আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় দিতে চায় বিএনপি। এজন্য আপাতত কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে, যতটা সম্ভব সহিংসতা এড়িয়ে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে তারা। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর বলেন, সামনে রোজা, বর্ষাকাল, এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা শুরু হবে। তাই শিগগিরই বড় কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে দলকে সুসংগঠিত করার আগে আন্দোলনে নামা ঠিক হবে না। তাই আরো একটু সময় লাগবে। জনগণ আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে থাকলেও ডিসেম্বরের আগে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসছে না তবে জানুয়ারি থেকে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। এদিকে বিএনপির চেয়ারপাসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক কর্মকর্তা জানান, বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী সাত মাস যতটা সম্ভব সহিংসতা এড়িয়ে আন্দোলন করতে হবে। বাধ্য না হলে এ সময়ের মধ্যে হরতাল-অবরোধ দেয়া যাবে না। দল গুছানোর মধ্য দিয়ে সরকারকে এই সাত মাস সংলাপের পরিবেশ তৈরির জন্য সময় দিতে চায় তারা। এ সময়ের মধ্যে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলও করবে তারা। একই সঙ্গে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে যতটা সম্ভব নেতৃত্বে পরিবর্তন আনবে। উদ্দেশ্য সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য দলকে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনে চরম অনিশ্চয়তায় দেশ ও জনগণ। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারকে খুব বেশি দিন সময় দেয়া হবে না। দল গোছানোর কাজ শেষ হলেই চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করাটা তাদের মূল টার্গেট। নির্বাচনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, ইমেজ বৃদ্ধি ও কূটনীতিকদের সমর্থন আদায়ে এ কৌশল নেয়া হয়েছে। সে আঙ্গিকেই প্রণয়ন করা হচ্ছে কৌশলী কর্মসূচি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব দিকের ব্যর্থতা তুলে ধরে সরকারকে জনরোষে ফেলতেই বিএনপির বর্তমান পরিকল্পনা। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুধু দেশের অভ্যন্তরের আন্দোলন নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও সরকারকে চাপে রাখতে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে দাবি জোরালো করতে বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন দেশ সফর করবেন। এর মধ্যে প্রথম টার্গেট ভারত। নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর সুবিধামতো সময়ে ভারত সফর করতে পারেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে তিনি (খালেদা জিয়া) ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে দলের সমর্থক কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এবং নেতাদের সঙ্গে আলাপও করেছেন। কারণ বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, শুধু আন্দোলন করে বর্তমান সরকারকে সরানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আর ভারতের নতুন সরকার যদি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের মতো আওয়ামী লীগকে কঠোরভাবে সমর্থন না দেয় তাহলে আর্ন্তজাতিক চাপ অনেকটা কাজে লাগবে। জানা গেছে, ডিসেম্বরের আগে সরকারবিরোধী বড় কোনো কর্মসূচি না দিয়ে দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, অনশনের মতো ছোট ছোট কর্মসূচি দেয়া হবে। আর ডিসেম্বরের আগে খালেদা জিয়াসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা একাধিক জেলা সফর করবেন। এসব শেষ করে আগামী বছরের প্রথমে ‘পরিকল্পিত’ আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধরন কী হতে পারে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি একটি শান্তিপ্রিয় দল, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবেন। তাদের আন্দোলন থাকবে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানাবেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে কীভাবে নির্বাচন করা যায়, তা হবে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। এই কারণে গত বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে নাগরিক সমাবেশ করতে না দিয়ে সরকার বড় ধরনের উস্কানি দিলেও তারা হরতালের মতো কোনো কর্মসূচি দেননি। উল্লেখ্য এর আগে সারাদেশে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি। কিন্তু ১৯ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দ্রুত সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের জন্য চাপ থাকলেও কৌশলে তা এড়িয়ে যেতে চায় বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ের পর ১৯ দলের পক্ষ থেকে হরতাল ঘোষণার অনুরোধ জানান জামায়াতের নেতারা। তবে এক্ষেত্রে এখনো সাড়া দেননি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এতে কিছুটা ক্ষুব্ধ হন জামায়াত নেতারা। –