ব্যাংকে তারল্য ৯৪০০০ কোটি টাকা

0
133
Print Friendly, PDF & Email

ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়ছে। বর্তমানে ৯৪ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রকৃত অলস ২৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক অলস অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করছে। এতে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি। সে ঝুঁকি ঠেকাতে প্রায় প্রতিদিনই রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের শুরু থেকে ১৫ই মে পর্যন্ত ৯১ কার্যদিবসের মধ্যে ৭৩ দিন নিলামের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতিদিনই বাজার থেকে গড়ে ২ হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছে। অথচ কিছু দিন আগেও টাকার টানাটানি ছিল। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো নিয়মিত ধার নিতো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, বিনিয়োগ নেই। সম্ভাবনাও নেই। দিনের পর দিন বাড়ছে অলস টাকার বোঝা। ব্যাংকাররা পড়ছে বিপদে। তাই কেউ কেউ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। যা দীর্ঘমেয়াদে খুবই ক্ষতিকর। এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। বাড়ছে ঝুঁকি। জানা গেছে, প্রচুর বিনিয়োগ চাহিদায় ২০০৯-২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে ছিল টাকার টানাটানি। ২০১২ সালে ব্যাংক সাড়ে ১৪% পর্যন্ত সুদে আমানত নিতে শুরু করে। বেশি সুদে আমানত নিয়েও চাহিদা না মেটায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপো ও বিশেষ তারল্য সহায়তার মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই ৮-১০ হাজার কোটি টাকা ধার নিত। আমানত সংগ্রহে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে মেয়াদি আমানতে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২% সুদহার নির্ধারণ করে। তবে ২০১৩ সাল থেকে সে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ব্যাংকগুলোর কাছে পড়ে থাকা অলস অর্থ কাজে লাগাতে সরকারি বিল, বন্ডের মতো স্বল্প সুদের বিনিয়োগে তাদের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে মাত্র ৫.২৫% সুদে রিভার্স রেপোতে টাকা রাখা হচ্ছে। বিনিয়োগে মন্দার পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের-ই শিল্পঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনেও। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩০,৮৪৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১,১৬৬ কোটি টাকা বা ৩.৬৪% কম। মেয়াদি ঋণ নিয়ে সাধারণভাবে উদ্যোক্তারা নতুন শিল্প স্থাপন করেন। তবে বিনিয়োগ না হওয়ায় মেয়াদি ঋণ কমছে। আর মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি খাতে সামগ্রিকভাবে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১১.৪৬%। আগের বছরের একই সময় শেষে যা ছিল ১২.৭২%। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণত মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকলে রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তোলা হয়। তবে সামপ্রতিক সময়ে টাকা তোলা হচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ ঠেকাতে। কারণ আস্থাহীনতায় বিনিয়োগ না হওয়ায় ব্যাংকে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য পড়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো নিজেদের মুনাফার জন্য অনুৎপাদনশীল বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতি কৌশল অর্থনীতিতে ইতিবাচক কোন প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না বরং বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে টাকার ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। আর এ জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি কৌশলে ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালে ২৮টি নিলামের বিপরীতে বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ৫,৫৪১ কোটি টাকা তুলেছিল। ২০১৩ সালে ৯০ কার্যদিবসে তোলা হয়েছে ৫৬,৩৩৩ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ১৫ই মে পর্যন্ত ৯১ কার্যদিবসের মধ্যে ৭৩ দিনই টাকা রেখেছে কোন না কোন ব্যাংক। এ সময়ে মোট ৮২,২৬১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন