দুদকের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য সরকারের সর্বনাশ করে হরিলুটে ব্যস্ত ছিলেন ত্রি-রত্ন

0
107
Print Friendly, PDF & Email

ত্রি-রত্নের অনিয়ম, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটে গত পাঁচ বছর পূর্ত মন্ত্রণালয় ছিল পুরোপুরি স্থবির। তবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, সাবেক পূর্তসচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করে নিজেদের আয় ও সম্পদ বাড়িয়েছেন বহুগুণ। এ সময়ে তারা শুধু পূর্বাচল প্রকল্প, উত্তরা আবাসিক প্রকল্প ও উত্তরা সম্প্রসারিত প্রকল্পে প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মই করেননি বেসরকারি আবাসন শিল্পের বিকাশও স্তব্ধ করে দিয়েছেন। দুদকের কাছে থাকা তথ্যানুসারে, ৪১২টি প্লট কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়েছেন তারা। এই তিনজনের বিষয়েই অনুসন্ধান ও তদন্ত চালাচ্ছে দুদক। শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। অন্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আলাদা আলাদা ভাবে তিনজনকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সম্পদের হিসাব দাখিল করেন তাতে অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়। পাঁচ বছর আগে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য দেওয়া হিসাবের সঙ্গে বিস্তর ফারাক থাকায় দুদক এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি সাবেক পূর্ত সচিব শওকত হোসেন ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদারও বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য পান দুদক কর্মকর্তারা। পাঁচ বছরে মান্নান খানের সম্পদ ১০৭ গুণ বেড়ে ১০ লাখ টাকা থেকে হয়েছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা। বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮৫ হাজার থেকে হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এত বিপুল সম্পদ ও আয় বৃদ্ধির বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতি বছরে ১৩ জানুয়ারি আবদুল মান্নান খানকে নোটিস পাঠায় দুদক। যদিও এর বাইরে অ্যাপার্টমেন্ট ও প্লটের তথ্য ইতিমধ্যেই পেয়েছেন অনুসন্ধান চালানো কর্মকর্তারা। হলফনামার বাইরে রাজধানীর ১১৭, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে ইউনিক হেইটস-এ ওই অ্যাপার্টমেন্ট ও অফিস স্পেস এর তথ্য পাওয়া গেছে। ১৮ তলায় অবস্থিত একটি ফ্ল্যাটের আয়তন ২৭৫৪ বর্গফুট, আরেকটির আয়তন ১৭৪০ বর্গফুট। ১৩ তলায় রয়েছে ২৭৩৪ বর্গফুটের একটি অফিস স্পেস। একই ফ্লোরে রয়েছে ১৪১৪ বর্গফুটের আরেকটি অ্যাপার্টমেন্ট। গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে ৫ বর্গফুটের গ্যারেজ। এ ছাড়া গুলশানের বড় বেরাইদ মৌজায় মান্নান খানের রয়েছে ৬০ শতাংশ জমি। যার মূল্য অন্তত আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা।

