মাফিয়াদের হাতে চলে যাচ্ছে দেশ? মাফিয়াতন্ত্র সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে? আমি নিরাপদ নই, আপনি কি নিরাপদ? দেশজুড়ে গুম-খুন মিলিয়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে মানুষ। মৃত্যু উপত্যকার ওপর দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে মানুষ কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এ পরিস্থিতিতে মানুষের ওপর মানুষের আস্থা, বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে। একদল করেও সতীর্থের ওপর আস্থা নেই রাজনৈতিক কর্মীদের। এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দেখছে একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনা। নারায়ণগঞ্জে দিনদুপুরে সাতজন মানুষ অপহরণ হয়ে গেল। তাদের জীবিত উদ্ধার করা গেল না। শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশের স্রোত, স্বজনের মাতম সারা দেশ কাঁপিয়ে দিল। শাসকদের ওপরমহল থেকে তদন্তের আগেই বলে দেওয়া হলো, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরকারবিরোধী প্রধান দল বিএনপি জড়িত। বিভেদের রাজনীতিতে যারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ তাদের কেউ কেউ আঙুল তুললেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি শামীম ওসমান এমপির দিকে।
কেউ আঙুল তুললেন ব্যালট বিপ্লবে অভিষিক্ত শামীম ওসমানবিরোধী সাহসী নেত্রী মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর দিকে। নিহতদের পরিবার-পরিজন প্রথম থেকেই বিএনপি বা কোনো জনপ্রতিনিধি নয়, অভিযোগের তীর ছুড়ল র্যাবের দিকে। যে র্যাব দেশকে সন্ত্রাসী গডফাদার আর চাঁদাবাজির হাত থেকে মুক্ত করে এনেছিল, তাদের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হলো। কোনো কোনো কর্মকর্তার চাকরি গেল, তারা গ্রেফতার হলেন। কেউ বললেন, র্যাব বিলুপ্ত করে দিতে। র্যাব মানুষের আস্থা হারিয়েছে। কেউ বলছেন, মুষ্টিমেয় লোকের জন্য একটি বাহিনী বিলুপ্ত করা যায় না। সংশোধন ও পুনর্গঠন জরুরি। শেষের পক্ষের মতামতই গ্রহণযোগ্য। নিহতদের পরিবারের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া খুলনার কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের মতো ভয়ঙ্কর মূর্তি নিয়ে আবির্ভূত হলেন একজন কাউন্সিলর, নাম তার নূর হোসেন। চার দিন তিনি নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। পুলিশ তাকে স্পর্শ করতে যায়নি। দেশবাসী অবাক হয়ে দেখল, মাফিয়া ডনের মতো স্থানীয় প্রশাসন তার হাতে ১৮ খানি অস্ত্রের লাইসেন্স তুলে দিয়েছিল। বিস্ময়কর! অবিশ্বাস্য! নূর হোসেন পালিয়ে গেছেন। র্যাব কর্মকর্তারা জেলহাজতে। নিহতদের পরিবারে থামেনি কান্নার শব্দ। দেশজুড়ে ছড়িয়েছে মাফিয়াতন্ত্রের আতঙ্ক।
নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের আগে পরিবেশবাদী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অপহরণ হলেন, আবার ফিরেও এলেন। তাকে কারা, কেন অপহরণ করেছিল দেশবাসী এখনো জানতে পারেনি। রহস্য ঘনীভূতই রয়ে গেল। একই সময়ে নারায়ণগঞ্জের আরেকজন মানুষকে অপহরণের পর সাভার থেকে মধ্যরাতে উদ্ধার করা হলো। অপহরণের কাহিনী অজানাই থেকে গেল। অপহরণ হবে, গুম হবে, খুন হবে, এ সম্পর্কিত সত্য মানুষ জানতে পারবে না। স্বজন হারানোর ক্রন্দন নিয়ে পথ হাঁটবে, বিচার হবে না। এ কোন বাংলাদেশ! আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মৌলবাদীদের হামলায় আহত হয়ে জীবন বিসর্জন দেওয়া সময়ের দুঃসাহসী প্রতিভাবান প্রথাবিরোধী লেখক-কবি হুমায়ুন আজাদকে এখানে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা যায় এই জন্য যে, এক নষ্ট রাজনীতির কবলে পড়া দেশ নিয়ে একটি বিবেক খোঁচানো বই লিখে গেছেন তিনি। সে বইয়ের নাম ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?’।
একসময়ের সন্ত্রাসের জনপদ ফেনী এখন আবার গা ছমছম করে শিউরে ওঠার মতো কাহিনী জন্ম দিয়েছে। লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে গেছে নারায়ণগঞ্জের কান্না থামতে না থামতেই। ফুলগাজী উপজেলার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক নির্বাচিত চেয়ারম্যান একরামুল হক দিনদুপুরে রাস্তার মধ্যে ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসীর আক্রমণের মুখে পড়লেন। