আফগানিস্তানে কনস্যুলেট ভবনে হামলার পেছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আএসআইয়ের হাত রয়েছে ভারতের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সন্দেহ করছে।
জঙ্গি গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দিয়ে আইএসআই এ হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্কের জড়িত- এমন ধারণার পিছনে বিশ্বাসযোগ্য কারণ আছে। আইএসআইয়ের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আগামী ২৬ মে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করতেই এই হামলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
বিজেপি নেতা মোদির শপথ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরীফ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শুক্রবার ভোরে হেরাত শহরে ভারী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ভারতের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালায় চার ব্যক্তি, যারা সবাই আফগান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। হামলায় পাঁচ নিরাপত্তাকর্মী আহত হলেও বড় ধরনের কোনো রক্তক্ষয় হয়নি।
কারজাই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানালেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
আর শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
নওয়াজ শরীফসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে মোদির আলাদা বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে। নওয়াজের সঙ্গে মোদির বৈঠক বানচাল করতে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর চলমান তৎপরতার অংশ হিসেবে হেরাতে হামলা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) এর এক কর্মকর্তা বলেন, “পরিকল্পনাটি খুবই সাধারণ। কট্টর হিসেবে পরিচিত নতুন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ভারতকে উস্কানি দিতেই সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে, যাতে করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা নিয়ে নওয়াজ শরীফ এগোতে না পারেন।”
দেশটির প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএ-এর সাবেক উপ প্রধান মেজর জেনারেল গগনজিৎ সিং মনে করেন, সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও এর কর্মকর্তাদের আক্রমণাত্মক বিবৃতির মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নওয়াজ শরীফের কোনো চেষ্টা তারা সফল হতে দেবেন না।
তিনি বলেন, “দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের পক্ষে যেসব সাংবাদিক ও টেলিভিশনের সমর্থন রয়েছে, তাদের ওপর হামলা করছে আইএসআই।”
সম্পর্ক উন্নয়নে সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বানচালে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ‘নিয়ন্ত্রকরা’ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বৃহস্পতিবারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপ-উপদেষ্টা নেহচাল সান্ধু।
হেরাতে হামলার একদিন আগে বিএসএফের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নস্যাৎ করতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কয়েক পৃষ্ঠপোষক যে চেষ্টা করছে সে ব্যাপারে আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য আছে।”
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী দলগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সাবেক প্রধান সান্ধুর।
পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ নরেন্দ্র মোদির উপর হামলা চালাতে পারে বলে প্রতিবেদনও দিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী উগ্র এ সংগঠনের আক্রমাণের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে মোদির নাম।