা আবার কেউবা পাকা ঘর নির্মাণ করছে। তবে চিকন রড ও নি¤œমানের ইট দিয়ে ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। রাতারাতি ডোবা-পুকুর, নিচু জমি ও কাঁচা ধান কেটে এসব স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে এসব স্থাপনার সামনে বিভিন্ন কল-কারখানার সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। চার লেন প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই হচ্ছে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, বাসাইল, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলা প্রশাসন এবং চার লেন তৈরির প্রকল্প পরিচালকের দফতর থেকে ইতোমধ্যে সার্ভে, ভিডিও চিত্র করে ডিজাইন, নক্সাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করে জেলা প্রশাসক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে জমা দেয়া হয়েছে। এখন শুধু জমি অধিগ্রহণের মালিকরা টাকা পাবে। কিন্তু সম্প্রতি একটি চক্র রাস্তার দুইপাশের জমির মালিকদের মোটা অঙ্কের প্রলোভন দেখিয়ে জমি ভাড়ার নামে অধিক টাকা পেতে নামে বেনামে নির্মাণ করে যাচ্ছে কাঁচা, আধাপাকা ও পাকা স্থাপনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা এসব স্থাপনা নির্মাণ করছে তাদের বাড়ি গাজীপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, বগুড়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে দালাল চক্রটি অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। ফলে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল রোডের চার লেন নির্মাণের কাজ হবে কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মির্জাপুর ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যারা এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে তা জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-এর ৯০ ধারার পরিপন্থী। তাই তারা অবৈধ স্থাপনার কোন টাকা পাবে না। এলাকাবাসী জানায়, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় লোক জড়িত।
অপরদিকে রেললাইন সম্প্রসারিত করতে ভূমি অধিগ্রহণের সময় অধিক ক্ষতিপূরণের লোভে রেললাইনের পাশে বসবাসকারীরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত বেসরকারী একটি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এলাকাবাসী রেললাইনের পাশ দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জয়দেবপুর থেকে ইশ্বরদী পর্যন্ত রেললাইনের উত্তর পাশ দিয়ে ডাবল লাইন করতে কর্তৃপক্ষ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এই ডাবল লাইন নির্মাণ করতে এ্যাসিস্ট্যান্ট ফর সোসাল অর্গানাইজেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএসওডি) নামে একটি বেসরকারী সংস্থাকে সোস্যাল সেফগার্ড প্লানিং প্রণয়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ভূমি অধিগ্রহণ জরিপের কাজ দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ হতে গত বছর নবেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জরিপের কাজ শুরু হয়। সংস্থাটি স্থানভেদে বর্তমানে থাকা রেললাইনের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির শেষ দিক থেকে বাড়তি বিশ থেকে ত্রিশ ফুট (মাঝামাঝি কেন্দ্র (সেন্টার) থেকে লাইনের স্থান ভেদে ৩০ থেকে ৫১ মিটার পর্যন্ত) ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জরিপ করছে। এদিকে জরিপ কাজ শুরু হওয়ার খবরে যাদের রেললাইনের পাশে জায়গা ও বসতবাড়ি রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই অধিক ক্ষতিপূরণের লোভে পাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন। এর মধ্যে উপজেলার ভানুয়াবহ, রশিদ দেওহাটা, কুমারজানী ও গোড়াইল দক্ষিণ পাড়াগ্রামে ইতোমধ্যেই পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে জরিপ কাজে নিয়োজিত সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘর নির্মাণ করেছেন এমন কয়েকজন বলেন, যারা জরিপের কাজ করছেন তাঁদের সহায়তায় ঘরগুলো আগের তৈরি দেখিয়ে বাড়তি টাকা পাওয়ার জন্য নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য জরিপের কাজে নিয়োজিতদের পেছনে টাকাও ব্যয় করা হচ্ছে। ভূমির অধিগ্রহণ পরিমাপ জরিপের কাজে নিয়োজিত সংস্থা এ্যাসোডের সুপারভাইজার ওসমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জরিপ কাজের মাধ্যমে নির্ধারিত এলাকায় কতগুলো ঘরবাড়ি ও স্থাপনা পড়ছে তা নির্ণয় করছি। রেললাইনের পাশ দিয়ে যাঁদের জমি আছেন তাঁরা এখনো কোন প্রকার নোটিস বা নির্দেশনা পাননি উল্লেখ করে বলেন, কারও নিজের জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ করলে তাদের বাধা দেয়া যাচ্ছে না। তবে কেউ যদি বেশি ক্ষতি পূরণের লোভে কিংবা লাভবান হওয়ার জন্য জরিপ চলাকালীন সময়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন তবে তা লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শোয়াইব আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যারা এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে তারা কোনভাবেই অতিরিক্ত টাকা পাবে না। কারণ অনেক পূর্বেই সার্ভে ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে নক্সা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। জমির মালিকদের একটি মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে প্রতারিত করছে দালালচক্র। এ ব্যাপারে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল চার লেন প্রকল্পের এক্সিকিউটিভ প্রকৌশলী সিরতাজ উদ্দিনের বলেন, এ ধরনের অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। যারা অসৎ উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মান করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং কোন অবস্থায় অতিরিক্ত অধিক টাকা প্রদান করা হবে না।
হোম
Top New Scroller প্রস্তাবিত ঢাকা-টাঙ্গাইল ফোর লেনের দু’পাশ জুড়ে ভুতুড়ে কাণ্ড ॥ আলাদিন-দৈত্যের ছোঁয়া