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা হলো। তাও আক্রোশ মেটেনি। খুনিরা সংঘবদ্ধভাবে তাকে ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করল। তাও মনে শান্তি আসেনি। এক পর্যায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে কঙ্কাল বানাল। মরে কঙ্কাল না হওয়া পর্যন্ত হত্যাকারীরা ওই জায়গা ত্যাগ করল না। এলাকাবাসীর প্রশ্ন- খুনিদের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দূরত্ব কতটা ছিল? এমন লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উম্মোচিত হবে কি না, খুনির বিচার নিশ্চিত হবে কি না নিহতের পরিবারের হতভাগ্য সদস্যসহ কেউ জানে না। সন্দেহভাজন ২৩ জনের আটক হওয়ার খবর মানুষের মনে স্বস্তি দিতে পারেনি। লক্ষ্মীপুরে দুজন সরকারদলীয় নেতার লাশ উদ্ধার হয়েছে। এই নারায়ণগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যারা জীবন দিয়েছেন তারা সবাই সরকারি দল আওয়ামী লীগের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যে শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিরাপদ নন, সেখানে সুশাসন শব্দটি তিরোহিত হতে চলেছে। সেখানে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা শেষ হতে চলেছে। গতকাল সকালে নিউমার্কেটের ভিতর একজনের লাশ পাওয়া গেছে। বনানী ফ্লাইওভারে লাশ উদ্ধার হয়েছে এর আগে। কত লাশ নদীতে ভেসেছে, কত মানুষ গুম হয়েছে! কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্র মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হতে চলেছে। মাফিয়াদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে দেশ। বিএনপি জমানায় দিনদুপুরে প্রকাশ্য জনসভায় বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা ঘটিয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। গোটা বাংলাদেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছিল। সেদিনের শাসকরা দায়িত্বহীনের মতো আওয়ামী লীগের কাঁধেই দোষ চাপাতে চেয়েছে। মূর্খরা উল্লাস করেছে- সেদিনের বিরোধী দলের নেত্রী ভ্যানিটি ব্যাগে করে নাকি গ্রেনেড এনেছিলেন। লাজলজ্জাহীন নেতৃত্ব দেখেছে মানুষ সেদিন শাসক শিবিরে। শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মতো দেশবরেণ্য মানুষকে বোমা হামলায় হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে খুলনার আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইমাম, নাটোরের মমতাজ উদ্দিন, গাজীপুরের আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ অনেককে। সেদিন বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও প্রতিহিংসার অভিযোগের আঙুল উঠেছে। বিএনপিকে সেদিনের ব্যর্থতার চড়া মাসুল গুনতে হয়েছে। তাদের মাসুল গোনার দিন এখনো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে কেউ জানে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আজকের বাংলাদেশে যেভাবে গুম, খুন আর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে তার দায় সরকার পক্ষ বিএনপির কাঁধে চাপালেই মানুষ বিশ্বাস করবে না। এমনকি প্রতিটি ঘটনার রহস্য উম্মোচন করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা না গেলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকারের ইমেজ সংকট বাড়বে। বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেশের মানুষকে প্রাণহীন রেখে গণতন্ত্র, সুশাসন কখনোই বিকশিত হতে পারে না। সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনমত উপেক্ষা করে রাষ্ট্র পরিচালনা কখনোই শুভবার্তা বয়ে আনে না। গোটা দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভয় আর আতঙ্ক গ্রাস করছে সর্বত্র। মানুষের বুকের ভিতরে অসন্তোষের, ক্ষোভের, তুষের অনল। সরকার অনুভব করতে পারছে কি না কেউ জানে না। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন, জেলায় জেলায় সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও লালন, সিভিল প্রশাসন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়করণের যে মহোৎসব শুরু হয়েছিল বিএনপি জমানা থেকে আওয়ামী লীগ জোট সরকার তা অব্যাহত রেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিল। আর তার কুফল বিএনপি জমানায়ও ভোগ করেছে মানুষ। এখনো ভোগ করছে মানুষ। বিএনপিকে খেসারত দিতে হয়েছে। তেমন খেসারত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগও এক দফা দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর পর্যায়ে দেবে না তার গ্যারান্টি নেই। দেশের সামাজিক সুস্থতাকে কুরে কুরে খাচ্ছে আরেক অভিশাপ। তার নাম মাদকাসক্তি। ইয়াবা-ফেনসিডিলের মতো সর্বনাশা মাদক দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি যুবসমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধেও কোনো পদক্ষেপ নেই। মাদকের কুফলে দেশের ভবিষ্যৎ মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ছে। যুবসমাজকে নিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাস ও অপরাধের গহিন ও গভীর অন্ধকারে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামত ও স্বার্থ রক্ষা করে রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে হোঁচট খেতে হবেই। আওয়ামী লীগকে সদ্যসমাপ্ত ভারতের রাজনীতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার এখনই সময়। কংগ্রেস ব্যাপক উন্নয়ন দিয়েছিল। কংগ্রেস অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৯-এ নিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীদের দুর্নীতি সামাল দিতে পারেনি। