নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা থাই সেনাপ্রধানের

0
105
Print Friendly, PDF & Email

ব্যাংকক, ২৩ মে- থাইল্যান্ডের সেনাপ্রধান জেনারেল প্রেয়াথ চান-ওচা নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। সরকার প্রধানের এই পদে স্থায়ীভাবে কাউকে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্বপালন করবেন বলে জানিয়েছেন। কিছু আইন রয়েছে যা ‘প্রধানমন্ত্রীর অধীনে’ প্রয়োগ হয়।প্রেয়াথ চান-ওচা এবং তার নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা এই সময়ে সেই দায়িত্ব সমুন্নত রাখবেন। জাতীয় শান্তি ও শৃঙ্খলা বহাল রাখা সংক্রান্ত কাউন্সিলের দেয়া (এনপিওএমসি) বিবৃতি উদ্ধৃত করে দ্য ব্যাংকক পোস্ট এই তথ্য জানিয়েছে। প্রেয়াথ বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘোষণা দেন। তিনি এনপিওএমসি’র প্রধান। এনপিওএমসি জানিয়েছে, প্রশাসনিক কাজের জন্য তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এরআগে দেশটির সেনাপ্রধান সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর কারফিউ জারি করেন। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করাসহ নিয়মিত টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলোও বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরকে আটক করা হয়েছে এবং অন্যান্যদেরকে সামরিক বাহিনীর কাছে হাজির হতে বলা হয়েছে। এনপিওএমসি জানিয়েছে, দেশটির সংবিধান সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে এবং সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সিনেট ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবে। এছাড়া আরো নির্দেশ দেয়া হয়, শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি রেডিও ও টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ থাকবে। অবশ্য চাইলে তারা শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবেশন করতে পারবে। তবে সংবাদপত্র, ইন্টারনেট, ফোন, মোবাইলসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এনপিওএমসি নির্দেশ দিয়েছে, সংবাদপত্রসহ সব ধরণের গণযোগাযোগ মাধ্যমকে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, বিচারক কিংবা স্বাধীন সংস্থাগুলোর সদস্যদের কোন সাক্ষাৎ ছাপা বা প্রচার করা যাবে না। কারণে এতে করে জনগণের মধ্যে সহিংসতা ও বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। সকল সরকারি সংস্থা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। আর অস্ত্রবহন সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ১৯৩২ সাল থেকে দেশটিতে রাজতন্ত্রের পতনের পর এ নিয়ে ১২ বার সেনা অভ্যুত্থান হল। দেশে সামরিক আইন জারির দু’দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার এক টিভি সম্প্রচারে প্রেয়াথ জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক সংস্কার কাজের জন্য সেনাবাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। থাইল্যান্ডে ৬ মাসের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সমাধান খুঁজতে প্রতিদ্বন্দ্বী সব দলের সঙ্গে বৈঠক করার পর ক্ষমতা দখলের এ ঘোষণা দেন প্রেয়াথ। টিভি ঘোষণায় প্রেয়াথ বলেন, “পরিস্থিতি খুব শিগগিরই স্বাভাবিক করা, সমাজে শান্তি ফেরানো… এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর কাঠামোগত সংস্কার কাজ করার জন্য সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা নেয়া প্রয়োজন”। ব্যাংককে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভাস্থলগুলো সিল করে দিয়ে নেতাদের সরিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। কয়েকমাসের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং মঙ্গলবার সামরিক আইন জারির পর সেনাবাহিনী এ পদক্ষেপ নেয়। সেনারা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের নেতা সুদেপ থাকসুবানকে বৈঠক থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সেনাপ্রধান টিভিতে ওই ঘোষণা দেন। বিরোধী নেতা থাকসুবান এবং সরকারপন্থি বিক্ষোভের নেতা জাতুপর্ন প্রমপানসহ আরো কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা আটক হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত থাই প্রধানমন্ত্রী নিউয়াত্তামরং বুনসঙপাইসানের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনিসহ তার মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদেরকে সামরিক বাহিনীর কাছে হাজির হতে বলা হয়েছে। থাই সাংবিধানিক আদালত এ মাসের শুরুর দিকে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ইংলাকের পদত্যাগের পরও ক্ষমতায় থাকা তার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলে আসছিল। বুধবার ইংলাকের সমর্থক ও বিক্ষোভকারী দুপক্ষকেই সমঝোতার জন্য আলোচনায় ডাকেন প্রেয়াথ। কিন্তু আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়। সেনাবাহিনী দুপক্ষের বিক্ষোভকারীদেরকে রাস্তায় অবস্থান করতে দিলেও সংঘর্ষ এড়াতে মিছিল করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সহিংস বিক্ষোভ এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেই সেনাবাহিনী মঙ্গলবার জননিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলে সামরিক আইন জারি করে। কিন্তু এটি কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয় বলেও দাবি করে তারা। –

শেয়ার করুন