সূত্র মতে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও রাজউক চেয়ারম্যান রাজউকের প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মেনে চলেননি। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে ফ্রিস্টাইলে ব্যক্তিগত পছন্দে দেওয়া হয়েছে প্লট ও ফ্ল্যাট। তিনজনের মধ্যে অলিখিত সমঝোতায় ভাগাভাগি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ। রাষ্ট্রীয় বিশেষ ব্যক্তি ও মন্ত্রণালয়ের কোটার ক্ষেত্রেও মানা হয়নি নূ্যনতম নিয়ম। প্রকাশও করা হয়নি এই তালিকা। প্রতিমন্ত্রী তার রাজনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারি কতিপয় আমলা এবং নির্বাচনী এলাকার অনুসারীদের অনেককেই দিয়েছেন রাজউকের প্লট। রাজউকের ‘টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৩’-এর ১৩ ধারায় প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত ১০ শতাংশের কথা বলা আছে। এ কোটায় প্লট পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের তিন শ্রেণির ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে। প্রথমত, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। দ্বিতীয়ত, এমপি এবং তৃতীয়ত, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিসহ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, এ আইন ও বিধির শর্ত লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে ও রাজনৈতিক বিবেচনায় যাকে-তাকে সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন আবদুল মান্নান খান। আর নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিমন্ত্রীকে অন্ধের মতো সমর্থন দিয়েছেন সাবেক পূর্ত সচিব খোন্দকার শওকত ও রাজউক চেযারম্যান নূরুল হুদা।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র ও সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত মহাজোট সরকারের ৫ বছরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দখলে ছিল পুরো মন্ত্রণালয়। শুধু প্লট কিংবা ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রেই অনিয়ম হয়নি, অনিয়ম আর দুর্নীতির দুষ্টচক্রের দখলে ছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদফতর ও রাজউক। মূলত সাবেক পূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ, পোস্টিং, পদোন্নতিসহ প্লট বাগিয়ে নেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্লট, ফ্ল্যাটের বরাদ্দ ও নামে-বেনামে ঠিকাদারি ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রের তথ্য। সূত্র মতে, শক্তিশালী সিন্ডিকেটে সক্রিয় ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর আত্দীয় এপিএস আসাদুজ্জামান দীপু, সচিবের পিএস রতন চন্দ্র পণ্ডিত, প্রতিমন্ত্রীর পিও ইলিয়াস উদ্দিন সবুজ, প্রতিমন্ত্রীর ভাই বোরহানউদ্দিন শিকদার, খালাতো ভাই পরিচয়ে জনৈক গিয়াস ও শাহ আলম। সূত্র মতে, এই সিন্ডিকেট গণপূর্ত অধিদফতরের ইডেন বিভাগ ও নগর গণপূর্ত বিভাগের অধীন মন্ত্রীপাড়ায় বিভিন্ন ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের নামে বায়বীয় বিল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভুঁইয়া সরকারবিরোধী প্রকৌশলীদের নিয়ে নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করেন। সাবেক পূর্ত প্রতিমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ গণপূর্ত অধিদফতরকে পরিণত করেন অনিয়ম, দুর্নীতি ও সীমাহীন লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। নিয়োগ, পদোন্নতি, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, অর্থ ছাড়করণ, ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া, বিল ছাড়করণ, তহবিল বিতরণসহ দফতরটির প্রতিটি ক্ষেত্রে বাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। বর্তমান সরকারের সময় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত ৫ বছরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের সদস্যরা চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিলেন নূরুল হুদা : রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তিনি ছিলেন একেবারেই স্বেচ্ছাচারী। রাজউকের চেয়ারম্যান হয়েও তিনি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়ম করেছেন সমানে। তার একক সিদ্ধান্ত আর প্লট-বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল খোদ রাজউক ভবনে। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পাননি। নূরুল হুদা রাজউক চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজের নামে পূর্বাচল ৯ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠার ১৯ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ নিয়েছেন। গুলশান, উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে বেশ কিছু প্লট বরাদ্দ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কোনো ক্ষেত্রেই তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের অনিয়ম আর দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালীদের মধ্যেও বেশ কিছু প্লট বিতরণ করেন সাবেক নূরুল হুদা। এতদিন তিনি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের বাইরে থাকলেও ইতিমধ্যে নূরুল হুদাকে তলব করেছে দুদক। এর মধ্য দিয়ে বিগত পাঁচ বছরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকে যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে তার জন্য ইতির্পূবে সাবেক পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। এবার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেন নূরুল হুদা।