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক দেশ বলে আন্না হাজারেরা এসবের প্রতিবাদে লাখো জনতার ঢল নামিয়েছেন। এখানে গুম, খুন নিয়ে বিএনপিকে প্রতিবাদ সভাও করতে দেওয়া হয়নি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যরাতের টকশোর ‘টকার’ তৈরি করে আর যাই হোক মানুষের মনকে দমিয়ে রাখা যায় না। মানুষ যা বলছে তা সরকার শুনতে পাচ্ছে না। খলিফা উমর (রা.)-এর মতো ছদ্মবেশে রাতের বেলা গোপনে লোকালয়ে গেলে শুনতে পেতেন মানুষের চোখে মুখে কতটা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর ভয়।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনী সংকট কাটিয়ে সরকারের কেউ কেউ দাম্ভিকতার চূড়ায় উঠেছেন। মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রী ক্যারিশমা দেখালেও তার কাছে সত্য তুলে ধরতে চারপাশের লোকজন ব্যর্থ হচ্ছেন। শুরুতে ভালোই চলছিল। হঠাৎ সন্ত্রাস, গুম, হত্যা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। পর্যবেক্ষক মহল বলছে, সন্ত্রাস, গুম, খুন কঠোর হস্তে দমন করতে হলে সংবিধান, আইন ও বিধিবিধানের ঊর্ধ্বে কাউকে উঠতে দেওয়া যাবে না। সিভিল প্রশাসন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়করণের বৃত্তের বাইরে এনে জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে ঢেলে সাজাতে হবে। র্যাবে সংস্কার ও তার পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। পেশাদারিত্বের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো এ বাহিনীর কর্তাদের র্যাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা আর সম্পৃক্ত রাখা উচিত কি না ভাবার সময় এখন। র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেশাদারিত্বের ওপর দাঁড় করানোর জন্য, স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত সংস্কার এখন সময়ের দাবি। শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ থেকে রনি আর রনি থেকে ইব্রাহিমকে কেন গোপনে ছেড়ে দেওয়া হলো সে প্রশ্ন মুড়ি-মুড়কির মতো বাজছে মানুষের মুখে মুখে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে জেলায় জেলায় এখন যে কোন্দল, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, শক্তি প্রদর্শন, লুটপাটের রাজনীতির অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে দলকে তা থেকে বের করে আনা জরুরি। সংসদে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মন খুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মানুষের প্রত্যাশার জায়গা তৈরি করে আস্থা পুনরুদ্ধার দ্রুত প্রয়োজন। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার পাশাপাশি দেশব্যাপী বৈধ অস্ত্র জমা নিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী ধরার জন্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামানোর মতো চিন্তা-ভাবনার সময় এখন দোরগোড়ায়। সংসদের বাইরেও সরকারকে দলীয় আজ্ঞাবহ নয়, স্বাধীনচেতা সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে, পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে মতামত জানতে হবে। এ সংকট কারও একার নয়। এ সংকট দেশের। সংকট কাটানোর পথ বের করতে হবে। শুধু ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নেতৃত্বই নয়, জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আলোচনার দরজা খুলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই’- এ কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার বলেছেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বলেছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদসহ রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন। মন থেকে বলে থাকলে সব দলকেই সন্ত্রাসীদের দূরে ঠেলে দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ দ্রুত না নিলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন বিচারপতি সাত্তারের শাসনামল দুর্নীতি আর সন্ত্রাস, কোন্দলে ডুবিয়েছিল। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই এই গাঢ় কালো অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি হয়ে বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে বর্তমান সরকারকে মানুষের জন্য আলোর পথ বের করতে হবে। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই দেশ, অনেক জীবনের বিনিময়ে আমাদের গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের জান-মালের হেফাজত দিতে হবে। গণতন্ত্রে নানা মত, বহু পথই শেষ কথা। সবার কথাই শুনতে হবে। ভালো কথা মানতে হবে। তাহলেই দেশ পাবে গণতন্ত্র, গণতন্ত্র পাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। আর জনগণ পাবে গণতন্ত্রের আসল সুফল।