সোনালী ব্যাংকের প্রায় ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে ‘ব্যাংক অস্ট্রিয়া এজি’ নামক একটি বিদেশি ব্যাংকের কাছে। স্থানীয় মুদ্রায় পাওনা অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এই অর্থ পরিশোধে আপত্তি জানাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক চ্যানেলেও চলছে আলোচনা। তবে ফলাফল শূন্য। শেষে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দুটিকে আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে। আর বিষয়টি ব্যাংকিং-সংক্রান্ত হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে পাওনা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে অস্ট্রিয়ার সিজিএল হ্যান্ডেলগ্যাসেলসাফট এম বি এইচ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ১৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য বিনিময় চুক্তি করে। বিশেষ এই বাণিজ্য চুক্তিটি কার্যকর করা এবং এর অধীনে আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য টিসিবির পক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক (প্রধান কার্যালয়) এবং সিজিএল-এর পক্ষে ব্যাংক অস্ট্রিয়া এজিকে মনোনীত করা হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যাংক অস্ট্রিয়া এজির কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে যায় সোনালী ব্যাংকের। এদিকে টিসিবির সঙ্গে অস্ট্রিয়ার কোম্পানিটির করা বিশেষ বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ বর্ধিত করা হলেও ওই চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বকেয়া ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ নবায়ন করা হয়নি। এই সুযোগে ব্যাংক অস্ট্রিয়া সোনালী ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, ১৯৮৮ সাল থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি করার পর ব্যাংক অস্ট্রিয়ার কাছে ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ যে পাওনা তৈরি হয়, সেটি গত ডিসেম্বর শেষে সুদ-আসলে বেড়ে ২৫ দশমিক ৬৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।
বিদেশি মুদ্রায় বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আদায় করা গেলে এটি ব্যাংকের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, ব্যাংক অস্ট্রিয়ার কাছে পাওনা অর্থ আদায়ের জন্য সোনালী ব্যাংকের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলেও তারা সময়মতো দিতে পারেনি। এ সংক্রান্ত ফাইল খুঁজে পেতে বিলম্ব হওয়ায় তথ্য প্রদানে সময় লেগেছে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এদিকে ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়ার পর দীর্ঘদিনের এই বকেয়া আদায়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও পাওনা পরিশোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তাগাদা দিয়ে নোটিস পাঠানো হয় অস্ট্রিয়ায়। শেষে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।