রাজউক এর সূত্রগুলো জানায়, নূরুল হুদা ছিলেন রাজউকের মুকুটহীন সম্রাট। বিগত পাঁচ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে প্লট বরাদ্দ হতে শুরু করে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগ আছে, শুধু প্লট বরাদ্দেই অনিয়ম নয়, নিয়ম ভেঙে গুলশানে একটি আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিকীকরণ করেছেন। গুলশান ৯৩ নম্বর রোডের সিইএন (এ) ১৫/বি প্লটটি রাজউকের সাবেক চেযারম্যান নূরুল হুদা নিজের একক প্রভাব ও সিদ্ধান্তে আবাসিক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেন। এ জন্য তিনি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, গত ৩১ মার্চ নূরুল হুদা তার সর্বশেষ বোর্ড সভায় গুলশান ও পূর্বাচল প্রকল্পে একাধিক প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। সভার কার্যপত্র ও সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গুলশান আবাসিক এলাকার ৭১ নম্বর রাস্তা ও ১৫ নম্বর প্লটটির পূর্ব পাশে এক বিঘা তিন কাঠা তিন ছটাকের প্লটটি কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেন। এভাবে উত্তরা আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরে, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প আবাসিক এলাকার ১৬/এইচ নম্বর সেক্টর ১/বি দুটি প্লট বরাদ্দ দেন। এ ছাড়াও আরও অসংখ্য অভিযোগ আছে নূরুল হুদার বিরুদ্ধে। তিনি পূর্বাচল প্রকল্পে গত বছর যে ১৬৮টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় তাতে অন্তত ২০ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। প্রতিটি প্লটের বিপরীতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে। তাতে নূরুল হুদাকে সহযোগিতা করেছেন ইকবাল পারভেজ। তবে যাদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও আদিবাসী হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই প্লট পাননি। অন্যদিকে নীতিমালা অনুযায়ী ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে পড়েন না এমন অনেকেই প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজউকের ড্যাপ জালিয়াতি করে অনেককে অবৈধ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। এক্ষেত্রে প্রায় হাজার কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে। রাজউকের পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ ও প্লট পরিবর্তন বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট। এমনকি পূর্বাচল প্রকল্পে সংরক্ষিত কোটার ২০টি প্লটও মান্নান খানের নির্বাচনী এলাকা দোহার-নবাবগঞ্জের ২০ জনকে দেওয়া হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ড্যাপ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হলে গত সাড়ে তিন বছরে ড্যাপ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে রাজউক।

মা ও স্ত্রীকেও দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন সচিব শওকত : সাবেক পূর্ত সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদক রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছে। প্রথম মামলার অভিযোগ, শওকত হোসেনকে রাজউক থেকে তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধি-বিধান তোয়াক্কা না করে ৩ কাঠার প্লট ৫ কাঠা করে বরাদ্দ নিয়েছেন। দ্বিতীয় মামলার অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে তার মা জাকিয়া আমজাদের নামে বিধি লঙ্ঘন করে তিন কাঠার পরিবর্তে পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। তৃতীয় মামলায় দেখা যায়, স্ত্রী প্রফেসর ড. আয়েশা বেগমের নামে সাত দশমিক পাঁচ কাঠা প্লটের পরিবর্তে রাজউকের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে ১২ কাঠা আট ছটাক প্লট বরাদ্দ করিয়ে নেন সচিব শওকত। এসব প্লট উত্তরা এবং পূর্বাচল প্রকল্পের আওতাধীন। ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ওই তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

তদবির করে বাঁচার চেষ্টা : মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে দুর্নীত ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান বর্তমান সরকারের মেয়াদে আর মন্ত্রিত্ব পাননি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও ছিল তার প্রতিকূলে। নির্বাচনী হলফনামায়ও তার সম্পদ বেড়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ হয়। যার ফলে মন্ত্রিত্ব হারানোর পর বর্তমান সরকারের শুরুর দিকেই মান্নান খানের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে নামে দুদক। তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন দুদকের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই অবস্থায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান নিজেকে দুদকের হাত থেকে বাঁচাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে তিনি তদবির করছেন নিজের দুর্নীতি ও অনিয়ম আড়াল করতে। শুধু প্রতিমন্ত্রীই নয়, তার দুর্নীতি ও অনিয়মের দুই সেনাপতি সাবেক সচিব খন্দকার শওকত হোসেন ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নূরুল হুদাও একই পথ অনুসরণ করেছেন নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করতে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে তারা নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা যত চেষ্টাই করেন না কেন, এবার আর তাদের শেষ রক্ষা নেই।

শেয়ার করুন